এবারের বিশ্বকাপ শুরুরও আগে থেকে আমার দুটি লিস্টি তৈরি ছিল মনে মনে। বাংলাদেশ দলের শক্তিমত্তা দেখেই যে ধারণাপ্রসূত সেই লিস্টি, তা বলা বাহুল্য। বাংলাদেশ দল কাকে কাকে ধরাশায়ী করবেই এবং কোন কোন দলকে ধরলেও ধরতে পারে—এই রকমের দুটি লিস্ট।
ধারণায় ছিল শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানকে হারানো কোনো ব্যাপারই নয়। প্রথম লিস্টটা এই রকমের। দ্বিতীয়টি দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড ও ভারতকে নিয়ে। অন্যগুলো অর্থাৎ অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডকে নিয়ে কিছু ভাবিনি। ধরেই নিয়েছিলাম যে এই দুটি দল শক্তিমত্তার দিক দিয়ে দুই রকমভাবে পোক্ত। অস্ট্রেলিয়া তো বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলা পেলেই গা–ঝাড়া দিয়ে অন্য রকম হয়ে যায়। আর ইংল্যান্ড তো স্বাগতিক দেশ।
শুরুটা তো ভাবনায় না থাকা দক্ষিণ আফ্রিকাকে ঘায়েল করা দিয়ে ঘটল। অতএব ইচ্ছা এবং আশা যুক্ত হয়ে ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনাটা কল্পনাতীত পর্যায়ে গেঁথে গিয়েছিল এমনই যে অনেক ওপরে ওঠার সময় বুঝি এসে গেছে এ বছরই। পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার মতো আমাদেরও অভাবনীয় কাপ জয়ের বুঝি ভাগ্য এসেই গেছে নির্ঘাত। তিনটি জয় দিয়ে এবং বৃষ্টির কারণে বাতিল হওয়ায় একটিতে ফাউ ১ পয়েন্ট পাওয়ার মধ্য দিয়ে ৭-এ এসে থেমে গেল সব। প্রথম পর্ব থেকে আউট হলেও নিশ্চিত ছিলাম যে নানান সমীকরণে পড়ে যাওয়া মোটামুটি খাটাখাটনি করে এগিয়ে চলা সাধারণ মানের পাকিস্তানকে পরাজিত করে পঞ্চম স্থানটা ধরে রাখবে আমাদের দল। খেলার আগমুহূর্তেও তেমনই ভেবেছিলাম। কারণ, পুরো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়েরাই খেলতে যাচ্ছে এবং ইনজুরি সারাই করে আসা অনেকেরই রয়েছে।
কিন্তু ধসে পড়ল আশা-ইচ্ছার পাহাড়। ৯৪ রানের বিশাল পাথরে চাপা পড়ে গেল সব ধারণা। কেন যে এমন হলো, কে জানে। ফিল্ডিং দেখে মনে হচ্ছিল, খেলায় মনোযোগ হারিয়ে ফেলা যেন। বোলিংয়ের ব্যাপারে মনে হচ্ছিল এক্সপেরিমেন্ট চলছে। ব্যাটিংয়ে ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থা। এ রকমটা হওয়ার কোনো যুক্তি আছে কি না, বিশ্লেষকেরা জানবেন! আমার পাড়ার রিকশাওয়ালা অবশ্য একটা যুক্তি দাঁড় করিয়ে বলেছে, ‘স্যার, পাকিস্তানের লগে এইটা কী খেলা খেলল। এমুন তো করার কথা না। পাকিস্তানিরা বাণটানও মারছে কিনা!’
মনঃকষ্টে বলা ওর কথা শুনে হেসেছি। তবে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছি, ‘ক্রিকেট খেলায় এমনটা হয়ই। কেউ হঠাৎ ভালো খেলে, কেউ আবার ভালো টিম হইয়াও খারাপ খেলে ফেলে।’ রিকশাওয়ালার তা শুনে উক্তি, ‘মাশরাফি ভাইসহ দলের অনেকেই আগামী বিশ্বকাপে থাকব না। তখন তো আরও কঠিন হইব!’
কথাগুলো সত্যিই ভাবার মতো। একটা সলিড দল ছিল আমাদের।
যা–ই হোক, আমার টিভির সামনে খেলা নিয়ে বসার স্পোর্টসম্যান স্পিরিটটা প্রায় থিতিয়েই গেল। কারণ নিজেদের দলটি আর নেই। এনা চারটি দল, যারা কাপ জয়ের যুদ্ধ করবে। যদি নিউজিল্যান্ড কিংবা ইংল্যান্ড জয়ী হয়, ভালো লাগবে বেশি। আর ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার যে কেউ কাপ জিতলেই মনে হবে ‘থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়’।