নেইমার ও দোন্নারুম্মার মধ্যে প্রায় মারামারি লেগে গিয়েছিল
পাড়ার খেলায় এমন হতে পারে। তাই বলে ইউরোপের সবচেয়ে অভিজাত ক্লাব টুর্নামেন্টেও?
নেইমার ও জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মার ঘটনা জানার পর এমন প্রশ্ন জাগতেই পারে। তাই বলে পিএসজির দুই তারকাকে কি দোষ দেওয়া যায়? হাজার হোক স্বপ্নভঙ্গ তো! পাড়ার ফুটবল কিংবা ইউরোপের ময়দান—হেরে বিদায় নেওয়ার কষ্ট কি খুব আলাদা?
কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখে আসছে পিএসজি। কিন্তু সেই পথে এবারও স্বপ্নটা ভেঙে খান খান হলো। তাতে খেলোয়াড়দের নিজেদের ভুলভ্রান্তি নিয়ে কথা-কাটাকাটি কিংবা হাতহাতির পর্যায়ে চলে যাওয়া এমন অস্বাভাবিক কিছু নয়।
চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলো থেকে কাল রাতে ছিটকে পড়ার পর পিএসজির ড্রেসিংরুমে এমন ঘটনারই অবতারণা করেন নেইমার ও দোন্নারুম্মা। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘মার্কা’ জানিয়েছে, ফিরতি লেগে রিয়ালের কাছে ৩-১ গোলে হারের পর ড্রেসিংরুমে একে অপরের ওপর দোষ চাপানো শুরু করেন দুই সতীর্থ। হাতাহাতি শুরু হয়ে যেত যদি বাকিরা এসে তাঁদের আলাদা না করতেন।
প্রথম লেগে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকার সুবিধা নিয়ে ফিরতি লেগে ৩৯ মিনিটে ২-০ করে ফেলে পিএসজি। কিলিয়ান এমবাপ্পে গোলটা করেন নেইমারের পাস থেকেই। কিন্তু বিরতির পর পিএসজি গোলকিপার দোন্নারুমার ভুলে করিম বেনজেমার করা গোলে লড়াইয়ে ফিরে আসে রিয়াল। শেষ পর্যন্ত পিএসজিকেই হার মানতে হয়!
কোয়ার্টার ফাইনালের স্বপ্ন চোখে মেখে মাঠে নামার পর তা এভাবে দুঃস্বপ্নে পরিণত হলে যে কারও মেজাজ ধরে রাখাই কঠিন। সেখানে নেইমারের পরিস্থিতি তো আরও কঠিন। ২০১৭ সালে পিএসজি তাঁকে দলবদলের বাজারে বিশ্ব রেকর্ড গড়ে দলে টেনেছে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততেই। শিরোপাটা এবারও অধরা থেকে যাওয়ায় ম্যাচ শেষে দোন্নারুমার ওপর ঝাল ঝাড়েন ব্রাজিল তারকা।
৬১ মিনিটে পিএসজি বক্সে বল পায়ে সতীর্থকে পাস দিতে একটু দেরি করে ফেলেছিলেন দোন্নারুমা। তাঁর কাছ থেকে একটু কঠোরভাবেই বল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন বেনজেমা। দোন্নারুমা এই চাপ সামাল দিতে পারেননি।
গোলপোস্ট ছেড়ে ডানে দাঁড়িয়ে থাকা পিএসজি গোলকিপার ভড়কে গিয়ে অরক্ষিত পোস্টের সামনে দিয়ে বাঁ প্রান্ত বল মেরে ‘ক্লিয়ার’ করার চেষ্টা করেন। বাঁ প্রান্তে মাঠের এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকা আশরাফ হাকিমিকে বলটা দিতে চাইলেও পাসটা ঠিকভাবে দিতে পারেননি দোন্নারুমা। এ–ই সুযোগ—বুঝতে পেরে ভিনিসিয়ুস দৌড়ে বলের দখল নিয়ে পাস দেন বেনজেমাকে। বাকি কাজটা সারতে ফরাসি ফরোয়ার্ডের এতটুকু সমস্যা হয়নি।
মার্কা জানিয়েছে, ম্যাচ শেষে পিএসজির ড্রেসিংরুমে ওই গোলের জন্য দোন্নারুম্মাকে সরাসরি দোষারোপ করেন নেইমার। গত বছরই ইউরোয় দারুণ গোলকিপিং করে শিরোপাজয়ী ইতালিয়ান এই গোলকিপার ছেড়ে কথা বলবেন কেন!
নেইমারকে তিনি মনে করিয়ে দেন, রিয়ালের দ্বিতীয় গোলের উৎস ছিল ব্রাজিলিয়ান তারকার ভুল। লুকা মদরিচের কাছে বল হারান নেইমার। এরপর ক্রোয়াট তারকার পাস থেকে বেনজেমার গোল।
দোন্নারুম্মার পাল্টা অভিযোগের প্রতিবাদ করেন নেইমার। এভাবে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে দুই খেলোয়াড় হাতাহাতির মতো পরিস্থিতিতে চলে যান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি আরও খারাপ দিকে গড়ায়নি। সতীর্থরা এসে দুজনকে আলাদা করেন।
যদিও এবারের বিদায়ে পিএসজিতে পরিস্থিতি শান্ত থাকবে না বলে মনে করছেন অনেকেই। কোচ মরিসিও পচেত্তিনো এবং পরিচালক লিওনার্দোকেও বিদায় করে দেওয়া হতে পারে, গুঞ্জন উঠেছে সংবাদমাধ্যমে।