৭৫–এর ব্রাদার্সকে মনে করিয়ে দিল স্বাধীনতা
এবারের প্রিমিয়ার লিগে ব্রাদার্স ইউনিয়ন নেই। একটা সময়ে বাংলাদেশের ফুটবলের তৃতীয় শক্তি হয়ে ওঠা দলটি নেমে গেছে দ্বিতীয় স্তরে। কিন্তু কী আশ্চর্য! আজ প্রিমিয়ার লিগের নতুন মৌসুম শুরুর দিনে সবার মুখে খুব বেশি করেই থাকল ব্রাদার্স। টঙ্গীতে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে আজ বিকেলে যা ঘটল, তাতে গোপীবাগের কমলা বাহিনীর প্রসঙ্গ তো আসবেই।
প্রিমিয়ার লিগে নিজেদের অভিষেকেই আজ গত দুবারের শিরোপাজয়ী বসুন্ধরা কিংসকে ২-১ গোলে হারিয়ে দিয়েছে স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘ। ব্রাদার্স ইউনিয়নকে সবার মনে পড়েছে এর পরপরই। ১৯৭৫ সালে প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগের অভিষেকেই যে আগেরবারের চ্যাম্পিয়ন আবাহনী ক্রীড়া চক্রকে হারিয়ে দিয়েছিল ব্রাদার্স। বাবলু, সেলিম, মহসিনদের সেই ব্রাদার্স। গফুর বালুচের হাতে গড়া ব্রাদার্স। পরের তিন দশকে দেশের ফুটবলের অন্যতম প্রধান শক্তিই হয়ে উঠেছিল ব্রাদার্স। অজস্র ঘটনা, অজস্র নস্টালজিয়ার উৎস সেই ব্রাদার্স।
বেশ কয়েক বছর ধরে ক্ষয়িষ্ণু শক্তি হয়ে কোনোমতে টিকে ছিল ব্রাদার্স। কোনোমতে একটা দল গড়ে দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে টিকে থাকার লড়াই আর কি! তারপরেও একটা অহংকার ব্রাদার্স ঘিরে সব সময়ই ছিল। দ্বিতীয় স্তরে নেমে গিয়ে সেই অহংকারটাও হারিয়ে ফেলেছে তারা। এবার সবাইকে অবাক করে দিয়ে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ থেকেও নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে তারা। যার অর্থ দাঁড়ায়, অস্তিত্বের লড়াইটাও চালিয়ে যাওয়ার আগ্রহ নেই তাদের। ১৯৭৫ সালের পর এই প্রথমবারের মতো দেশের সর্বোচ্চ স্তরের ফুটবল লিগে ব্রাদার্স নামের কোনো দল নেই।
শীর্ষ লিগে অভিষেক ম্যাচেই চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে দেওয়ার ঘটনা বাংলাদেশের ফুটবলে এ দুটিই। ১৯৭৫ সালে ব্রাদার্স আর ২০২২ সালে স্বাধীনতা। অতীতে লিগে অভিষিক্ত হয়ে চ্যাম্পিয়ন দলের পয়েন্ট কেড়ে নেওয়ার বেশি কিছু ঘটনা থাকলেও হারিয়ে দেওয়ার ঘটনা আর নেই। ব্রাদার্সের ৪৭ বছর পর স্বাধীনতা বাংলাদেশের ফুটবলে এমন কোনো ঘটনার জন্ম দিল।
সাবেক জাতীয় ফুটবলার ও জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক কোচ গোলাম সারোয়ারও স্মৃতি হাতড়ে এমন কিছু মনে করতে পারলেন না, ‘১৯৫৬ সাল থেকে খেলা দেখি। পঁচাত্তরে ব্রাদার্স অভিষেকেই আবাহনীকে হারিয়েছিল। এরপর এমন কোনো কিছু ঘটেনি বলেই আমার ধারণা। আজ স্বাধীনতা আবারও চ্যাম্পিয়ন দলকে হারাল।’
ব্রাদার্সের না থাকার লিগেই ব্রাদার্সের কীর্তির পুনরাবৃত্তি। ‘কাকতাল’ শব্দটা ব্যবহার না হয় না-ই করা গেল!