ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে কম রানের লজ্জা কোহলিদের
অথচ দ্বিতীয় দিন শেষে মুখে চওড়া হাসিই ছিল কোহলিদের। পরের দিন সে হাসি মিলিয়ে যেতে সময় লাগল ঘন্টাখানেক!
দিবারাত্রির এই টেস্টের তৃতীয় দিন ৬২ রানে এগিয়ে থেকে শুরু করেছিল সফরকারীরা। দিনের শুরুতে হাতে ছিল এখনো ৯ উইকেট। ক্রিজে ছিলেন ওপেনার মায়াঙ্ক আগরওয়াল ও নাইটওয়াচম্যান যশপ্রীত বুমরা। ব্যাট করার জন্য তখনও অপেক্ষা করছিলেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি, চেতেশ্বর পূজারা, অজিঙ্কা রাহানের মতো ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু কীসের কি! সকালটা যে নিজের করে নেওয়ার জন্য পণ করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার পেসার প্যাট কামিন্স!
শেষ পর্যন্ত মাত্র ৩৬ রানেই গুটিয়ে গেছে ভারত। টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে কম রানে অলআউট হওয়ার নিউজিল্যান্ডের রেকর্ডটা (২৬ রান) ভারত পেরিয়ে গেছে বটে, তবে ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে কম রানে অলআউট হওয়ার রেকর্ডটা পেরোতে পারলেন না কোহলিরা।
এর আগে টেস্টে এক ইনিংসে ভারতের সবচেয়ে কম রানে অলআউট হওয়ার রেকর্ড ছিল ৪২ রানের। সেটি ছিল ১৯৭৪ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ডের কাছে।
ভারত অবশ্য অলআউট হয়নি। শেষ ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ শামি রিটায়ার্ড হার্ট হয়েছেন। তবু দিন শেষে লজ্জার রেকর্ডেই তো নামটা উঠছে কোহলিদের। ক্রিকেট ইতিহাস ঠিকই ভারতের সবচেয়ে কম রানে গুটিয়ে যাওয়ার রেকর্ডে এই ইনিংসকেই দেখাবে বারবার।
দিনের চতুর্থ বলেই মিচেল স্টার্ককে চার মেরে দিনটা নিজেদের করে নেওয়ার প্রত্যয় দেখিয়েছিলেন মায়াঙ্ক। কিন্তু কীসের কি! পরের ওভারে বল করতে এসেই নাইটওয়াচম্যান বুমরাকে ফেরান কামিন্স। কামিন্সের স্লোয়ার লেগ কাটারটা ঠিক ভালোভাবে বুঝে উঠতে পারেননি বুমরা। ক্যাচ দিয়ে বসেন কামিন্সকেই। ১৭ বল টিকেছেন এই পেসার, করেছেন দুই রান।
মায়াঙ্ককে সঙ্গ দিতে এর পরেই আসেন পূজারা। প্রথম ইনিংসে শ্লথগতির ব্যাটিং করে আবারও নজর কাড়া পূজারা এই ইনিংসে তেমন কিছুই করতে পারেননি। বলা ভালো, করতে দেননি কামিন্স। পূজারাকে এক রকম উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন এই পেসার। ৮ বল খেলে এক রানও করতে পারেননি পূজারা।
এরপর দলের হাল ধরতে নামেন কোহলি। অ্যাডিলেড টেস্টের পরেই সন্তানসম্ভবা স্ত্রী'র পাশে থাকতে ভারতে উড়াল দেবেন অধিনায়ক, সিরিজে তাই এটাই ছিল কোহলির শেষ ইনিংস। শেষ ইনিংসে দুটি রেকর্ড হাতছানি দিচ্ছিল কোহলিকে। ২০০৮ সাল থেকে প্রতি বছর অন্তত একটা সেঞ্চুরি করেছেন কোহলি। এ বছর করোনাভাইরাসের কারণে এমনিতেই ক্রিকেট সূচি সীমিত হয়ে পড়েছে অনেক, আর সেই সীমিত সূচিতেও শতক ছোঁয়া হয়নি কোহলির।
তবে সুযোগ যে একেবারেই শেষ ছিল, তা নয়। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করতে পারেননি, সত্তরের ঘরেই আটকে গিয়েছিলেন। তাই ২০০৮ সাল থেকে চলে আসা সেঞ্চুরির ধারায় ব্যাঘাত না ঘটানোর জন্য এই ইনিংসে একটা সেঞ্চুরি লাগতই। সেঞ্চুরিটা হলে সঙ্গে আরেকটা দুর্দান্ত রেকর্ডে নাম লেখাতে পারতেন ভারতের অধিনায়ক।
অ্যাডিলেড টেস্টে সেঞ্চুরি পেলে অধিনায়ক হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৪২টা সেঞ্চুরি হয়ে যেত কোহলির। অধিনায়ক হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির তালিকায় পন্টিংয়ের সঙ্গে ৪১টা সেঞ্চুরি নিয়ে শীর্ষে আছেন বিরাট কোহলি। সেঞ্চুরিটা হলে পন্টিংকে ছাড়িয়ে যেতেন।
দুই রেকর্ডের একটাও হয়নি। কামিন্সের বলে কভার ড্রাইভ করতে গিয়ে গালিতে ক্যামেরন গ্রিনের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ভারতের অধিনায়ক (৪ রান)। এর আগে জশ হ্যাজলউডকে দেখেছিলেন রাহানে ও মায়াঙ্কের উইকেট দুটি তুলে নিতে। তাই হয়তো এবার একটু মেরেই খেলতে চেয়েছিলেন কোহলি, লাভ হয়নি। দলকে আরও বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে আউট হয়ে গেছেন কোহলি।
কোহলির বদলে সিরিজের বাকি তিন টেস্টে অধিনায়কত্ব করতে যাওয়া রাহানে রানের খাতাই খুলতে পারেননি। হ্যাজলউডের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন। একই কাজ করেছেন মায়াঙ্কও। কোহলি আউট হওয়ার পর ফিরে গেছেন ঋদ্ধিমান সাহা ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনও। এ দুজনও হ্যাজলউডের শিকার। ভারতের কোনো ব্যাটসম্যানের স্কোর দুই অঙ্ক ছোঁয়নি।
হ্যাজলউড ৫ ওভারে মাত্র ৮ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন! ২১ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন প্যাট কামিন্স।