রিয়ালের কাছে হারের পরও বার্সার ‘গর্ব’ দেখে লজ্জা হয় ডি ইয়ংয়ের
বার্সেলোনা রিয়াল মাদ্রিদের কাছে একটা ম্যাচ হেরেছে। তা যতই লড়াই করে হার হোক, যতই বার্সার এখন খারাপ সময় চলুক, যতই পালাবদলের মধ্য দিয়ে যেতে থাকা বার্সাকে এমন লড়াই আশা দেখাক...হারটা যখন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের কাছে, সেটি নিয়ে ইতিবাচক কিছু বলার প্রশ্নই ওঠে না। রিয়াল মাদ্রিদের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা অভিন্ন!
কিন্তু চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে হার নিয়েই কদিন আগে বেশ গর্বের কথা জানিয়েছিলেন বার্সেলোনা সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা। সৌদি আরবের রিয়াদে স্প্যানিশ সুপারকাপের সেমিফাইনালে রিয়ালের কাছে ৩-২ গোলে হেরে যায় বার্সেলোনা। শেষ পর্যন্ত বার্সা যখন সেমিতে হেরেই বাড়িতে ফেরে, রিয়াল সে টুর্নামেন্টের শিরোপাই জিতে নিয়েছে। কিন্তু সেমিফাইনালে রিয়ালের কাছে হারের পর দলের ড্রেসিংরুমে গিয়ে বার্সা সভাপতি লাপোর্তা বেশ গর্বের কথা জানিয়ে আসেন।
এখন দেখা যাচ্ছে, বার্সার ড্রেসিংরুমের কয়েকজনই সেটা ভালোভাবে নেননি। গতকাল লিগে আলাভেসের বিপক্ষে বার্সার জয়ের পর মিডফিল্ডার ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংয়ের কথাতেই সেটির আভাস মিলছে।
স্প্যানিশ সুপারকাপে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে দুবার পিছিয়ে পড়েও নির্ধারিত ৯০ মিনিটের মধ্যে দুবার সমতা ফিরিয়ে আনে বার্সা। ২-২ সমতায় নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর অতিরিক্ত সময়ে গিয়ে রিয়ালের তৃতীয় গোলটি করেন ফেদেরিকো ভালভার্দে, সেটির জবাব আর পায়নি বার্সা।
তবে সেদিন হারলেও ম্যাচে দাপট দেখিয়েছে বার্সাই। বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধে ও অতিরিক্ত সময়ে বার্সার জয়ের সম্ভাবনাই বেশি মনে হচ্ছিল। লিওনেল মেসি চলে যাওয়ার পর, অর্থাভাবে খেলোয়াড় কিনতে না পারা, গ্রিজমান-কুতিনিওদের যেতে দেওয়া বার্সার তরুণদের কাছে এমন পারফরম্যান্স হয়তো অনেক বাস্তববাদী বার্সা সমর্থকের প্রত্যাশাকেও ছাপিয়ে গিয়েছিল।
হোয়ান লাপোর্তাও সেভাবেই হয়তো দেখেছেন হারটাকে। সে কারণেই কিনা ম্যাচ শেষে ড্রেসিংরুমে গিয়ে বার্সা কোচ জাভি হার্নান্দেজকে অভিনন্দন জানিয়ে দলের উদ্দেশে বলেন, ‘সব কুলেই (বার্সা সমর্থকদের স্প্যানিশ ভাষায় বলা হয় কুলে) আজ বার্সাকে নিয়ে গর্বিত, হয়তো অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশিই গর্বিত। তোমরা তোমাদের প্রতিভা দেখিয়েছ, বার্সার হয়ে খেলার গর্ব প্রকাশ পেয়েছে তোমাদের খেলায়। তোমরা দেখিয়েছ তোমরা সাহস হারাও না। এভাবেই চালিয়ে যেতে হবে।’
কিন্তু ফুটবল তো আর এসব হিসাব নিয়ে চলে না। দিন শেষে স্কোরবোর্ড জানাচ্ছে, বার্সা তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হেরে একটা টুর্নামেন্ট থেকে বাড়িতে ফিরেছে। সে কারণেই কিনা বার্সার ড্রেসিংরুমের অনেকেই লাপোর্তার গর্বিত হওয়ার ব্যাপারটাকে ভালোভাবে নিতে পারছেন না। মাদ্রিদভিত্তিক স্প্যানিশ ক্রীড়াদৈনিক এএস লিখেছে, লাপোর্তার বক্তব্যের পর খেলোয়াড়দের মৃদু করতালি আর চোখেমুখে লেগে থাকা অবিশ্বাসই চিত্রটা তুলে ধরছিল!
১০ দিন পর গতকাল ম্যাচ শেষে ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংয়ের কথার পর বার্সার ড্রেসিংরুমের মনোভাব আরেকটু পরিষ্কার হলো। আলাভেসের বিপক্ষে কাল বার্সেলোনার ১-০ গোলের জয়ে ৮৭ মিনিটে বার্সার গোলটি করেছেন ফ্রেঙ্কিই। বার্সার একাদশে ২৪ বছর বয়সী ডাচ মিডফিল্ডারের জায়গা কিছুটা নড়বড়ে হয়ে পড়েছিল গত কিছুদিনে, চোটও ভোগাচ্ছিল তাঁকে। তাঁর বার্সেলোনা ছেড়ে দেওয়ার গুঞ্জনও বাজারে চাউর। এমন পরিস্থিতিতে কাল বার্সাকে জিতিয়ে ফ্রেঙ্কির কিছুটা স্বস্তিই পাওয়ার কথা।
তবে এমন অবস্থায়ও একেবারে আবেগে ভেসে যাচ্ছেন না ফ্রেঙ্কি। ডাচ তেজ বলে কথা! সব সময়ই সোজাসাপটা কথা বলা ফ্রেঙ্কি এমন অবস্থায়ও ক্লাবের উচ্চপদস্থদের মনোভাব মেনে নেওয়ার মানুষ নন। লাপোর্তার নাম অবশ্য বলেননি, তবে কাল ম্যাচের পর সংবাদমাধ্যমে ফ্রেঙ্কি সোজাসুজিই বললেন, ‘রিয়ালের কাছে হারের পরও আমরা গর্বিত—এমনটা বলা হচ্ছে দেখে খারাপ লেগেছে। ব্যাপারটা কোনোভাবেই এমন হওয়া উচিত নয়। আমরা বার্সা! কোনো একটা ম্যাচে হেরে যাওয়ার পর আমাদের কষ্ট পাওয়া উচিত।’ তার ওপর সেই ম্যাচ যখন রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে!
এর আগে রিয়ালের কাছে হারের পর লেফটব্যাক জর্দি আলবাও বলেছিলেন, ‘মাদ্রিদের কাছে হার হজম করা কখনোই সহজ নয়।’