২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

ব্রাজিলকে খোঁচা, শিরোপা যখন পানপাত্র—যেমন উৎসব হলো মেসিদের

আর্জেন্টিনার জয়ের পর এই ছবিটি টুইট করেন সের্হিও আগুয়েরো
ছবি: টুইটার

টিভির সামনে রাত জেগে ম্যাচটা আর্জেন্টিনার যেসব সমর্থক দেখেছেন, তাঁদের মনের অবস্থাই একবার ভেবে দেখুন।

গত জুলাইয়ে ব্রাজিলের মাটিতে ব্রাজিলকে হারিয়ে কোপা আমেরিকা ফাইনাল জিতেছে আর্জেন্টিনা। এরপর কাল রাতে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন ইতালির বিপক্ষে জয়টা এসেছে ৩-০ ব্যবধানে।

আর্জেন্টিনা কতটা ভালো খেলেছে, তা এই স্কোরলাইন দিয়ে বোঝানো যাবে না। শুধু একটা পরিসংখ্যান দিয়েই বুঝিয়ে দেওয়া যায়। ইতালির গোলকিপার জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা কমপক্ষে সাতটি সেভ করেছেন এই ম্যাচে। ওদিকে নভেম্বরেই কাতার বিশ্বকাপ।

সেই ‘মহারণ’ সামনে রেখে আর্জেন্টিনা কাল রাতে যেভাবে খেলেছে, তাতে সমর্থকদের যেন আনন্দ আর ধরে না!

আরও পড়ুন

সমর্থকদের অবস্থাই যদি এমন হয়, তাহলে একবার কল্পনা করুন তো, মেসি-দি মারিয়ারা কতটা খুশি? আর এই আর্জেন্টিনা দলটা যে একটা পরিবারের মতো, খেলাটা উপভোগ করতে জানে, সে কথা তো ম্যাচ শেষেই বলেছেন উইঙ্গার আনহেল দি মারিয়া, ‘কোপা আমেরিকার সব পাল্টে গেছে। এখন আমরা নিজেদের খেলা উপভোগ করি এবং সবকিছুই সহজে হচ্ছে। আমরা ভেতরে ভেতরে উত্তেজিত হলেও পা মাটিতেই রেখেছি।’

তা থাকুক। কিন্তু ইতালির বিপক্ষে এমন জয়ের পর কি আর চুপ করে বসে থাকা যায়! লিওনেল স্কালোনির অধীন আর্জেন্টিনা দল তাদের দ্বিতীয় শিরোপা জয় যেভাবে উদ্‌যাপন করেছে, তা নজর কেড়েছে সংবাদমাধ্যমের।

আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম ‘ক্লারিন’ জানিয়েছে, বন্ধুবান্ধব মিলে কোনো সাফল্য তুলে নেওয়ার পর যেমন হইহুল্লোড় হয়, ঠিক তেমনটাই হয়েছে আর্জেন্টিনা শিবিরে।

আরও পড়ুন

আর্জেন্টিনার ড্রেসিংরুমে দেখা গেছে সবাই লিওনেল মেসির সঙ্গে ছবি তুলতে মত্ত। মেসিকে ছবির কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে রদ্রিগো দি পল, জিওভান্নি লো সেলসোরা পার্শ্বচরিত্রে—ব্যাটম্যানের সঙ্গে যেমন রবিন আরকি!

আরও পড়ুন

ড্রেসিংরুমে নেচে-গেয়ে ‘ফিনালিসিমা’ জয় উদ্‌যাপন করেন দি মারিয়া-মেসিরা। তার আগে ওয়েম্বলির সবুজ জমিনেও উৎসব হয় এক লহমা। মেসি, দি মারিয়া, এমিলিয়ানো মার্তিনেজরা যখন মাঠে জয় উদ্‌যাপন করছিলেন, তখন রদ্রিগো দি পল ব্যস্ত ছিলেন জাল কাটতে। জিওভান্নি লো সেলসোকে নিয়ে গোলপোস্টের জাল কাটছিলেন এই মিডফিল্ডার। জয়ের স্মারক হিসেবে এই জাল হয়তো স্যূভনির হিসেবে রেখে দেবেন।

মাঠের বাইরেও একজন ছিলেন। তিনি যেন আর্জেন্টিনা দলে না থেকেও মাঠে ছিলেন! সের্হিও আগুয়েরো। হৃদ্‌যন্ত্রে সমস্যা থাকায় গত ডিসেম্বরে মাত্র ৩৩ বছর বয়সে ফুটবল ছেড়েছেন এই স্ট্রাইকার। নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে তিনি ম্যাচের শেষ মুহূর্তের ছবি ‘স্টোরি’ হিসেবে পোস্ট করেন। মাঠ থেকে মেসিরা ড্রেসিংরুমে যাওয়ার পরই তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন আগুয়েরো। কীভাবে?

আরও পড়ুন

ড্রেসিংরুমে আর্জেন্টিনা দলের কেউ একজন (সম্ভবত নিকোলাস ওতামেন্দি) ফোনে ভিডিও কল দেন আগুয়েরোকে। ব্যস, এরপরই উন্মত্ত উদ্‌যাপন শুরু। ভিডিও কলে আগুয়েরো তাঁর সাবেক সতীর্থদের প্রতি বলেন, ‘ভাইয়েরা, আমি তোমাদের ভালোবাসি এবং এই মুহূর্তটা ভাগ করে নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।’

তবে মাঠে অন্য এক আগুয়েরো ছিলেন-সের্হিও আগুয়েরোর ছেলে। ম্যাচ শুরুর আগে আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে শ্রদ্ধা জানায় উয়েফা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন আগুয়েরোর ছেলে এবং ম্যারাডোনার নাতি বেনজামিন আগুয়েরো।

মেসি-দি মারিয়ারা ড্রেসিংরুমের উৎসব শেষে টিম বাসে ওঠেন। সেখানে হইহুল্লোড় যেন নতুন মাত্রা পায়! ‘ফিনালিসিমা’য় জেতা ট্রফিটা হয়ে ওঠে সবার পানপাত্র। ইতালির বিখ্যাত পানীয় ফেরনেত ও কোকা মিশিয়ে খেলোয়াড়দের সবাই একে একে চুমুক দেন ট্রফিতে। পানীয়টা বেছে নেওয়া হয়েছিল সম্ভবত ইতালিকে পরোক্ষভাবে খোঁচা মারতে।

এসব চালানোর মধ্যেই আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের গান গেয়েছেন মেসিরা। আর হ্যাঁ, উৎসবের প্রায় সময়জুড়েই আর্জেন্টাইনরা কিন্তু ব্রাজিলকে স্মরণ করেছেন। ‘ক্লারিন’ জানিয়েছে, গানের মাঝে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের খোঁচা মারতে ছাড়েননি ওতামেন্দি-রোমেরোরা।

এর মধ্যেই মজার এক ঘটনা ঘটেছে। ভালোবাসার প্রস্তাব পেয়েছেন মেসি, সেটিও তাঁর সতীর্থের কাছ থেকে! না, অন্য কিছু ভাবার কোনো কারণই নেই।

ব্রিটিশ গায়ক এড শিরানের গান ‘থিংকিং আউট লাউড’-এর কয়েক লাইন মেসিকে উৎসর্গ করেন আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার পাপু গোমেজ, ‘প্রতিদিন দেখা কিংবা চুমু না খেয়েই তুমি কাউকে ভালোবাসতে পারো।’ নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে লাইনটি মেসির প্রতি ভালোবাসার নৈবেদ্য হিসেবে পোস্ট করেন পাপু গোমেজ।

স্বাভাবিক। এই ৩৪ বছর বয়সেও মেসি কাল রাতে যেভাবে খেলেছেন, তাতে তাঁকে ভালো না বেসে উপায় আছে!

আরও পড়ুন