ফুটবল পেশাদারত্বে ভুটানেরও পেছনে বাংলাদেশ

বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলের প্রথম স্তর প্রিমিয়ার লিগের ১২টি ক্লাবের মাত্র দুটি ক্লাব পেয়েছে এএফসি ক্লাব লাইসেন্স।

ক্লাব পেশাদারত্বে পিছিয়ে বাংলাদেশের ফুটবলছবি: প্রথম আলো

২০০৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে পেশাদার ফুটবল লিগের যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু এত দিন পরও আসলে পেশাদারির ছাপ ওই অর্থে পড়েনি দেশের ফুটবলে। মৌসুমের সময়সীমা, ক্লাবের সংখ্যা বা দলবদলের কোনো নির্দিষ্ট সূচির কোনো ঠিকঠিকানা নেই। ম্যাচের কয়েক ঘণ্টা আগেও সেই ম্যাচ পিছিয়ে দেওয়ার উদাহরণ কম নেই। সব মিলিয়ে পেশাদার ফুটবল লিগ আসলে শুধু নামেই, ক্লাবগুলোও চলছে নিজেদের মর্জিমতোই।

সেটার প্রতিফলন দেখা গেল এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (এএফসি) ক্লাব লাইসেন্সের তালিকায়। গতকাল ২০২২ সালের জন্য এএফসি লাইসেন্স পাওয়া ক্লাবগুলোর তালিকা প্রকাশ করেছে এএফসি। সেখানে ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের ক্লাবগুলোর পেশাদারির দৈন্যদশা। বাংলাদেশ থেকে মাত্র দুটি ক্লাব পেয়েছে ২০২২ সালে এএফসি কাপে খেলার ছাড়পত্র, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে যা যৌথভাবে সর্বনিম্ন। মালদ্বীপেরও মাত্র দুটি ক্লাব আছে এই তালিকায়।

আবাহনী পেয়েছে এএফসি লাইসেন্স
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ থেকে শুধু বসুন্ধরা কিংস ও আবাহনী লিমিটেড এএফসির মানদণ্ড পূরণ করতে পেরেছে। লাইসেন্স পেতে ব্যর্থ হওয়ায় সর্বশেষ প্রিমিয়ার লিগে রানার্সআপ হয়েও এএফসি কাপের প্লে-অফ খেলতে পারবে না শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। তৃতীয় হয়েও এখন সে জায়গায় খেলবে আবাহনী।

শেখ জামাল ছাড়াও আবেদন করে লাইসেন্স পেতে ব্যর্থ হয়েছে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র, সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব, রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি ও উত্তর বারিধার। বাফুফের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এএফসির নির্ধারিত মানদণ্ড পূরণ করতে না পারায় এই ক্লাবগুলোর আবেদন সফল হয়নি। প্রধানত পাঁচটি বিভাগে এই মানদণ্ড বিচার করা হয়—খেলায় সাফল্য, অবকাঠামো, প্রশাসনিক গঠন, অর্থনৈতিক ভিত্তি ও আইনি বিধিমালা। ক্লাবগুলোর নিজস্ব মাঠ থাকা, অন্তত দুটি যুব দল থাকা, নিজস্ব ফিজিও ও চিকিৎসক, পেশাদার ম্যানেজার, নিরাপত্তা কর্মকর্তা, আইন কর্মকর্তা থাকা এবং বার্ষিক বাজেট ও অডিটের মতো বিষয়গুলো বিবেচনা করে এএফসি।

ক্লাব লাইসেন্স পাওয়া আরেক বাংলাদেশি ক্লাব বসুন্ধরা কিংস
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

বেশির ভাগ শর্ত পূরণ করার আগ্রহই নেই দেশের অধিকাংশ ক্লাবের। এ ছাড়া ফুটবল ব্যবস্থাপনা জানা দক্ষ জনবলের অভাব থাকায় অনেক সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে পারে না ক্লাবগুলো। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের ক্লাবগুলো এ জায়গাতে এগিয়ে। শ্রীলঙ্কা থেকে ১৩টি, ভুটানের ৪টি এবং ভারত ও নেপাল থেকে ৩টি করে ক্লাব পেয়েছে এএফসি কাপের লাইসেন্স। ভারতের আইএসএলে খেলা ক্লাবগুলোর চোখ অবশ্য এখন এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগে। তাই ভারত থেকে এএফসি কাপের লাইসেন্স পেতে আবেদন করেছিল মূলত দ্বিতীয় স্তরের ক্লাবগুলো।

ভারতের মতোই বাংলাদেশের প্রতিবেশী অনেক দেশের ক্লাবেরই চোখ এখন এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগে। সেখানে এর পরের ধাপ এএফসি কাপে খেলার শর্ত পূরণ করতেই ব্যর্থ বাংলাদেশের বড় ক্লাবগুলো। লাইসেন্সের অভাবে এএফসি কাপের প্লে-অফে সুযোগ না পাওয়া প্রসঙ্গে শেখ জামালের ম্যানেজার আনোয়ারুল করিম হেলাল বলেছেন, ‘সময়মতো আমরা কাগজপত্র জমা দিতে পারিনি। পরে জমা দিলেও এএফসি গ্রহণ করেনি।’ এর আগে একবার এএফসি কাপ থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিল ক্লাবটি।

মোহামেডান কাগজপত্রই ঠিকমতো পাঠাতে পারেনি
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

এএফসির মানদণ্ড পূরণ করতে ব্যর্থ মোহামেডানের মতো ঐতিহ্যবাহী ক্লাবও। এর পেছনে ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ নকিবের ব্যাখ্যা, ‘আমরা ৮০ ভাগ কাগজপত্র জমা দিয়েছিলাম। এরপর যখন দেখলাম লিগে আমাদের অবস্থান ভালো না, বাকি কাজগুলো শেষ করা হয়নি। আসলে এই মানদণ্ড পূরণ করতে হলে অনেক অর্থের প্রয়োজন।’

কয়েক বছর ধরে বসুন্ধরার পৃষ্ঠপোষকতায় শেখ রাসেলের অর্থ নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নেই। কিন্তু খেলার মাঠে সেই প্রভাব চোখে পড়ে না। আগের বছর লাইসেন্স পেলেও এবার তারা ব্যর্থ। ক্লাবের ক্রীড়া পরিচালক সালেহ জামান সেলিমের দাবি, ‘এই বছর ভালো দল গঠন করতে গিয়ে আমরা এসব দিকে তেমন নজর দিতে পারিনি।’