সেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ড ডাকছে কোহলিকে
প্রথম সন্তানের মুখ দেখার অনুভূতি কেমন? জিজ্ঞেস করতে পারেন বিরাট কোহলিকে। কন্যা ভামিকাকে দেখার অনুভূতি বাবা হিসেবে কোহলিও বলতে পারবেন না।
শব্দগুলো হয়তো কারও মুখেই ঠিকঠাক আসে না। অপূর্ণ মনে হয়। কোহলির নতুন এই জগতের বাইরে চিরা চেনা জগৎটা কিন্তু প্রাপ্তিতে ভরপুর। সামনেও তাঁকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে অনন্য এক প্রাপ্তি।
সেখানে আর কেউ নেই। কোহলি এত দিন যেখানে দাঁড়িয়ে, সেখানে তাঁর সঙ্গী শুধু রিকি পন্টিং। ভারতের সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়া সফরে তাদের সাবেক অধিনায়ককে তাঁর দেশের মাটিতেই পেছনে ফেলার সুযোগ পেয়েছিলেন কোহলি।
কিন্তু প্রথম সন্তানের মুখ দেখতে অ্যাডিলেড টেস্ট খেলেই দেশে ফিরে যান ভারত অধিনায়ক। অস্ট্রেলিয়ায় থাকলে বাকি তিন টেস্টেও নেতৃত্ব দিতেন ভারতকে। এই তিন টেস্টে সম্ভাব্য ৬ ইনিংসে কি একটি সেঞ্চুরি পেতেন না? নাহ, কোহলিকে নিয়ে এ প্রশ্ন তোলার অবকাশ সামান্যই।
কিন্তু যা হয়নি, তা নিয়ে কথা বলে আর কী লাভ! সামনে তাকানোই ভালো। চেন্নাইয়ে শুক্রবার চার টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে ভারত। ঘরের মাঠে এ টেস্টে কোহলির ব্যাট চওড়া হয়ে ওঠাই স্বাভাবিক।
এর সঙ্গে যোগ করুন সন্তানের মুখ দেখার প্রেরণা। ভামিকা যে তার বাবার ‘বাবা’ হয়ে ওঠার পর প্রথম টেস্ট থেকে একটা সেঞ্চুরি উপহার পাবে না, তা জোর দিয়ে বলবে কে! সেটি হয়ে গেলেই কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ড হয়ে যাবে কোহলির।
পন্টিং ও কোহলির অধিনায়ক হিসেবে সেঞ্চুরির সংখ্যা এখন সমান ৪১। কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে ব্যাটিংয়ে নেমে দুজনের গুণমান ও কার্যকারিতা স্বাভাবিকভাবেই বৈচিত্র্যপূর্ণ ও আলাদা।
অধিনায়ক কোহলি যে একদিন এ রেকর্ড ছাপিয়ে যাবেন, তা নিয়ে নিকট অতীতে কারও সন্দেহ থাকার কথা নয়। প্রশ্ন হলো, ভারত অধিনায়ক এই রেকর্ড ঠিক কতটা উঁচুতে তুলতে পারেন?
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার সোনালি এক দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন পন্টিং। ২০০২ থেকে ২০১২ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের ‘স্বর্ণযুগে’ নেতৃত্ব ছিল পন্টিংয়ের হাতে।
অন্তত পরিসংখ্যান তাঁকে ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা অধিনায়কদের কাতারে রাখবে। অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিং অর্ডারের ভিত ৩ নম্বর জায়গাটা ছিল তাঁর। অধিনায়ক পন্টিং তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৩২৪ ম্যাচে ৩৭৬ ইনিংসে করেছেন ৪১ সেঞ্চুরি। ৪৫.৫৪ গড়ে করেছেন ১৫৪৪০ রান।
কোহলি এখানে অনেকটা ব্যবধানে এগিয়ে। ২০১৩ থেকে ২০২০, এই ৭ বছরে ভারতের অধিনায়ক হিসেবে ১৮৮ ম্যাচ খেলেছেন কোহলি। ২১৮ ইনিংসে তাঁর ৪১ সেঞ্চুরির পথে ব্যাটিং গড় ৬৩.১৬। অধিনায়ক কোহলি রান করেছেন ১১ হাজার ৮১১।
অর্থাৎ ধারাবাহিকতায় পন্টিংয়ের তুলনায় এগিয়ে কোহলি। ৩২ বছর বয়সী এ ব্যাটসম্যান নিশ্চিতভাবেই আরও কয়েক বছর নেতৃত্ব দেবেন ভারতের। তখন এই রেকর্ড কোথায় তুলে থামবেন, কে জানে!
পন্টিং রানে ও ফিফটিসংখ্যায় এগিয়ে। তাঁর ১৫ হাজার ৪৪০ রানের রেকর্ড ভাঙতে কোহলির (১১ হাজার ৮১১ রান) সামনে এখনো অনেক পথ। তবে পন্টিংয়ের ৮৮ ফিফটি ও কোহলির ৪৭ ফিফটি বলে দেয় পঞ্চাশকে ১০০ বানানোর সামর্থ্যে কে এগিয়ে।
কোহলি এই সামর্থ্যে বলীয়ান হয়েই ১৩৬ ম্যাচ কম খেলে সেঞ্চুরির এই রেকর্ডে ধরে ফেলেছেন পন্টিংকে।
তবে পরিসংখ্যানের এক জায়গায় কোনো অবস্থাতেই পন্টিংয়ের পাশে বসতে চাইবেন না কোহলি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অধিনায়ক হিসেবে যুগ্মভাবে তৃতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যকবার শূন্য রানে আউট হয়েছেন পন্টিং—১৮ বার।
দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রায়েম স্মিথ তাঁর সমান আর ওপরের দুটি কাতারে থাকা তিনজনও খ্যাতিমান—অর্জুনা রানাতুঙ্গা (২০ বার), মাহেলা জয়াবর্ধনে (২০ বার) ও স্টিফেন ফ্লেমিং (২৭ বার)।
কোহলি আপাতত ১১। তাঁর ভক্তরাও জানেন এই সংখ্যা আর না বাড়াই ভালো।