মেয়েদের ফুটবলে এ সময়ের সেরা খেলোয়াড় একজন স্প্যানিশ। নাম অ্যালেক্সিয়া পুতেয়াস। টানা দুবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী যে দলে খেলেন, সেই স্পেন তবু মেয়েদের বিশ্বকাপের সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়নদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিল না।
থাকবে কীভাবে! বিশ্বসেরা পুতেয়াস চোট থেকে পুরোপুরি সেরে ওঠেননি, পুরো ম্যাচ খেলার ফিটনেসই যে নেই তাঁর। এর ওপর এক বছর আগের সেই বিদ্রোহের ঘটনা। ‘মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে’ ১৫ খেলোয়াড় একযোগে সরে দাঁড়িয়েছিলেন জাতীয় দল থেকে। সরাসরি নাম উল্লেখ না করলেও কোচ হোর্হে ভিলদার প্রতি অনাস্থা হিসেবেই দেখা হয়েছে সেই বিদ্রোহকে। স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন পাশে ছিল কোচেরই। ফল, বিদ্রোহী ১৫ জনের মাত্র ৩ জনই জায়গা পেয়েছেন এবারের বিশ্বকাপ দলে। আরেকটি কারণও ছিল, এবার যে মাত্র তৃতীয় বিশ্বকাপ খেলছে স্পেনের মেয়েরা। বিশ্বকাপে অনভিজ্ঞ একটা দল আর কত দূরইবা যেতে পারে!
সেই স্পেন অনেক দূরই গিয়েছে। বিশ্বকাপ ফাইনাল থেকে এখন মাত্র এক ধাপ দূরে স্প্যানিশরা। আজ অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে বিশ্বকাপের অভিজ্ঞ দল সুইডেনের বিপক্ষে খেলবে স্পেন। স্পেন যেখানে মাত্র তৃতীয় বিশ্বকাপ খেলছে, সেখানে সুইডিশদের এটি পঞ্চম সেমিফাইনাল। তবে আগের চারবারের মধ্যে মাত্র একবারই শেষ চারের বাধা পেরিয়ে ফাইনাল খেলেছে। ২০ বছর আগের সেই ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরেছিল ২০২১ সালে টোকিও অলিম্পিকে রুপাজয়ী সুইডেন। ফিফা র্যাঙ্কিংয়েও এগিয়ে সুইডেন। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির পরেই অবস্থান দলটির। অন্যদিকে স্পেন আছে ছয়ে।
তাহলে কি স্পেন ভয় পাচ্ছে, পেটে প্রজাপতির নাচন টের পাচ্ছে?
অন্য কোনো দল হলে কী বলত কে জানে, তবে স্প্যানিশরা বলে দিয়েছে তাঁরা একটু ভয়ই পাচ্ছে। দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা ফরোয়ার্ড হেন্নি হেরমোসো বলেছেন, ‘আমরা যদি নার্ভাস না হই, তবে বুঝতে হবে কোথাও কোনো গলদ আছে। পেটে প্রজাপতির নাচন তো টের পেতেই হবে আর থাকতে হবে তা জয় করার মতো ইচ্ছাশক্তি। ফাইনালে উঠব, এটা ভাবতেই তো গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। আমরা সেই অর্জনের খুব কাছে, তবে আমাদের আরেকটি ম্যাচ খেলার আছে। যত দূর জানি, আমাদের জন্য এটিও একটি ফাইনাল।’
২০১৫ বিশ্বকাপে অভিষেক হওয়া স্পেন ২০১৯ সালে নকআউট পর্বে উঠেছিল। দ্বিতীয় রাউন্ডে হেরে যায় সেবারের চ্যাম্পিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। সেই স্পেন এবারের বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১৫টি গোল করেছে। এই তথ্যে অবশ্য সুইডেনের খুব বেশি চিন্তিত হওয়ার কথা নয়। সেমিফাইনালে ওঠা চার দলের মধ্যে তারাই যে সবচেয়ে কম মাত্র দুটি গোল খেয়েছে। দ্বিতীয় রাউন্ডে বিশ্বকাপের সবচেয়ে সফল দল যুক্তরাষ্ট্রকে, কোয়ার্টার ফাইনালে টিকে থাকা সর্বশেষ সাবেক চ্যাম্পিয়ন জাপানকে বিদায় করেছে সুইডেন।
সেই সুইডেনের বিপক্ষে আজ স্পেনের সবচেয়ে বড় তারকা পুতেয়াস খেলবেন কি না, কে জানে। প্রথম পাঁচ ম্যাচে মাত্র ১৫৫ মিনিট খেলা পুতেয়াসকে আজ কী ভূমিকায় দেখা যাবে, তা নিয়ে সবাইকে ধোঁয়াশার মধ্যেই রেখেছে দলটির কোচ ভিলদা, ‘অ্যালেক্সিয়ার সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে আমরা খুবই খুশি। আমরা পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি। আর অ্যালেক্সিয়াও যেকোনো কিছুর জন্য তৈরি।’
পুতেয়াসের অভাব অবশ্য এখনো টের পায়নি স্পেন। আইতানা বোনমাতি, হেরমোসো ও আলবা মারিয়া রোদোন্দো ফেরার তিনটি করে গোল করেই বুঝতে দেননি সেটি।
ভাবতে হচ্ছে সুইডেনকেও। ফরোয়ার্ড সোফিয়া ইয়াকবসন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তবে সুইডেন কোচ পিটার গেরহার্ডসন দলের মূল ফরোয়ার্ডকে পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। তবে এবারের বিশ্বকাপে ইয়াকবসন নয়, সুইডেনের সর্বোচ্চ গোলদাতা সেন্টারব্যাক আমান্দা ইলেসটেট। ক্লাব ফুটবলে আর্সেনালে খেলা ইলেসটেট প্রথম পাঁচ ম্যাচে গোল করেছেন ৪টি। জাপানের হিনাতা মিয়াজাওয়াই শুধু তাঁর চেয়ে বেশি গোল করেছেন।
প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠতে স্পেনের বড় চ্যালেঞ্জ তাহলে ইলেসটেটই! নিজেদের রক্ষণ ও প্রতিপক্ষের রক্ষণ—দুই জায়গাতেই যে হারাতে হবে তাঁকে।