মেসি–নেইমারের কাছে বন্ধুত্বই যেন শেষ কথা
তাঁরা দুজন বন্ধু। খুব ভালো বন্ধু। বার্সেলোনায় খেলার সুবাদে হৃদ্যতা, সেটি এখন অন্য পর্যায়ে। মেসি মারাকানার মাঠে থাকবেন, আর নেইমার তাঁর সঙ্গে আড্ডায় মাতবেন না, খুনসুটি জুড়ে দেবেন না, সেটা কী করে হয়? ব্রাজিলীয় তারকা সেটি করলেন, কোপা আমেরিকার ফাইনালে মেসির আর্জেন্টিনার কাছে হারের পরই। ড্রেসিং রুমে নয়। মাঠে বসেই মেসির সঙ্গে মেতে উঠলেন গল্পে-আড্ডায়। ব্যাপারটা যেন এমন, ‘খেলা শেষ, এইবার বলো বন্ধু তোমার কী খবর!’
মাঠে তাঁরা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই–ই করেছেন। একচুলও ছাড় দেননি একে অন্যকে। কিন্তু যে-ই খেলা শেষ, তাঁরা ভুলে গেলেন মাঠের সেই পেশাদারি তিক্ততা। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর খেলা, সমর্থকেরা একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষ লালন করেন। অথচ, দ্বৈরথের দুই নায়কই ম্যাচ শেষে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে তৈরি করলেন অসম্ভব সুন্দর এক দৃশ্য। কে যেন বলছিলেন, আজ মাঠে খেলা যা-ই হোক, দি মারিয়ার গোল, কিংবা মেসির সেই দৌড়, নেইমারের সেই ড্রিবলিং—মারাকানার সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য তৈরি হয়েছে ম্যাচের পরই।
সেমিফাইনালে পেরুকে হারিয়েই নেইমার ব্যাপারটা জানিয়ে দিয়েছিলেন। ফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসেবে যেন আর্জেন্টিনা হয়, সেটিই মনেপ্রাণে চাওয়া তাঁর। নিজে তো খেলে দিতে পারবেন না, মাঠের বাইরে থেকে দ্বিতীয় আর্জেন্টিনা-কলম্বিয়ার দ্বিতীয় সেমিফাইনালে তাই বন্ধুর দলকেই সমর্থন করবেন। মেসির কাছেও ব্যাপারটি নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তাঁরও সরল মন্তব্য, ‘নেইমার আর আমি খুব ভালো বন্ধু বলেই হয়তো সে ফাইনালে চাইছে যে আমরা থাকি।’ নেইমারের সেই ‘চাওয়া’র পেছনে গূঢ় রহস্য কী, সেটা খুঁজতে যাননি তিনি।
কেন যাননি খুঁজতে, মারাকানায় কোপার ফাইনালের পর সেটিই বোঝা গেল। এ দুজনের বন্ধুত্বটা আসলে পেশাদারি শৃঙ্খল, পেশাদারি কৃত্রিমতার সীমা ছাড়িয়ে অনেকটাই আন্তরিক। একই ক্লাবে খেলা, সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেওয়া, সর্বোপরি প্রতিবেশী দেশের নাগরিক হিসেবে প্রায় একই ধরনের সংস্কৃতি ধারণ করা, মেসি আর নেইমার যেন বন্ধুত্বে বড় এক উদাহরণই।
খেলা শেষে মেসি-নেইমারের পাশাপাশি বসা দৃশ্যটাই আসলে সত্যি। এই সত্যই যেন ফুটবলকে সব সময়ই দারুণ কিছু বানিয়ে রেখেছে।