বাফুফে ভবনে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের নতুন নামফলক
চারদিকে বিজয় দিবসের উৎসব। ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায় বাজছে দেশাত্মবোধক গান। যার ছোঁয়া লেগেছে মতিঝিলের বাফুফে ভবনেও।
এমন দিনে বাফুফে ভবনে উদ্বোধন করা হলো স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যদের নতুন নামফলক। বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা ৩৪ ফুটবলারসহ ৩৬ জন সদস্যের নামের পাশাপাশি দুটি নামফলক উদ্বোধন করেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, যিনি নিজেও স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের একজন সদস্য।
ঐতিহাসিক এই দলের অনেকেই এখন আর নেই। বেশ কয়েকজন ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে যোগাযোগহীন। দলের দুই অন্যতম সদস্য অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু, সহ–অধিনায়ক প্রতাপ শংকর হাজরাকে দেখা যায়নি অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানে কেন যাননি জানতে চাইলে প্রতাপ শংকর হাজরা প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথমত তারা (বাফুফে) আমাকে জানায়নি। জানালেও তারা জানে আমি এর প্রতিবাদ করব। কারণ, এই ৩৬ জনের কয়েকজন স্বাধীন বাংলা দলের সদস্য নয়।’
সালাউদ্দিনসহ অনুষ্ঠানে ছিলেন স্বাধীন বাংলা দলের সাত সদস্য। বাকি ছয়জন শেখ আশরাফ আলী, আব্দুস সাত্তার, সুভাষ চন্দ্র সাহা, আমিনুল ইসলাম সুরুজ, মোজাম্মেল হক ও ম্যানেজার তানভীর মাজহার তান্না।
বাফুফে ভবনের নিচে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যদের নামফলক প্রথম বসানো হয় ২০০৯ সালের ৪ জানুয়ারি। তাতে ৩৬ জনের নাম শুধু বাংলায় লেখা হয়। সে সময় তা উদ্বোধন করেছিলেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ। আগের তালিকা থেকে এবারের তালিকায় কোনো সংযোজন বা বিয়োজন নেই।
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল ১৯৭১ সালে ভারতের বিভিন্ন শহরে ঘুরে প্রীতি ম্যাচ খেলেছে। সেসব খেলা থেকে প্রাপ্ত অর্থ দেওয়া হয় মুক্তিযোদ্ধা তহবিলে। সেই অমর কীর্তির নায়কদের নতুন নামফলক উদ্বোধন করে কাজী সালাউদ্দিন ফিরে যান ১৯৭১ সালে।
৫২ বছর আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল অনেক অবদান রেখেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা তখনই সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি বাংলাদেশ আসছে। সবাই মিলে সফলও হয়েছি। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের পতাকা প্রথম তুলেছে স্বাধীন বাংলা দল। জাতীয় সংগীতও বিদেশে প্রথম গেয়েছে দলটি। আমরা তখনো স্বীকৃত দেশ নই। এ নিয়ে পরে অনেক সমস্যা হয়েছে। কৃষ্ণনগরে গিয়ে আমরা বলি, বাংলাদেশের পতাকা না তুললে আমরা খেলব না।’
তানভীর মাজহারও ডুব দেন অতীত স্মৃতিচারণায়। তিনি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তরুণ বয়সে ভারতের মতো বিশাল দেশে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলকে সংগঠিত করেন। ঘুরে ঘুরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রচার চালান। তানভীর মাজহার বলেন, ‘ভারত অনেক বড় দেশ। সেখানে ১৮-২০টা জায়গায় খেলেছি আমরা। প্রথম ম্যাচ হয়েছে নদীয়ার কৃষ্ণনগরে। মুম্বাইয়ে আমাদের বিরুদ্ধে খেলেছেন নবাব মনসুর আলী খান পাতৌদি। শর্মিলা ঠাকুরও মাঠে ছিলেন।’
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের প্রচারণার উদ্দেশ্য ছিল সবাইকে জানানো, বাংলাদেশে যুদ্ধ চলছে। ফুটবলাররা সবাই পালিয়ে ভারতে গিয়েছিলেন জানিয়ে তানভীর মাজহার যোগ করেন, ‘কিছু জায়গায় সমস্যা হয়েছে আমাদের যেমন বিহার, বেনারসে। ভারতের লোকদের আমরা বলেছি, আমরা এখানে এসেছি আপনাদের সহায়তা নিতে। যে প্রচার আমরা তখন ভারতে করেছি, বিশ্বে এটা বিরল।’
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যদের খোঁজখবর কি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় রাখে, এমন প্রশ্নে তানভীর মাজহার তান্না বলেন, ‘ক্রীড়া মন্ত্রণালয় মাসে তিন হাজার টাকা করে ভাতা দেয় স্বাধীন বাংলা দলের সদস্যদের।’
নামফলক উদ্বোধন শেষে বাফুফের টার্ফে প্রতিবছরের মতো এবারও হয়েছে বিজয় দিবসের প্রীতি ফুটবল ম্যাচ। লাল ও সবুজ দলে ভাগ হয়ে খেলেছেন সাবেক ফুটবলাররা। শেখ আসলাম, কায়সার হামিদদের মতো সাবেক তারকাদের অবশ্য দেখা যায়নি। প্রীতি ম্যাচ খেলেছেন মাহমুদুল হক লিটন, মামুন বাবু, আলফাজ আহমেদ, আবু ফয়সাল, রোকনুজ্জামান কাঞ্চন, আজমল হোসেন, বেলাল আহমেদ, মিজানুর রহমান ডন, আবদুল কাইয়ুম সেন্টু, নিজাম মজুমদার, গোলাম জিলানী, ওয়ালী ফয়সাল, প্রাণতোষ কুমারসহ অনেকে।