‘আমার চোটের জন্য কমলাপুরের মাঠ শতভাগ দায়ী’
বিদায়বেলায় প্রথম আলোর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে নিজের কষ্ট ও বাংলাদেশে ভালো লাগার গল্পগুলো ভাগাভাগি করলেন ব্রাজিলের বিখ্যাত বোতাফোগো ক্লাবের ‘গ্র্যাজুয়েট’জোনাথন
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে খেলতে আসা অন্যতম সেরা বিদেশি ফুটবলার বসুন্ধরা কিংসের ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার জোনাথন ফার্নান্দেজ। ২০২০ সালে প্রথমবার বাংলাদেশে এসে জিতেছেন একটি করে প্রিমিয়ার লিগ ও ফেডারেশন কাপের শিরোপা।
চলতি মৌসুমের শুরুতেই গত ডিসেম্বরে স্বাধীনতা কাপে ডান পায়ের হাঁটুর লিগামেন্টের চোট মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেয় তাঁকে। শেষ পর্যন্ত ১ মার্চ বাংলাদেশ ছাড়ছেন কিংসের জার্সিতে ৩৪ ম্যাচ খেলে ১৩ গোল করা জোনাথন।
বিদায়বেলায় প্রথম আলোর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে নিজের কষ্ট ও বাংলাদেশে ভালো লাগার গল্পগুলো ভাগাভাগি করলেন ব্রাজিলের বিখ্যাত বোতাফোগো ক্লাবের ‘গ্র্যাজুয়েট’জোনাথন:
প্রশ্ন :
প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা ধরে রাখার লড়াইয়ে দলের সঙ্গেই থাকার কথা ছিল আপনার। উল্টো চোট নিয়ে বাংলাদেশ ছাড়তে হচ্ছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে আপনি খুব হতাশ। তারপরও মনের অনুভূতি জানতে চাইছি...
জোনাথন ফার্নান্দেজ: ফুটবল ক্যারিয়ারে এবারই সবচেয়ে বড় চোট পেয়েছি। প্রথমবারের মতো অস্ত্রোপচারও করাতে হচ্ছে। সেটা ব্রাজিলে গিয়ে করব। আমার এই চোটের জন্য ঢাকার কমলাপুর স্টেডিয়ামের বাজে মাঠই শতভাগ দায়ী। শুধু আমি নই, প্রতিটি খেলোয়াড়ই বলবেন মাঠটি খুব খারাপ। এ ধরনের মাঠে ফুটবল খেলা উচিত নয়। ভালো ফুটবল খেলা দূরের কথা, এখানে চোটের শঙ্কা থাকে প্রবল।
প্রশ্ন :
অস্ত্রোপচার করিয়ে এবং পুনর্বাসন শেষে কিংসের জার্সিতে মাঠে ফিরতে ফিরতে হয়তো এ মৌসুম শেষ হয়ে যেত। কিংসের সঙ্গে আপনার চুক্তি শেষ নভেম্বরে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকেই মনে করছেন, বাংলাদেশ থেকে এটাই আপনার শেষ যাওয়া! আর কি ফেরার সম্ভাবনা আছে?
জোনাথন: ভবিষ্যতের কথা বলতে পারছি না। আমার এখন সব মনোযোগ অস্ত্রোপচার করিয়ে কীভাবে পুনর্বাসন শেষে মাঠে ফিরব, তা নিয়ে। অবশ্য আমি আশায় আছি, পরবর্তী মৌসুমে আমাকে আবার বাংলাদেশে দেখা যাবে।
প্রশ্ন :
চলতি প্রিমিয়ার লিগে কিংসের মাঝমাঠে আপনার অভাব ফুটে উঠেছে। কী মনে হয়, কিংস লিগ শিরোপা ধরে রাখতে পারবে তো?
জোনাথন: আমার না থাকাটা সমস্যা নয়। আমাদের দলটা অনেক শক্তিশালী এবং শিরোপা ধরে রাখার আত্মবিশ্বাস আছে। তবে এরই মধ্যে লিগে আমরা খুব প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখতে পাচ্ছি। ভালো খেলোয়াড় এনে প্রতিটি দলই শক্তিশালী হয়েছে। প্রতিটি দলের জন্যই এই মৌসুমটি খুব কঠিন হবে।
প্রশ্ন :
গত লিগে ২১ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন আপনারই স্বদেশি রবসন দা সিলভা। যাঁর বেশির ভাগ গোলের কৃতিত্ব আপনারই। অনেকের মতে, আপনি নেই বলে রবসনের এবার গোলের সংখ্যা অনেক কমে যাবে...
জোনাথন: রবসনের গোলে কৃতিত্ব রাখতে পেরেছি শুনে ভালো লাগছে। তবে আমি না থাকায় ওর গোল কমে যাবে বলে মনে করি না। রবসন অনেক বড় মাপের খেলোয়াড়। আমি নিশ্চিত ওর এই মৌসুমটাও দুর্দান্ত যাবে। আমার তো মনে হয় আগের লিগের চেয়ে এবার সে বেশি গোল পাবে। ওর ওপর আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে।
প্রশ্ন :
আপনি তো বোতাফোগে ক্লাবের ‘গ্র্যাজুয়েট’। সে জীবনটা কেমন ছিল?
জোনাথন: বোতাফোগো ব্রাজিলের অন্যতম সেরা একটি ক্লাব। এই বছর ওরা কাভানিকে কেনার চেষ্টা করছে। ক্লাবটির সঙ্গে আমার ১৫ বছরের সম্পর্ক। সেখানে ব্রাজিল জাতীয় দলের গোলকিপার জেফারসন, বার্সেলোনায় খেলা মিডফিল্ডার ম্যাথিউজ ফার্নান্দেজের সঙ্গে আমার খেলার সুযোগ হয়েছে। আমার স্ত্রীও বোতাফোগোর ক্লাবের বিপণনব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
প্রশ্ন :
প্রশ্ন: এখানে আসার আগে আপনি শুধু ব্রাজিলের ক্লাবগুলোতেই খেলেছেন। বসুন্ধরা কিংস ও বাংলাদেশ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন?
জোনাথন: আমার ক্যারিয়ারে অন্যতম বড় একটি ক্লাব বসুন্ধরা। এখানে দুটি শিরোপা জিতেছি। বোতাফোগো ও বসুন্ধরার সুযোগ–সুবিধা প্রায় একই রকম। ভালো অনুশীলন মাঠের সঙ্গে ভালো আবাসনব্যবস্থা। ভালো সতীর্থ খেলোয়াড়, দারুণ কোচিং স্টাফ। সর্বশেষ এএফসি কাপে আমরা দেখিয়েছি বসুন্ধরা কত শক্তিশালী দল।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা পরবর্তী রাউন্ডে যেতে পারিনি। যা–ই হোক এখানে প্রতিটি দিনই আমার খুব ভালো কেটেছে। এখানে খেলতে পেরে গর্বিত। একটা পরিবারের মতো ছিলাম আমরা। খুব আনন্দ করেছি। মাঝে মাঝে বিরিয়ানি খেয়েছি। বাংলাদেশের মানুষ খুবই ভালো, উপকারী। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশ খুব ভালো লেগেছে।
প্রশ্ন :
বাংলাদেশের ফুটবল কেমন দেখলেন?
জোনাথন: ভালোই বলব। মূল সমস্যাটা হলো মাঠ। ভালো ফুটবল খেলার জন্য ভালো মাঠের কোনো বিকল্প নেই। ভালো খেলা না হলে দর্শকেরাও আগ্রহী হবেন না। এই জায়গাটিতে অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
প্রশ্ন :
প্রশ্ন: ব্রাজিল মানেই ফুটবলের দেশ। আপনার ফুটবলে আসা কীভাবে?
জোনাথন: আমার জন্ম রিও ডি জেনিরোতে। ৭ বছর বয়স থেকে বড় ভাইয়ের সঙ্গে ফুটবল খেলতে শুরু করি। অবশ্য পরে ভাই ফুটসাল বেছে নেন। ছোটবেলায় রোনালদো বা রোনালদিনহোর মতো হতে চাইতাম। রোনালদোর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ হলেও রোনালদিনহোর সঙ্গে কখনো দেখা হয়নি।