মেসির সঙ্গে আঠার মতো লেগে থাকা এই দেহরক্ষী কে
লিওনেল মেসির ‘বডিগার্ড’—কথাটা শুনলে সবার আগে মনে পড়ে রদ্রিগো দি পলকে। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে মেসির ‘দেহরক্ষী’ হিসেবে সমর্থকদের মধ্যে ভালোই নাম ছড়িয়েছেন দি পল। মেসি মাঠে ফাউলের শিকার হলে কিংবা প্রতিপক্ষের কারও সঙ্গে লেগে গেলে তাঁকে সাহায্য করতে দি পল ছুটে আসেন সবার আগে। প্রয়োজনে মেসির হয়ে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের সঙ্গে বাদানুবাদেও পিছপা হন না!
কিন্তু মেসির ক্লাব ইন্টার মায়ামিতে তো দি পল নেই। সেখানে মাঠে মেসির ‘দেহরক্ষী’র ভূমিকায় হোসেফ মার্তিনেজ। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে মেসির জন্য মাঝমাঠে দি পলের যে ভূমিকা, মায়ামিতে সেটাই পালন করছেন মার্তিনেজ। অনুশীলন থেকে প্রায় সব জায়গায় মেসির সঙ্গে আঠার মতো লেগে থাকেন মায়ামির এই ফুটবলার।
তবে মাঠের বাইরেও কিন্তু মেসির একজন দেহরক্ষী আছেন। একদম পেশাদার দেহরক্ষী বলতে যা বোঝায় তাই। মেসিকে উটকো ঝামেলা এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করতে তাঁর জন্য এই দেহরক্ষীকে নিয়োগ দিয়েছেন মায়ামির সহমালিক ও ইংল্যান্ডের সাবেক মিডফিল্ডার ডেভিড বেকহাম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মেসির এই দেহরক্ষীকে নিয়ে বেশ আলোচনাও হচ্ছে। কেন? কয়েকটি ছোট ছোট ঘটনাই তার কারণ।
ইউএস ওপেন কাপের সেমিফাইনালে সিনসিনাটির বিপক্ষে মায়ামির জয়ের ম্যাচে সেই মুহূর্তটি মনে আছে? যোগ করা সময়ে শেষ বাঁশি বাজার মিনিট দুয়েক আগে মেসির বাড়ানো ক্রস থেকে লিওনার্দো কাম্পানা গোল করেন। সিনসিনাটির পোস্টের ডান পাশে সতীর্থদের নিয়ে মেসি যখন গোল উদ্যাপন করছিলেন, তখন তাঁর উল্টো দিক থেকে টাচ লাইনের বাইরে দিয়ে দৌড়ে এসেছিলেন এক ব্যক্তি। মেসির থেকে কিছুটা দূরে কর্নার ফ্ল্যাগের পাশে দাঁড়িয়ে শ্যেন দৃষ্টিতে নজর রাখছিলেন আর্জেন্টাইন তারকার ওপর। এই লোকটিই মেসির দেহরক্ষী।
আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম ‘লা নাসিওন’ ও যুক্তরাষ্ট্রের ট্যাবলয়েড সংবাদমাধ্যম ‘নিউইয়র্ক পোস্ট’ জানিয়েছে, মেসির এই দেহরক্ষীর নাম ইয়াসিন চুয়েকো।
মায়ামির ম্যাচে মেসি মাঠে থাকলে ইয়াসিন চুয়েকোর দায়িত্ব থাকে টাচলাইনের বাইরে। অর্থাৎ মাঠেই থাকেন তবে সেটা দাগের বাইরে। গোল উদ্যাপন, থ্রো–ইন, কিংবা কর্নার নেওয়ার সময় মেসির আরও কাছাকাছি এসে দাঁড়ান।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চুয়েকোর এমন বেশ কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, গ্যালারি থেকে দুই সমর্থক মাঠে ঢুকে গিয়েছিলেন মেসিকে একনজর ছুঁয়ে দেখতে। কিন্তু দুজনের সামনেই ‘চীনের প্রাচীর’ এর মতো দাঁড়িয়ে যান ইয়াসিন চুয়েকো। মাঠে ঢুকে দুজনকেই বগলদাবা করে বাইরে নিয়ে যান। শুধু কি তা–ই, মেসি টিম বাস থেকে নামবেন কিংবা বাসে উঠবেন, ড্রেসিংরুম থেকে বের হবেন অথবা ঢুকবেন, অনুশীলন শেষে গাড়িতে উঠবেন—এমন সময়ও তাঁর সঙ্গে আঠার মতো লেগে থাকেন চুয়েকো।
চুয়েকো যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ অপারেশনস ফোর্স নেভি সিলের সাবেক সদস্য। ইরাক ও আফগানিস্তানে লড়েছেন। মিক্সড মার্শাল আর্ট (এমএমএ), তায়কোয়ান্দো ও বক্সিংয়ে বিশেষভাবে দক্ষ। কয়েকটি এমএমএ লড়াইয়েও অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম ‘মায়ামি দারিও মিডিয়া।’ নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে তায়কোয়ান্দো ও এমএমএ চর্চার বিভিন্ন ভিডিও পোস্ট করেন চুয়েকো। মেসির দেহরক্ষীর দায়িত্ব পাওয়ার পর ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুসারীসংখ্যাও হু হু করে বাড়ছে। ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুসারীসংখ্যা এখন প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার।
মেসি যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর থেকে ‘মেসি মেনিয়া’ চলছে। মায়ামির হয়ে ৮ ম্যাচে ১০ গোল, ৩টি অ্যাসিস্ট ও লিগস কাপ জিতিয়ে রীতিমতো ঝড় বইয়ে দিয়েছেন সমর্থকদের মনে। স্বাভাবিকভাবেই তাঁকে ঘিরে উন্মাদনা তৈরি হবে এবং ঘটছেও ঠিক সেটাই।
অটোগ্রাফ–সেলফির জন্য হামলে পড়ছেন সমর্থকেরা। আর গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ঘরোয়া টুর্নামেন্টে গ্যালারি থেকে দর্শকদের মাঠে ঢুকে পড়ার ঘটনা বেশ বেড়েছে। এসব ভেবেই মেসির জন্য বেকহাম আলাদা করে একজন পেশাদার দেহরক্ষী নিয়োগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘মেইল অনলাইন।’ যুক্তরাষ্ট্রের কিছু টিভি অনুষ্ঠানের বরাত দিয়ে ‘লা নাসিওন’ জানিয়েছে, মায়ামিতে মেসি এবং তাঁর পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইয়াসিন চুয়েকোর ৫০ জনের একটি দল আছে। চুয়েকো নিজে মেসির সঙ্গে আঠার মতো লেগে থেকে তাঁকে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দেন। বাকিরা মেসির পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব পালন করেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মেসির ভক্তরা তাঁর দেহরক্ষীকে নিয়ে নানা রকম মন্তব্যও করছেন। একজনের মন্তব্য, ‘মেসির দেহরক্ষী নিজের দায়িত্বটা বোঝে।’ আরেকজনের মন্তব্য, ‘সে (ইয়াসিন চুয়েকো) ডিফেন্ডারদের চেয়ে ভালো গোল করতে পারে।’