লিজেন্ডস কাপে শেবাগ–ঝড় দেখল বাংলাদেশ
নিয়ম বাঁধা আছে ষষ্ঠ ওভার থেকে নয় ওভারের মধ্যে স্ট্র্যাটেজিক টাইম আউট নিতে হয়। বাংলাদেশের কিংবদন্তিরা এতটাই মোহগ্রস্ত হয়ে বীরেন্দর শেবাগ আর শচীন টেন্ডুলকারের খেলা দেখছিলেন যে সেটা আর নেওয়া হয়ে ওঠেনি তাঁদের। বাধ্য হয়ে ৯ ওভার শেষে আম্পায়ারই বললেন, এখন চলবে সেই বিরতি, ইনিংসের বাকি সময় নিয়ে পরিকল্পনা সাজাতে বাংলাদেশকে আড়াই মিনিট সময় দেওয়া হলো।
তা দেখে হাসি থামানো কঠিন হওয়াটাই স্বাভাবিক। মহৎ এক উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু হয়েছে রোড সেফটি ওয়ার্ল্ড সেফটি নামের সাবেক ক্রিকেটারদের এ টুর্নামেন্ট। মহারাষ্ট্রের ছত্রিশগড়ের রায়পুরে ২০২১ সালের প্রথম ম্যাচ ততক্ষণে পরিকল্পনার ঊর্ধ্বে। বাংলাদেশ লিজেন্ডসদের দেওয়া ১১০ রানের লক্ষ্যে নেমে ভারত তখন মাত্র ৪ রান দূরে। এ ম্যাচ নিয়ে পরিকল্পনা করার কোনো কারণ আর নেই। লিজেন্ডদের খেলায় ভারতীয় দুই কিংবদন্তি যেন খেলোয়াড়ি জীবনকে ফিরে পেয়েছিলেন। ৫৯ বল হাতে রেখে ১০ উইকেটে ম্যাচ জিতেছে ভারতের লিজেন্ডস।
নিজের প্রথম বলেই বাউন্ডারি মেরেছেন বীরেন্দর শেবাগ। ইনিংসের শেষটাও টেনেছেন এক ছক্কায়। অবশ্য শেবাগ বাকি সময়টাতেও এভাবে চার-ছক্কার খেলাতেই ব্যস্ত ছিলেন। মোহাম্মদ রফিকের প্রথম দুই বলে দুটি চারের পর ছক্কা মেরেছেন। রফিকের ওভার শেষ হওয়ার আগে আরেকটি চারে তুলে নিয়েছেন ১৯ রান। পরের ওভারে মোহাম্মদ শরিফ চমকে দেওয়া ইনসুইং দেখিয়েছেন। কিন্তু তাতে শেবাগের কী আসে যায়। ছক্কা আর চারে আরও গোটা দশেক রান এনে দিয়েছেন।
তৃতীয় ওভারে এসে প্রথম শচীন টেন্ডুলকারকে ব্যাট করতে দেখার সৌভাগ্য হলো সবার। আলমগীর কবিরকে প্রথম বলেই চার মারলেন টেন্ডুলকার। সে ওভারেই আরেকটি চার মেরে টেন্ডুলকার বুঝিয়ে দিলেন, ২০১৩ সালে অবসর নিতে পারেন, ফুট ওয়ার্ক আর টাইমিংয়ে এখনো কোনো খামতি নেই। দুই দিকে এমন হামানদিস্তা পিটুনিতে ৪ ওভারেই ভারতের রান ৫০ পেরোল। পঞ্চম ওভারে আলমগীর কবিরকে টানা দুই চারের পর আবার এক ছক্কা শেবাগের। ২০ বলে ফিফটি পেয়ে গেলেন এই ওপেনার!
পাওয়ার প্লে শেষ হতে না হতেই ভারতের রান ৭৪। সপ্তম ওভার করতে এলেন খালেদ মাহমুদ। তাঁকেও জোড়া চার দিয়ে আমন্ত্রণ জানালেন শেবাগ। চতুর্থ বলে আরেক চার মেরে টেন্ডুলকারও তাঁর দায়িত্ব সারলেন। এভাবেই ৯ ওভার শেষে ১০৬ রান তুলে ফেলল ভারত লিজেন্ডস। বিরতি শেষে রফিকের ওভার থেকে মাত্র দুই রান পাওয়াতেই ইনিংসের অর্ধেকটা বাকি থাকতেই ম্যাচ শেষ করে আসা হয়নি ভারতের। ১১তম ওভারের প্রথম বলে খালেদ মাহমুদকে বিশাল এক ছক্কা মেরে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করলেন শেবাগ। ৩৫ বলে ৮০ রানে অপরাজিত এই ব্যাটসম্যান। ৫টি ছক্কার সঙ্গে দ্বিগুণ চার মেরেছেন। সে তুলনায় টেন্ডুলকারকে একটু ম্লানই লাগছিল। ২৬ বলে ৩৩ রানের ইনিংসে চোখ জুড়ানো ৫টি চার ছিল, কিন্তু কোনো ছক্কা ছিল না তাতে।
এর আগে বাংলাদেশের শুরুটাও দারুণ হয়েছিল। জাভেদ ওমরকে পাশে নিয়ে আগ্রাসী শুরু ছিল নাজিমউদ্দিনের। পাওয়ার প্লেতে ৫০ রান তুলেছিল বাংলাদেশ লিজেন্ডস। অষ্টম ওভারে ভাঙে ওপেনিং জুটি। ১৯ বলে ১২ রান করে ফেরেন জাভেদ। পরের ওভারেই নাজিম ফিরেছেন ৪৯ রানে। ৩৩ বলে ৪৯ রান করা নাজিম ফেরার পরই বাংলাদেশের ইনিংস ভেসে যায় বালুর বাঁধের মতো। ১ উইকেটে ৬৮ রান করেছিল বাংলাদেশ লিজেন্ড। ৭০ বল শেষে বাংলাদেশ যখন অলআউট হচ্ছে তখন আর মাত্র ৪১ রান যোগ হয়েছে সংগ্রহে। দুই ওপেনারের পর দুই অঙ্ক ছুঁয়েছেন শুধু রাজিন সালেহ। তবে সেই ১২ রানও এসেছে ২৪ বলে। তখন মনে হয়েছিল কিংবদন্তি ক্রিকেটে এমনটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু টেন্ডুলকার ও শেবাগ অন্য কিছুই দেখালেন।