শেষের শুরুতে রেকর্ড থেকে গেইল এক ছক্কার দূরত্বে
>বিদায়ের বেহাগটা গেইল বাজিয়ে দিয়েছেন আগেই। সেই কবেই বলে দিয়েছেন—এই বিশ্বকাপ খেলেই বিদায় বলব আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে। গেইল যে বেহাগ বাজিয়ে দিয়েছেন, সেটি আজ তীব্রভাবে লাগবে তাঁর ভক্তদের কানে। এটাই যে শেষের শুরু গেইলের। আর এই শেষের শুরুর মঞ্চে একটি ছক্কা মারলেই রেকর্ড গড়বেন ‘ইউনিভার্স বস’
হৃদয়ের মাঝে একটু কি ফাঁকা ফাঁকা লাগবে তাঁর জন্য! যেমন একটা শূন্যতা ভর করে ছোট্টবেলায় পাড়ার সেই বায়োস্কোপওয়ালা বা সুর বাজিয়ে খেলনা বিক্রি করা সেই ফেরিওয়ালার কথা মনে পড়লে! ক্রিস গেইলও তো একজন ফেরিওয়ালা! ক্রিকেট-বিশ্ব তাঁকে চেনে টি-টোয়েন্টির ফেরিওয়ালা হিসেবে। আসলে তো তিনি ক্রিকেটানন্দ ফেরি করে বেড়ানো এক নিখাদ বিনোদনদায়ী! ব্যাটটি যেন তাঁর জাদুর কাঠি। যেটির পরশে বেরিয়ে আসে দর্শনীয় চার আর বড় বড় সব ছক্কা। সেই চার আর ছক্কার লহরিতে আনন্দের হুল্লোড় ওঠে গ্যালারিতে, বাড়ির টিভি রুমে।
ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক মঞ্চে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের পর আর কোনো জাদু দেখাবেন না বিনোদনের এই ফেরিওয়ালা। এমন একজন জাদুকরকে আর দেখা যাবে না—এটা মনে হলে হৃদয়ের মাঝে একটা শূন্যতা কি ভর করবে না! বিদায়ের বেহাগটা গেইল বাজিয়ে দিয়েছেন আগেই। সেই কবেই বলে দিয়েছেন—এই ২০১৯ বিশ্বকাপ খেলেই বিদায় বলব আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে। গেইল যে বেহাগ বাজিয়ে দিয়েছেন, সেটি আজ তীব্রভাবে লাগবে তাঁর ভক্তদের কানে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জাতীয় সংগীতটাকে হয়তো অনেকের কাছেই মনে হবে বিদায়ের করুণ রাগ। এটাই যে শেষের শুরু গেইলের।
কে জানে আবেগ হয়তো ভর করবে গেইলের ওপরও। বেদনাতুর সেই মুহূর্তে দুচোখের কোণে দুফোঁটা জলও হয়তো জমবে! না, জাতীয় সংগীতের আবেগ, জাতীয় পতাকার পতপত আর গ্যালারির কোলাহলে সে জলকণা কারও চোখে পড়বে না। গেইল হয়তো হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছবেন না। কিন্তু অদৃশ্য সেই জলকণায় অনেকেই হয়তো গেইলের ক্যারিয়ারটা দেখতে পাবেন। ভেসে উঠবে কী অবলীলায় বিশ্বের বড় বড় বোলারকে সীমানা ছাড়া করছেন। ডেল স্টেইনকে হয়তো উড়িয়ে মারছেন লং অন অথবা ব্রেট লিকে মিড উইকেট দিয়ে। গতিদানব শোয়েব আখতারও অসহায় হয়ে পড়তেন গেইলের ছক্কাবাজির সামনে!
ছক্কা নিয়ে এত বলার কারণ একটাই—এখন গেইল আর ছক্কা যেন সমার্থক! সব ধরনের ক্রিকেট মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি ৫১৭টি ছক্কা মারার রেকর্ডটা তাঁরই। আজ পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি ছক্কা মারলেই বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ছক্কার মালিক হবেন গেইল। আপাতত সমান ৩৭টি করে ছক্কা মেরেছেন গেইল ও এবি ডি ভিলিয়ার্স। উইন্ডিজ বোর্ডের সঙ্গে ঝামেলার কারণে ২০ বছরের ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত গেইলের টেস্ট খেলার সংখ্যা ১০৩, ওয়ানডে ২৮৯। এর মধ্যেই টেস্টে পেরিয়েছেন ৭ হাজার রানের মাইলফলক, ওয়ানডেতে ১০ হাজার। যে সংস্করণে তাঁর খ্যাতি বিশ্বজোড়া, সেই টি-টোয়েন্টির বিশ্বকাপ জিতেছেন দুটি।
ওয়ানডে বিশ্বকাপে সেদিক থেকে তাঁর তেমন প্রাপ্তি নেই। গেইলের বিশ্বকাপ অভিষেক ২০০৩ সালে। সেই থেকে খেলেছেন চারটি বিশ্বকাপ। প্রথম দুটিতে তো ওয়েস্ট ইন্ডিজ নকআউট পর্বেই উঠতে পারেনি। পরের দুবার ছিটকে গেছে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে। কিন্তু এরই মধ্যে গেইল বিশ্বকাপে খেলে ফেলেছেন ২৬টি ম্যাচ। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৫টি সেঞ্চুরির ২টি বিশ্বমঞ্চে। তবে ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ইনিংসটি এখানেই, গত বিশ্বকাপে ক্যানবেরায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২১৫। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ডাবল সেঞ্চুরি দর্শন এটাই প্রথম।
এবার অবশ্য বিশ্বকাপ না জেতার আক্ষেপটা দূর করতে চান গেইল। শেষটা রাঙাতে চান শিরোপার সোনালি রঙে। চিরকালীন বিনোদনদায়ী গেইল সেটা নিজের চেয়েও বেশি চাইছেন সমর্থকদের আনন্দে ভাসাতেই, ‘এটা আমার শেষ বিশ্বকাপ। আমি মাথা উঁচু করে শেষ করতে চাই। নিজের সেরাটা দেব...আমরা (ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইতিহাসে) তৃতীয় বিশ্বকাপ জিততে চাই। যেখানেই যাই মানুষ আমাকে বলে, “ক্রিস গেইল, আমরা তোমাকে ভালোবাসি।” আমরা ভক্তদের বিনোদন দিতে চাই। আমি ভক্তদের জন্যই খেলি।’
যে ভক্তদের এত ভালোবাসেন, যাঁদের এত দিন ধরে এত বিনোদন দিয়ে গেছেন; গেইলের বিদায়ে সেই ভক্তদের বুকে হাহাকার তো উঠবেই!