‘তুর্কি মেসি’কে আর্সেনালে যেতে ওজিলের মানা
বাঁ পায়ের অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হলেও জায়গা বদলে রাইট উইঙ্গার হিসেবেও খেলতে পারেন। বল নিয়ে ক্ষিপ্র গতিতে ঢুকে যেতে পারেন প্রতিপক্ষের বক্সে। দূরপাল্লার শটে গোলের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেন, অ্যাটাকিং থার্ডেও বল পাঠাতে পারদর্শী।
ফুটবল পরিসংখ্যানবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘হু স্কোরড’–এর মতে, তিনি অপার সম্ভাবনাময় সৃজনশীল খেলোয়াড়, যাঁর সেট–পিস দক্ষতা ও কৌশল অসাধারণ। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো তাঁকে ডাকে ‘তুর্কি মেসি’ নামে। এমন এক খেলোয়াড়কে কে না দলে চায়?
পরিচয় জানানোর আগেই যাঁকে নিয়ে এত কিছু বলা হলো, তাঁর আসল নাম আর্দা গুলের। তুরস্কের এই ১৮ বছর বয়সী তরুণ খেলেন দেশটির নামকরা ক্লাব ফেনেরবাচেতে।
জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক হয়েছে গত বছরের নভেম্বরে। সপ্তাহ দুয়েক আগেই ইউরো বাছাইয়ে ওয়েলসের বিপক্ষে বক্সের বাইরে থেকে বাঁকানো শটে করেছেন দুর্দান্ত গোল। সেই গোলের পর গুলেরকে নিয়ে আরও বেশি শোরগোল পড়ে গেছে। গ্রীষ্মকালীন দলবদলে প্রতিশ্রুতিশীল এই তরুণকে কিনতে উঠেপড়ে লেগেছে বেশ কয়েকটি পরাশক্তি ক্লাব।
কয়েক দিন আগে মার্কা জানিয়েছিল, গুলেরকে পেতে রিয়াল মাদ্রিদ–বার্সেলোনার মধ্যে ‘যুদ্ধ’ লেগে যেতে পারে। বার্সা সভাপতি নিজেও স্বীকার করেছেন, ‘ইউরোপের সব বড় দল ওকে চায়।’ আর্সেনালও আছে গুলেরকে পাওয়ার দৌড়ে। আগ্রহ আছে বায়ার্ন মিউনিখ, লিভারপুল, নিউক্যাসলেরও। কিন্তু এখানে বাধা হয়ে এসেছেন আর্সেনালেরই সাবেক তারকা মেসুত ওজিল। গুলেরকে আর্সেনালে যেতে বারণ করেছেন ওজিল।
ওজিলের এই হস্তক্ষেপকে অনেকেরই স্বাভাবিক মনে হতে পারে। আর্সেনালের সঙ্গে জার্মানির বিশ্বকাপজয়ী সাবেক ফুটবলারের সম্পর্কের অবনতির কথা সবারই জানা। ২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত লন্ডনের ক্লাবটিতে ছিলেন একসময়ের বিশ্বসেরা মিডফিল্ডার। তবে চোট, ফর্মহীনতা, মাসকটের ভূমিকায় দিন চাকরি করা জেরি কিউয়ের বেতন দিতে চাওয়াসহ নানা কারণে ২০২০ সাল থেকে দলে ব্রাত্য হয়ে পড়েন ওজিল। গানারদের হয়ে শেষটায় বেঞ্চে বসেই কাটিয়ে দিতে হয়েছে তাঁকে। শেষমেশ চুক্তির মেয়াদ ফুরোনোর পর যোগ দেন তুর্কি ক্লাব ফেনেরবাচে। সেখানেই গুলেরকে পান সতীর্থ হিসেবে। গুলেরও তাঁকে অন্যতম আদর্শ মানেন।
তবে আর্সেনালের সঙ্গে সম্পর্কে অবনতির কারণে নয়, ওজিল গুলেরকে আর্সেনালে যেতে বারণ করেছেন অন্য কারণে। স্প্যানিশ দৈনিক মুন্দো দিপোর্তিভো জানিয়েছে, শুধু আর্সেনাল নয়, গুলেরকে বার্সাতেও যেতে মানা করেছেন ওজিল। বরং ফেনেরবাচেই অন্তত আরেকটি মৌসুম থেকে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। ওজিলের মতে, পরিণত হয়ে এরপর বড় ক্লাবে যাক গুলের।
ফেনেরবাচের হয়ে গত মৌসুমে ৩৫ ম্যাচে ছয় গোল ও সাতটি অ্যাসিস্ট করেছেন গুলের। ওজিল মনে করেন, দেশের ক্লাবে আরও কিছুদিন খেললে গুলেরের মানসিক বিকাশ যেমন হবে, একইসঙ্গে আরও পরিণত হয়ে উঠবেন। তাই এবারের দলবদলে অন্য ক্লাবের প্রতি তাঁর আগ্রহ না দেখানোই উচিত, তা ছাড়া গুলেরকে ফেনেরবাচে আরও কিছু দিন রেখে দিলে তাদেরই লাভ। ক্লাবটির সঙ্গে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত চুক্তি আছে গুলেরের। তাই ২০২৩–২৪ মৌসুমে আরও ভালো পারফর্ম করতে পারলে গুলেরকে চড়া দামে বিক্রি করে দিতে পারবে তারা।
তবে বার্সা যেভাবে গুলেরের পেছনে ‘নাছোড়বান্দা’র মতো লেগে আছে, তাতে আগামী মৌসুমেই হয়তো তাঁকে স্প্যানিশ ক্লাবটিতে দেখা যাবে। বার্সার প্রধান নির্বাহী ডেকো গুলেরের ব্যাপারে সরাসরি আলোচনা করতে এরই মধ্যে তুরস্কে গেছেন। কে জানে, আসল মেসিকে ফেরাতে না পারলেও হয়তো ‘তুর্কি মেসি’কে নিয়ে আসতে ঠিকই সফল হবে বার্সা!