‘ফুটবলের নিয়মের চেয়েও তাঁর জার্সি খোলার কারণটা বড়’ বলে রেফারি হলুদ কার্ড দেখাননি
তুরস্ক-সিরিয়ায় স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে মারা গেছেন ৪৭ হাজারের বেশি মানুষ। নিহতদের মধ্যে আছেন তুর্কি ক্লাব হাতাইস্পোরের ঘানাইয়ান ফুটবলার ক্রিস্টিয়ান আতসু।
ভূমিকম্পে নিখোঁজ থাকার ১২ দিন পর গত শনিবার আতসুর মৃতদেহ নিজ বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়। ৩১ বছর বয়সী উইঙ্গারের অকালমৃত্যুর খবরে শোকে ম্রিয়মাণ ফুটবল–বিশ্ব। ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলে প্রায় সব ম্যাচের আগে আতসুর স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হচ্ছে। পরশু রাতে ডাচ লিগে আয়াক্স-স্পার্তা রটারডাম ম্যাচেও আতসুকে স্মরণ করা হয়েছে।
তবে মোহাম্মদ কুদুস একটু ভিন্নভাবে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন আতসুকে। ঘানা জাতীয় দলের একসময়ের সতীর্থকে স্মরণ করে জার্সির নিচে পরা গেঞ্জিতে কুদুস লিখে এনেছিলেন, ‘শান্তিতে থাকো, আতসু’। গোলের পর জার্সি খুলে সেটা প্রদর্শন করলেও রেফারি তাঁকে হলুদ কার্ড দেখাননি।
ম্যাচে রটারডামকে ৪-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়েছে আয়াক্স। নেদারল্যান্ডসের সফলতম ক্লাবটির হয়ে ম্যাচের ৮৪ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে চতুর্থ ও শেষ গোলটি করেন কুদুস। দৌড়ে সাইডলাইনের কাছে গিয়ে জার্সি খুলে ফেলেন। সতীর্থরা তাঁকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি সান্ত্বনা দেন।
তবে ফুটবল মাঠে ম্যাচ চলাকালীন রেফারির অনুমতি ছাড়া জার্সি খুলে ফেলার নিয়ম নেই। এটা করলে খেলোয়াড়কে হলুদ কার্ড দেখিয়ে সতর্ক করে দেন রেফারি। কিন্তু কুদুসের বেলায় সেটা হয়নি। আতসুর প্রতি আয়াক্স তারকার এমন শ্রদ্ধা যে ছুঁয়ে গেছে ম্যাচের রেফারি পল ফন বোয়েকেলকেও! তাই তো কুদুসকে হলুদ কার্ড না দেখিয়ে তাঁর পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়েছেন বোয়েকেল।
ম্যাচ শেষে কুদুস ইএসপিএকে কুদুস বলেছেন, ‘এটা (আতসুকে সম্মান জানানো) ফুটবলের নিয়মের চেয়েও বড় কিছু। এটা জীবন ও মরণের ব্যাপার।’
হলুদ কার্ড না দেখানোয় রেফারি বোয়েকেলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কুদুস, ‘রেফারি বলেছেন, এটা (জার্সি খোলা) করার নিয়ম নেই। তবে তিনি পরিস্থিতি বুঝতে পেরেছেন। তাঁর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তাঁকে অনেক সম্মান জানাই।’
কাতার বিশ্বকাপে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে জোড়া গোল করে ঘানাকে জিতিয়েছেন কুদুস। ২০১৯ সালে জাতীয় দলে অভিষেক হওয়া কুদুস সে সময় আতসুকে পেয়েছিলেন সতীর্থ হিসেবে। আতসুর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছেন জানিয়ে কুদুস আরও বলেন, ‘তিনি আমার খুব প্রিয় মানুষ ছিলেন। তাঁকে দেখে অনেক কিছু শিখেছি। তিনি আমাকে নিয়মিত পরামর্শ দিয়েছেন। আজ (পরশু) আমি যা কিছু করেছি শুধু তাঁর জন্য। গোল করতে না পারলেও ম্যাচ শেষে আমি শ্রদ্ধা দেখাতাম।’
ফ্রি কিক থেকে কুদুসের ওই গোলের সঙ্গে আতসুর কী মিল দেখুন। আতসুর জীবনের শেষ গোলটাও তো ফ্রি কিক থেকেই! মৃত্যুর আগে খেলা শেষ ম্যাচটিতে যোগ করা সময়ে বাঁ প্রান্তে নেওয়া কোনাকুনি শটে গোল করে হাতাইস্পোরকে জেতান আতসু। কুদুসের নেওয়া কিকটাও ছিল বাঁ প্রান্তে!