শ্রমিক থেকে হ্যাটট্রিক–নায়ক এলিস
বাংলাদেশের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া শেষ পর্যন্ত তৃতীয় টি–টোয়েন্টি ম্যাচটি জিতে গেলে, এর চেয়ে স্মরণীয় অভিষেক আর কীই–বা হতে পারত নাথান এলিসের? অস্ট্রেলিয়ার হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কালই এলিসের অভিষেক হয়েছে।
অভিষেকেই দারুণ কীর্তি গড়লেন ২৬ বছর বয়সী পেসার। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথম বোলার হিসেবে অভিষেকে পেলেন হ্যাটট্রিকের দেখা।
অথচ বাংলাদেশে সিরিজ খেলতে এসে ধুঁকতে থাকা অস্ট্রেলিয়া দলে এতদিন এই এলিস ছিলেন রিজার্ভ বেঞ্চের খেলোয়াড়! পেসার রাইলি মেরেডিথের জায়গায় দলে ঢোকেন এলিস। বাইশ গজে প্রতিপক্ষের উইকেট পেতে কম লড়াই করতে হয়নি এলিসের। মিরপুরে কালও যেমন নিজের বোলিং স্পেলে একেবারে শেষ ওভারের শেষ তিন বলে এসে পেলেন উইকেট।
একে একে আউট করেন মাহমুদউল্লাহ, মোস্তাফিজুর রহমান ও মেহেদী হাসানকে। মাঠের লড়াই তো আছেই, এলিসের মাঠের বাইরের লড়াইটাও মোটেও সহজ ছিল না।
জীবনযুদ্ধে লড়াই করতে করতে একসময় খেলাই ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন এলিস। সময়টা ২০১৭। নিউসাউথ ওয়েলস প্রিমিয়ার ক্রিকেটে এর আগের ৪ মৌসুমে নেন ১৬০ উইকেট। এরপর আরও ভালো কিছু করার আশায় চলে যান হোবার্টে।
কিন্তু সংসারে অভাবের কারণে পুরোটা সময় ক্রিকেটে দিতে পারতেন না। এমনও দিন গেছে, নিজের গাড়ির তেল কেনার মতো অর্থও থাকত না! ওই সময় বাড়তি আয়ের জন্য বেছে নেন নানা রকমের শ্রমিকের কাজ।
কখনো ফার্নিচার তোলা ও নামানোর কাজ করতেন, কখনো ছবি আঁকতেন। কখনোবা বাসাবাড়িতে, অফিসে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র লাগানোর কাজ করেছেন। কখনো করতে হয়েছে নির্মাণশ্রমিকের কাজ। সেন্ট ভার্জিলস কলেজের সহকারী শিক্ষকের কাজ নেওয়ার আগপর্যন্ত রীতিমতো শ্রমিকের জীবন ছিল এলিসের।
২০১৮ সালে এলিস খেলেন বিগ ব্যাশের দল হোবার্ট হ্যারিকেনের হয়ে। এরপর খেলেন তাসমানিয়া ক্রিকেট দলে। কিন্তু এলিসের মৌসুম শুরুই হয়েছিল অনিশ্চয়তায়। না ওয়ানডে, না টি-টোয়েন্টি—কোনো ফরম্যাটেই তাঁর সঙ্গে পেশাদার চুক্তি করেনি কোনো ক্লাব। হতাশায় একটা সময় ক্রিকেট ছেড়ে নিজের শহর সিডনিতে ফিরে যাওয়ার চিন্তা করেন এলিস। এরপরই তাঁকে সুযোগ দেন তাসমানিয়ার কোচ অ্যাডাম গ্রিফিথ।
ওই সময় লিগে তাসমানিয়াকে জেতাতে নিয়মিতই ভূমিকা রাখতেন এলিস। এমনই একটা ম্যাচ জয়ী বোলিংয়ের পর বলছিলেন, ‘দলে আমার ভূমিকা নিয়ে সম্প্রতি কিছু লোকের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা শুধু বলেছে, তুমি যা করছ সেটাই করে যাও। এই সব ওভারে যেমন ভালো বল করেছ, এর চেয়েও বাজে দিন গেছে তোমার।’
কোচ তাঁর ওপর যে আস্থা রেখেছিলেন, সেটাই বলছিলেন এলিস, ‘আমি শুধু শান্ত থেকে নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি এবং শেষ পর্যন্ত আমরা বেশ কিছু ভালো ম্যাচ খেলেছি, বেশ কিছু ভালো জয়ও পেয়েছি।’
ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করার ফল অবশেষে পেয়েছেন এলিস। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অভিষেকের টুপি মাথায় তুলতে পেরেছেন। গায়ে পরেছেন অস্ট্রেলিয়ান জার্সি।
বাংলাদেশের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করার আগে কাল নিজের ৪ ওভারে এলিস দেন ৩৪ রান। কিন্তু উইকেট না পেলেও কখনো হাল ছাড়েননি। খেলাটা যে এলিস মনপ্রাণ দিয়ে উপভোগ করেন, সেটাই বলছিলেন, ‘বল করার সময় সত্যি খুব চাপে থাকি। কিন্তু যতটা পারি শুধু বোলিংটাই উপভোগ করার চেষ্টা করি।’
বোলিংটা তো উপভোগ করেনই এলিস, পাশাপাশি কালকের রাতটাও নিশ্চয় আরও উপভোগ্য হতো এলিসের, যদি জয়ী দলের নাম হতো অস্ট্রেলিয়া।