প্রতিভা চাপা পড়ে থাকে না, চোখে পড়েই
গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের জাতীয় দলের কোচের পদ থেকে বিদায় নিয়েছেন জেমি ডে। ইংলিশ কোচ জেমি ডে বাংলাদেশের ফুটবলের ভবিষ্যৎ হিসেবে তিনজন ফুটবলারের নাম বলতেন। সেই তিন নামের একটি মেরাজ হোসেন।
কাল প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের তরুণ এই ফরোয়ার্ড। জেমি ডে যাঁকে ভবিষ্যতের জন্য পছন্দ করেছিলেন, বাংলাদেশের কোচ হিসেবে নিজের প্রথম দলেই সেই মেরাজকে ডেকেছেন স্প্যানিশ কোট হাভিয়ের কাবরেরা।
মেরাজ যে জেমি ডের পছন্দের খেলোয়াড়, সেটি কাবরেরার জানার কথা নয়। তবে প্রতিভা চাপা পড়ে থাকে না, জহুরির চোখে পড়েই। মেরাজের খেলা যে কাবরেরার মনে ধরেছে, তা বোঝা গিয়েছিল গত ১৩ ফেব্রুয়ারিই।
মুন্সিগঞ্জের ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র ও সাইফ স্পোর্টিংয়ের মধ্যকার ম্যাচটি সাংবাদিকদের সঙ্গে বসেই দেখছিলেন কাবরেরা। ম্যাচের বিরতিতে কাবরেরাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, মেরাজকে কেমন দেখছেন? ডান হাতে থাম্পস আপ চিহ্ন বানিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন মেরাজকে তাঁর মনে ধরেছে।
কাল তো তাঁর প্রথমবারের মতো ডাকা দলে দুই নতুন মুখের মধ্যে একজন বাংলাদেশ পুলিশ ফুটবল ক্লাবের লেফটব্যাক ঈশা ফয়সাল ও অন্যজন মেরাজ।
২০১৫ সালে সিলেটে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৬ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলের সদস্য ছিলেন মেরাজ। তাঁর ভালো গুণের আগে কিছু দোষের কথা আগে শোনা যাক।
সাইফের সাবেক বেলজিয়ামের কোচ পল পুট ও ইংলিশ কোচ স্টুয়ার্ট হল বলতেন, ‘মেরাজ অনুশীলনে যা খেলে, তার অর্ধেক ম্যাচে খেলতে পারলে অনায়াসে সেরা খেলোয়াড় হয়ে যাবে।’ অর্থাৎ অনুশীলন ম্যাচের পারফরম্যান্সের ছিটেফোঁটাও মেরাজ প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচে দেখাতে পারেন না। তবু যতটুকু পেরেছেন, তাতেই জাতীয় দলের জায়গা করে নিলেন বিকেএসপির সাবেক এই ছাত্র।
২০১৭ সালে বিকেএসপির কিছু খেলোয়াড় দলে টেনেছিল সাইফ। তখন থেকেই সাইফের সঙ্গে মেরাজের গাঁটছড়া সম্পর্ক। গত দুই মৌসুমে দলে অনিয়মিত মেরাজ এবারের মৌসুমে হয়ে উঠেছেন সাইফের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়।
শুরুতে প্রথাগত ফরোয়ার্ড হিসেবে খেললেও এখন ভূমিকা বদলে আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে খেলেন মেরাজ। তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ সৃষ্টিশীলতা। স্ট্রাইকারের পেছন থেকে আক্রমণটা তৈরি করতে পারেন। দুর্দান্ত গতির সঙ্গে বলের ওপর আছে দারুণ নিয়ন্ত্রণ। লিগে ৫ ম্যাচ খেলে গোল ১টি।
কাল মেরাজ প্রথম আলোকে বলছিলেন, ‘জাতীয় দলে ডাক তো পেলাম। এখন মূল দলে জায়গা করে নিতে হবে।’ তাঁর মূল দল বলতে প্রথম একাদশ আর সে জন্য প্রচুর লড়াই করতে হবে, সেটি তাঁর ভালো করেই জানা।
মেরাজের জাতীয় দলে আসার পেছনে ‘জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার’ একটা গল্পও আছে। প্রথমবারের মতো জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া খেলোয়াড়ের আবার বাদ পড়ার গল্প এল কোথা থেকে?
গত সেপ্টেম্বরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য ৩০ সদস্যের একটি দল তৈরি করেছিলেন জেমি ডে। সেটি ঘোষণা না করেই খেলোয়াড়দের ডেকে তোলা হয়েছিল পাঁচতারকা হোটেলের ক্যাম্পে। জেমি বিদায় নিলে সে দলটা আর ঘোষণা করা হয়নি।
অন্তর্বর্তীকালীন কোচ অস্কার ব্রুজোন ২৬ সদস্যের দল ঘোষণা করলেন, সেখানে নাম ছিল না মেরাজের। তাই পরের দিন সকালেই হোটেল ছাড়তে বলা হয় তাঁকে। সেই থেকে মেরাজের জেদ, ‘হোটেলে উঠিয়ে হোটেল ছাড়ার ঘটনা আমি কোনো দিনও ভুলব না। পরে জাতীয় দলে খেলাটাকে আমি জেদ হিসেবে নিয়েছি।’
মেরাজের মতোই বয়সভিত্তিক জাতীয় দলে খেলেছেন ঈশা। ২০১৭ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ ও গত বছর খেলেছেন অনূর্ধ্ব-২৩ দলে। ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশ পুলিশে কনস্টেবল হিসেবে চাকরির সঙ্গে খেলছেন দলটির হয়ে।
রক্ষণভাগ সামলে ওভারল্যাপ করে ওপরে উঠে গোলমুখে ভালো ক্রস করতে জুড়ি নেই ঈশার। তাই পুলিশের রোমানিয়ান কোচ আরিস্তিকা সিওবা বর্তমানে তাঁকে খেলাচ্ছেন লেফটউইঙ্গার হিসেবে। গোলও করিয়েছেন দুটি।
কাল ঈশা বলছিলেন, ‘ম্যাচ খেলে জাতীয় দলে ডাক পাওয়াটা স্মরণীয় করে রাখতে চাই। বিশ্বাস আছে, কোচ সুযোগ দিলে সেটা কাজে লাগাতে পারব আমি।’ একাদশে জায়গা করে নিতে তাঁকে লড়াই করতে হবে ইয়াছিন আরাফাত, রিমন হোসেনদের সঙ্গে।