লজ্জায় কোনো দিন মেসির জার্সি চাইতে পারেননি যে গোলকিপার

সাবেক গোলকিপার রবার্তো হিমেনেজইনস্টাগ্রাম

মাঠে লিওনেল মেসির মুখোমুখি হতে কেমন লাগে?

উত্তরে বলা যায়, যে বা যিনি মেসির মুখোমুখি হচ্ছেন, তাঁর ভূমিকার ওপর নির্ভর করে। রেফারি কিংবা লাইন্সম্যান হলে এক হিসাব। প্রতিপক্ষ হলে অন্য হিসাব।

আবার সেই প্রতিপক্ষের মধ্যে ডিফেন্ডার ও গোলকিপারদের হিসাব আরও অন্য রকম। ডিফেন্ডারদের তো সারাক্ষণই তটস্থ থাকতে হয়। আর গোলকিপার? মেসির ক্যারিয়ারে ৮৫০ গোলসংখ্যা দেখেই বলা যায়, তিন কাঠির নিচে দাঁড়ানো লোকদের চেয়ে অসহায় আর কেউ নেই!

রবার্তো হিমেনেজ তেমনই একজন ছিলেন। গোলপোস্ট থেকে সরে দাঁড়িয়ে এখন অবসরে ৩৮ বছর বয়সী এই স্প্যানিশ; কিন্তু লা লিগায় কাটানো সেই দিনগুলো তো স্মরণে আছে। ইউটিউব চ্যানেল ‘লস ফুলানোস’–এ সেসব দিন মনে করে অদ্ভুত এক কথা বলেছেন হিমেনেজ।

মেসি ও হিমেনেজ যখন লা লিগায় খেলতেন
এএফপি

হিমেনেজ তাঁর লা লিগা ক্যারিয়ারে অনেক তারকা খেলোয়াড়েরই জার্সি সংগ্রহে রেখেছেন; কিন্তু মেসির কাছে গিয়ে তাঁর জার্সি কখনো চাইতে পারেননি। কারণ, একধরনের লজ্জাবোধ। মেসির সামনে ম্যাচে হিমেনেজ সব সময় এতটাই নাচার অবস্থায় পড়েছেন যে ম্যাচ শেষে আর্জেন্টাইন কিংবদন্তির কাছে গিয়ে যে তাঁর জার্সিটা চাইবেন, সেই সাহস হয়নি।

তার (মেসির) কাছে গিয়ে জার্সি চাওয়ার সাহস কখনো হয়নি। তার কারণে আমি ভেতরে ভেতরে লজ্জায় কুঁকড়ে যেতাম।
রবার্তো হিমেনেজ, সাবেক গোলকিপার

স্প্যানিশ ফুটবলে হিমেনেজ নয়টি ক্লাবে খেললেও তাঁর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আতলেতিকো মাদ্রিদ, এস্পানিওল ও আলাভেস। এর বাইরে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ওয়েস্ট হামে কিছুদিন খেলেছেন।

লা লিগা ক্যারিয়ারে কয়েকবার মেসির মুখোমুখি হয়েছেন হিমেনেজ। ২০২১ সালে লা লিগা ছেড়ে যাওয়া ইন্টার মায়ামি তারকা মেসি হিমেনেজের বিপক্ষে ১৩ গোল করেছেন। চারবার জোড়া গোলের পাশাপাশি আছে একটি হ্যাটট্রিকও। স্বাভাবিকভাবেই মেসির বিপক্ষে পোস্টে দাঁড়িয়ে রীতিমতো পর্যুদস্তই হতে হয়েছে তাঁকে। সে কারণেই বার্সেলোনা কিংবদন্তির জার্সি চাওয়া হয়নি।

ইউটিউব চ্যানেলে লস ফুলানোসে হিমেনেজ এ নিয়ে বলেছেন, ‘মেসি আমার জন্য এক কথায় দুঃস্বপ্ন। মুখোমুখি হওয়া অনেক গ্রেট খেলোয়াড়ের জার্সি আমার কাছে আছে; কিন্তু মেসিরটা কখনো চাইতে পারিনি। এখন অনুশোচনা হয়। কারণ, সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর বলছি আমি তার বিপক্ষে খেলেছি। সে আমাকে একদম পাগল বানিয়ে ফেলত। এ কথা বলতে পারছি কারণ, সে যে মাঠে খেলেছে, সেখানে আমিও ছিলাম। কিন্তু কখনো জার্সি চাওয়া হয়নি। কারণ, সব সময় আমাকে নিয়ে খেলেছে সে।’

স্পেনের ৯টি ক্লাবের হয়ে খেলেছেন রবার্তো হিমেনেজ
ইনস্টাগ্রাম

হিমেনেজ এরপর বলেছেন, ‘তার (মেসির) কাছে গিয়ে তার জার্সি চাওয়ার সাহস কখনো হয়নি। তার কারণে আমি ভেতরে ভেতরে লজ্জায় কুঁকড়ে যেতাম। আমি জানি, সে আমার বিপক্ষে কত গোল করেছে। জানি না আপনাদের মনে আছে কি না, কয়েক বছর আগে একটি বিয়ার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান মেসি যেসব গোলকিপারের বিপক্ষে যতগুলো করে গোল করেছে, সেসব গোলকিপারকে ততগুলো বিয়ার সরবরাহ করেছিল। আমি পেয়েছিলাম ১৩টি।’

আরও পড়ুন

মেসির কাছে এতগুলো গোল হজম করেও একটি বিষয় ভেবে গর্ব অনুভব করেন হিমেনেজ, ‘আমার মনে হয়, আমি (মেসির কাছে) সবচেয়ে বেশি গোল হজম করা খেলোয়াড়দের একজন। এটা ভালো না খারাপ? খারাপ এই অর্থে যে সংখ্যাটা অনেক বড়। কিন্তু ভালো এই অর্থে যে বেশ কিছু ম্যাচ খেলতে হয়েছে। এক–দুই ম্যাচে এটা হয়নি। তাই আমি এটা বলতেই পারি, আমি অনেকবার বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়ের মুখোমুখি হয়েছি।’

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ওয়েস্ট হামেও খেলেছেন হিমেনেজ
ইনস্টাগ্রাম

তবে মেসির চেয়ে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মুখোমুখি হওয়াটা তুলনামূলক সহজ ছিল বলে জানিয়েছেন হিমেনেজ। রিয়াল মাদ্রিদ কিংবদন্তিকে নিয়ে তাঁর ভাষ্য, ‘ক্রিস্টিয়ানোর বিপক্ষে ভালো সময় কেটেছে। কারণ, মেসির ক্ষেত্রে সে গোল করার সময়ই সামনে আসত, এ ছাড়া (মাঠের) অন্য কোথাও থাকত। কিন্তু আমার মনে হয় না, মেসির বিপক্ষে আমি একটি সেভও করতে পেরেছি। যতবারই সে সামনে এসেছে ততবারই গোল করেছে। ক্রিস্টিয়ানো আলাদা। সে হয়তো বল নিয়ে অন্তত ২৫ বার হেড করবে। তাই সেভ করার সুযোগও আমি বেশি পেয়েছি। এ কারণে গোলকিপার ও স্ট্রাইকারের মধ্যে লড়াইটাও হয়ে উঠত মজার। সে অবশ্যই আমার বিপক্ষে গোল করেছে। তবে আমি তার বিপক্ষে ভালো সেভও করেছি।’