ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যাওয়া বাংলাদেশের ফুটবলাররা কোথায়?
>২০১২ ও ২০১৪ সালে এয়ারটেলের সহযোগিতায় দুই ব্যাচে ২৪ জন ছেলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে স্বল্প সময়ের জন্য অনুশীলনে গিয়েছিলেন। কী অবস্থা প্রথম ব্যাচের খেলোয়াড়দের?
‘আরে ওই তো ওয়েইন রুনি!’—কথাটি শেষ করার আগেই দৃশ্যপটে হাজির রবিন ফন পার্সি। চোখের সামনে ঘুরছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মহা সব তারকা। শুধু দেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। রুনি-পার্সিদের সঙ্গে অনুশীলনে খোশমেজাজে দু-একবার ওয়ান টু ওয়ান পাস খেলারও সৌভাগ্য হয়েছিল বাংলাদেশি কিছু কিশোর ফুটবলারের। কিন্তু গল্পটা ওখানেই শেষ। এরপর বাংলাদেশের ফুটবলে যা হয়, সেটাই লেখা হয়েছে এই কিশোরদের ভাগ্যে।
বেশি দিন আগের কথা নয়। দুই ব্যাচে ১২ দ্বিগুণে ২৪ জন ১৬ বছর বয়সী কিশোরের সৌভাগ্য হয়েছিল ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের স্কুলে গিয়ে অনুশীলন করার। প্রথম ব্যাচটি গিয়েছিল ২০১২ সালে। হিসাব অনুযায়ী, সে দলের বয়োজ্যেষ্ঠ কিশোরই এখন ২২ বছরের তরতাজা তরুণ। ইউনাইটেডের মতো ক্লাবের অধীনে অনুশীলন করে আসা এই ফুটবলারদের তো এখন জাতীয় দলে খেলার কথা, নয়তো থাকার কথা জাতীয় দলের পাইপলাইনে। তা কতজন আছে এ দলে? উত্তরটা হলো, একজনও নয়। বরং পাঁচজনকে ফুটবলপাড়ায় খুঁজতে হবে ‘নিখোঁজ’ সংবাদের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে।
প্রথম ব্যাচের সেই ১২ জন ফুটবলারের মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছেন যে মাহমুদুল হাসান কিরণ, গত বছর অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলে আরামবাগের জার্সিতে খেলেছেন প্রিমিয়ার লিগ। নতুন মৌসুমেও খেলবেন মারুফুল হকের অধীনে। এ ছাড়া শেষ মৌসুমে আরও পাঁচজনকে দেখা গেছে প্রিমিয়ার লিগের বিভিন্ন ক্লাবে। মাশহুদ উদ্দিন আহমদ ছিলেন শেখ জামালে, মোহাম্মদ মিঠু ব্রাদার্সে, লিমন রহমতগঞ্জে আর ফরাশগঞ্জে ছিলেন শাফায়েত হোসেন ও ইভান। প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোতে থাকলেও ফুটবল সুরভি ছড়াতে পারেননি কেউ।
বাকি ছয় দুর্ভাগার মধ্যে একজন মহা দুর্ভাগা আছেন গোলরক্ষক ফয়সাল আহমেদ। এই গোলরক্ষকের দুর্দান্ত নৈপুণ্যে ২০১৫ সালে সিলেটে অনূর্ধ্ব-১৬ সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর আরও তর তর করে এগিয়ে যাওয়ার কথা তাঁর। কিন্তু না, কোনো উপায়ান্তর না দেখে তিনি চাকরি নিয়েছেন পুলিশে। বাকি পাঁচজনের কোনো হদিস দিতে পারলেন না ওপরে উল্লেখ করা বন্ধুরা।
অথচ প্রত্যেকেই যে ছিল ‘হীরার টুকরো’—এ নিয়ে নেই কোনো সন্দেহ। ৬০ হাজার ছেলের মধ্যে থেকে প্রতিভা ওজন করে ১২ রত্নকে বাছাই করে ইংল্যান্ডের টিকিট দিয়েছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড স্কুলের তিন কোচ কেভিন ও’কনেল, মাইকেল বেনেট ও মাইকেল ম্যাকক্লিন। দেশের ফুটবলের টিমটিমে অবস্থায় ১২টির মধ্যে থেকে চারটি বাতিও যদি আজ উজ্জ্বল হয়ে জ্বলত, ফুটবলে একটু হলেও আলো ফুটত। কিন্তু প্রতিভার পরিচর্যা করবে কে? এয়ারটেল কঠিন কাজটা করে দিয়েছিল, প্রতিভা খুঁজে এনেছিল তারা। অথচ পরবর্তী সময়ে কুঁড়িগুলো ফুল হয়ে ফোটানোর দায়িত্ব নেওয়া উচিত ছিল যাদের, তারা নেয়নি।
এখানেই কষ্টটা আরামবাগে খেলা মাহমুদুলের, ‘যখন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে প্র্যাকটিস করতাম, বড় খেলোয়াড়দের দেখে কত স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু দেশে ফেরার পরে আগের মতোই চলতে থাকল সবকিছু। আমি বিকেএসপিতে ছিলাম বলে এখনো ফুটবল খেলতে পারছি। বাকি কয়েক বন্ধুকে তো এখন দেখাই যায় না। ফুটবল খেলে বলেও মনে হয় না। অথচ তাদের যদি ধরে রাখা যেত, আজ অন্তত কয়েকজন ফুটবলার জাতীয় দলে থাকতে পারত।’
ভাবা যায়? ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে অনুশীলন করে আসা ফুটবলারের পায়ের স্পর্শ ফুটবল পায় না!
সে ছেলেগুলোর কী অবস্থা, তা আন্দাজ করতে কষ্ট হয় না। হয়তো এলাকায় রুনি-পার্সিদের সঙ্গে খেলতে পারার গল্প শুনিয়েই আড়ালে চোখ মুছে তারা।