ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা দল কোনটি—এ প্রশ্নের উত্তরে অস্ট্রেলিয়ার নাম বলতে কারও মনে দ্বিধা থাকার কথা নয়। একটা দলের পক্ষে সম্ভাব্য যা কিছু জেতা সম্ভব, সবই জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। অপ্রাপ্তি বলতে ছিল শুধু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ২০২১ আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেই শূন্যতাও পূরণ করতে পেরেছে তারা।
তবু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে একটা আক্ষেপ রয়েই গেছে অস্ট্রেলিয়ার। সেটা কী? এখন পর্যন্ত এই সংস্করণের বিশ্বকাপে সব আসরে খেলেছে—এমন দলগুলোর মধ্যে সেঞ্চুরি নেই শুধু অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের। ২০২১ সালে শিরোপা জয়ের বছরেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ডেভিড ওয়ার্নারের অপরাজিত ৮৯ রানের ইনিংসটাই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর কিছু রান করতে পারলে অস্ট্রেলিয়ানদের আক্ষেপটা হয়তো সেদিনই ঘোচাতে পারতেন ওয়ার্নার। ১৫৮ রানের লক্ষ্যটা যে ২২ বল বাকি থাকতেই পেরিয়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া!
২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসর বসেছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়। এবার নবম আসর চলছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ-যুক্তরাষ্ট্রে। ৯ আসরেই খেলা দলের সংখ্যাটাও ৯টি। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাকি ৮ দল বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকা। এই ৮ দলের ব্যাটসম্যানরাই সেঞ্চুরি পেয়েছেন। এখন পর্যন্ত ৪৩ ম্যাচ খেলেও তিন অঙ্কের দেখা পাননি শুধু অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যান।
বাংলাদেশ এই কীর্তি গড়েছে অস্ট্রেলিয়ার ৪৩-এর প্রায় অর্ধেক ২১তম ম্যাচ খেলতে নামার দিনেই। ব্যাটসম্যানের নাম, ভেন্যু, প্রতিপক্ষের নাম নিশ্চয় মনে করতে পারছেন। ২০১৬ আসরে ধর্মশালায় ওমানের বিপক্ষে তামিম ইকবালের অপরাজিত ১০৩। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বলে দেওয়া তামিম সেদিন বাংলাদেশের ইনিংসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খেলেছিলেন।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ৮ দলের ১০ জন ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করেছেন। তবে সেঞ্চুরির সংখ্যা ১১টি। দুটি সেঞ্চুরি আছে শুধু ক্রিস গেইলের। ক্যারিবীয় এই কিংবদন্তি ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম ম্যাচেই স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলেছিলেন ১১৭ রানের ইনিংস, ২০১৬ আসরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০০ রানে অপরাজিত থেকে জিতিয়েছিলেন দলকে।
দলগুলোর মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছাড়া দুটি করে সেঞ্চুরি আছে দুটি দলের—ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। তবে ইংলিশ ও কিউইদের হয়ে সেঞ্চুরি করেছেন আলাদা ৪ জন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড প্রথম সেঞ্চুরির স্বাদ পায় ২০১৪ সালে চট্টগ্রামে অ্যালেক্স হেলসের সৌজন্যে, পরের সেঞ্চুরিটি ২০২১ সালে শারজায় জস বাটলারের।
নিউজিল্যান্ডের হয়ে প্রথম এই কীর্তি গড়েন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। ২০১২ সালে পাল্লেকেলেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে তাঁর ৫৮ বলে ১২৩ রানের তাণ্ডবের দৃশ্য এখনো অনেকের মনে পড়ার কথা। কিউইদের পরের সেঞ্চুরি এসেছে গ্লেন ফিলিপসের হাত ধরে। তাঁর ১০৪ রানের ইনিংসটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সর্বশেষ সেঞ্চুরিরও নজির। বাকি ৪ সেঞ্চুরিয়ান হলেন ভারতের সুরেশ রায়না, পাকিস্তানের আহমেদ শেহজাদ, শ্রীলঙ্কার মাহেলা জয়াবর্ধনে ও দক্ষিণ আফ্রিকার রাইলি রুশো।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে দুই সেঞ্চুরি করে গেইল সবার চেয়ে ওপরে থাকলেও একটি দুঃখেরও সঙ্গী। সেঞ্চুরিয়ানদের মধ্যে শুধু তাঁরটিই যে বৃথা গিয়েছিল! ২০১৬ সালে অপরাজিত ১০০ রানের ইনিংস ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জয় এনে দিলেও ২০০৭ সালে ১১৭ রানের ইনিংসটা দলের জন্য যথেষ্ট ছিল না।
এখন পর্যন্ত ১০ সেঞ্চুরিয়ানের মধ্যে ব্যতিক্রম নিউজিল্যান্ডের গ্লেন ফিলিপস। শুধু তিনিই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি পেয়েছেন, বাকিরা সবাই টপ অর্ডারে নেমেছিলেন। ১১ সেঞ্চুরির মধ্যে ৫টিতে ব্যাটসম্যানকে আউট করা যায়নি।
অবশ্য সেঞ্চুরির এ তালিকায় বাংলাদেশের একটা নেতিবাচক দিক আছে। ১১ সেঞ্চুরির ৩টিই যে হয়েছে বাংলাদেশের বিপক্ষে। প্রতিপক্ষের ৩টি সেঞ্চুরি দেখেছে শ্রীলঙ্কাও, দুটি দক্ষিণ আফ্রিকা, একটি করে জিম্বাবুয়ে, ওমান ও ইংল্যান্ড।
আগের আট আসরের মধ্যে শুধু ২০০৯ সালে কোনো সেঞ্চুরি হয়নি। সেবার ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ছিল শ্রীলঙ্কার তিলকরত্নে দিলশানের অপরাজিত ৯৬।
এবারের আসরেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যাটসম্যান তিন অঙ্ক ছুঁতে পারেননি। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ অপরাজিত ৯৪ যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারন জোন্সের, ২ জুন আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে কানাডার বিপক্ষে। তবে এখনো যেহেতু ৩১ ম্যাচ বাকি, তাই সেঞ্চুরির হওয়ার পর্যাপ্ত সময় ও যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। আক্ষেপ ঘোচানোর সুযোগ আছে অস্ট্রেলিয়ারও। ওয়ার্নার–ম্যাক্সওয়েল–হেড–মার্শরা কি তা পারবেন?