২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

শার্দুল-সুন্দরের সেই জুটির সময়ে কোহলিকে ডেকেছিলেন ডাক্তার

ইংল্যান্ড সিরিজের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন কোহলি।
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

মুহূর্তটা যেকোনো বাবারই হয়তো সারা জীবন মনের কোণে খুব যত্নে গুছিয়ে রাখার মতো। সন্তানকে প্রথমবার দেখার মুহূর্ত।

মাঠের বিরাট কোহলি কতটা আগ্রাসী, কিংবা কত দারুণ একজন ক্রিকেটার—এ নিয়ে অনেকের অনেক মত থাকতে পারে, কিন্তু দিন শেষে ভারতীয় অধিনায়কও তো আর দশজন বাবার মতোই। গত মাসে প্রথমবার পিতৃত্বের স্বাদ পাওয়া কোহলির কাছেও সন্তানকে প্রথমবার দেখার মুহূর্তটা চিরস্মরণীয় হয়ে না থাকার কোনো কারণ নেই।

তবে কোহলি যখন সদ্যোজাত মেয়ের মুখ প্রথমবারের মতো দেখতে যাচ্ছিলেন, সে সময়ে ভারতীয় দলও ব্রিসবেনে ইতিহাস গড়ার পানে এক পা দুই পা করে এগোচ্ছিল। সেই মুহূর্তটার কথা জানিয়েছেন কোহলি নিজেই। ব্রিসবেন টেস্টে ভারতের প্রথম ইনিংসে শার্দুল ঠাকুর আর ওয়াশিংটন সুন্দর মিলে যখন দারুণ একটা জুটি গড়ে ভারতকে লড়াইয়ের ভিত্তি এনে দিচ্ছেন, ঠিক সেই মুহূর্তেই ডাক্তার ডেকে কোহলিকে জানান, তিনি বাবা হয়েছেন। তাঁকে কক্ষের ভেতরে ডেকে নেন ডাক্তার।

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে কদিন আগে শেষ হওয়া চার টেস্টের সিরিজে ইতিহাস গড়েছে ভারত। প্রথম টেস্টে অ্যাডিলেডে লজ্জার হারের পরও ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজ জিতেছে ২-১ ব্যবধানে। এ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টানা দুটি টেস্ট সিরিজ জিতল ভারত।

কিন্তু দলের এই গৌরবের সময়ে দলের সঙ্গে ছিলেন না কোহলি। অন্যভাবেও বলা যায়, কোহলিকে ছাড়াই এবার অস্ট্রেলিয়া সফরে ইতিহাস গড়েছে ভারত। সন্তান জন্মের সময়ে স্ত্রী আনুশকা শর্মার পাশে থাকবেন বলে প্রথম টেস্টের পরই অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে দেশে ফেরেন কোহলি। তিনি যে ফিরবেন, সেটি আগেই ঠিক করা ছিল।

কিন্তু কোহলি যখন ফিরছেন, ভারতীয় দল তখন দুর্বিষহ এক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কোহলি যখন অস্ট্রেলিয়া ছেড়েছেন, অ্যাডিলেডে সিরিজের প্রথম সেই টেস্টে ভারত হেরেছে তো বটেই, নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয়েছে মাত্র ৩৬ রানে—ভারতের টেস্ট ইতিহাসেই যা এক ইনিংসে সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড।

কোহলি-আনুশকার পরিবার এখন তিনজনের।
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

কোহলিকে ছাড়াই সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ভারত। অজিঙ্কা রাহানের ঠান্ডা মাথার নেতৃত্ব আর দারুণ পারফরম্যান্স, চেতেশ্বর পূজারার মতো পোড় খাওয়া ক্রিকেটারের লড়াই, আর মোহাম্মদ সিরাজ, শার্দুল ঠাকুর, ওয়াশিংটন সুন্দরদের মতো তরুণদের দারুণ পারফরম্যান্সে সিরিজ উল্টো জিতেছে ভারত।

এর মধ্যে ব্রিসবেনে সিরিজের চতুর্থ ও শেষ টেস্টে যেভাবে জিতেছে ভারত, সেটি তো ক্রিকেটপ্রেমীদের মন জিতে নিয়েছে বিশ্বজুড়েই। ঋষভ পন্তের অপরাজিত ৮৯ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে ভারত যখন ৩ উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ছে, অনেক রং দেখা টেস্টটার তখন পঞ্চম দিনের আর তিন ওভার বাকি!

ঋদ্ধিমান তো দ্বিতীয় ইনিংসে আলো ছড়িয়েছেন, ভারতের প্রথম ইনিংসে লড়াইয়ের পুঁজিটা এনে দিয়েছেন ওয়াশিংটন সুন্দর ও শার্দুল ঠাকুরই। প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার ৩৬৯ রানের জবাবে ১৮৬ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলা ভারতের হয়ে সপ্তম উইকেটে দুজন ২১৭ বলে গড়েছেন ১২৩ রানের জুটি।

সুন্দর-শার্দুল মিলে যখন ভারতের পাল্টা লড়াইয়ের নতুন কিস্তি লিখছিলেন, কোহলি তখন হয়তো এক চোখ ব্রিসবেনে রেখে কিছুটা দুশ্চিন্তা আর চাপা উত্তেজনা নিয়ে পায়চারি করছিলেন হাসপাতালের করিডরে। সেদিনই যে সন্তানের বাবা হয়েছেন ভারত অধিনায়ক। সেই মুহূর্তটার স্মৃতি কোহলি ভাগাভাগি করেছেন আজ সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে কোহলি বলেছেন, ‘সে সময় আসলে মোবাইলে ব্রিসবেনে ওয়াশিংটন সুন্দর আর শার্দুল ঠাকুরের জুটি দেখছিলাম। তখনই ডাক্তার ভেতরে ডাকলেন।’

সুখের সংসার কোহলি-আনুশকার।
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

অস্ট্রেলিয়া সিরিজের শেষ তিন টেস্টে অজিঙ্কা রাহানের ঠান্ডা মাথার নেতৃত্ব দেখে অনেকেই বলছেন, ভারতের টেস্ট দলের অধিনায়ক কোহলি নয়, রাহানেরই হওয়া উচিত। এমনিতেই সেদিক থেকে সিরিজে ভারতের জয়টা কোহলির জন্য কিছুটা শঙ্কার কারণ হয়ে এসেছে। তার ওপর বাবা হওয়ার মুহূর্তে স্ত্রীর পাশে থাকতে সিরিজ ছেড়ে চলে আসায় যে ভারতের এমন জয়ে দলের সঙ্গে থাকতে পারেননি, তা নিয়েও কি আফসোস আছে কোহলির?

সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্নে সরল উত্তরেই মনের ভাবটা জানিয়ে দিয়েছেন ভারত অধিনায়ক, ‘বাবা হওয়ার মুহূর্তটা আমার জীবনের সেরা মুহূর্ত। এর সঙ্গে সিরিজ জয়ের তুলনা হয় না। তবে আমি দলের সঙ্গে না থাকলেও দলের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা ঠিকই থাকে। আমরা সব সময়ই একে অন্যের পাশে থাকি। আমি দূর থেকেই খেলার সবকিছু দেখছিলাম।’

অস্ট্রেলিয়ায় দল এভাবে জিতে আসায় একটা তৃপ্তিও আছে কোহলির। এত বছরের পরিশ্রমের ফল দেখতে পাওয়ার তৃপ্তি, ‘অনেক বছর ধরে যে চেষ্টা করেছি, সেটিই আমাদের দলের এই পরিচয় গড়ে দিয়েছে। সেটি হলো আমরা সব সময়ই জিততে চাই। ড্র হচ্ছে একেবারে উপায়ান্তর না থাকলে তখনকার ভাবনা। ম্যাচের পর ম্যাচ, সিরিজের পর সিরিজ এই জিততে চাওয়ার তাড়না গড়তে কাজ করে গেছি আমরা। (অস্ট্রেলিয়া সিরিজে) সেটির ফল দেখার পর আরেকবার অনুভূতি হলো যে আমরা এভাবেই খেলতে চাই সব সময়।’

অস্ট্রেলিয়া সিরিজের মতোই ভারত যদি খেলে, এই সিরিজে ইংল্যান্ডেরও বড় পরীক্ষাই অপেক্ষা করছে।