মেয়েদের এই দলের সমান ছেলেদের কোনো দল কি আছে
৪ বছরে ৩৯ ম্যাচ খেলেছে দলটা। জিতেছে ৩৮টিতেই! আর শিরোপা? কোনো ওয়ানডে সিরিজ হারেনি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছে দুটি, ওয়ানডে বিশ্বকাপ একটি। এমন একটা দলকে তো সহজেই ক্রিকেটের সফলতম বলে দেওয়া যায়, তাই না?
দলটা অস্ট্রেলিয়ার মেয়েদের ক্রিকেট দল। মেগ ল্যানিং, অ্যালিসা হিলি, এলিস পেরিদের এই দলটা গত চার বছরে যেভাবে ছড়ি ঘোরাচ্ছে মেয়েদের ক্রিকেটে, সেটির সঙ্গে তুলনা করার মতো কোনো দল কি ছেলেদের ক্রিকেটেও আছে?
প্রশ্নটা নতুন করে উঠছে গতকাল ইংল্যান্ডকে ৭১ রানে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের পর। সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপ জয়ের রেকর্ড তো তাদেরই ছিল, সেটিকে সাতে নিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া। এ পর্যন্ত বিশ্বকাপ হয়েছে ১২টি।
ক্রাইস্টচার্চে কাল ফাইনালটাও কী দাপটেই না জিতেছেন অস্ট্রেলিয়ার মেয়েরা! ৬১৪ ম্যাচ দেখা মেয়েদের ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসেই সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডটি ২৮৯ রানের, ২০১২ সালে নিউজিল্যান্ডের মেয়েদের বিপক্ষে সে জয়ও অস্ট্রেলিয়ারই, সেখানে কাল ফাইনালে ইংল্যান্ডকে অস্ট্রেলিয়া লক্ষ্যই দিয়েছে ৩৫৭ রানের! অলআউট হওয়ার আগে ২৮৫ রান করতে পেরেছেন ইংল্যান্ডের মেয়েরা।
নিজেদের ওপর অগাধ বিশ্বাস আর অসাধারণ ফিটনেসের সঙ্গে যখন দক্ষতাও মেলে, এমন ফল হয়তো তখনই আসে। সব মিলিয়েই একটা অজেয় অনুভূতি ছড়িয়ে আছে অস্ট্রেলিয়ার মেয়েদের এই দলকে ঘিরে। এমন একটা অনুভূতি গত শতাব্দীর শেষ থেকে শুরু করে এই শতাব্দীর শুরুর প্রায় পুরো দশকজুড়ে ছিল অস্ট্রেলিয়ার ছেলেদের ক্রিকেট দলকে ঘিরেও। রিকি পন্টিংয়ের অধীন গিলক্রিস্ট-হেইডেন-লি-ম্যাকগ্রাদের সেই অস্ট্রেলিয়া!
কিন্তু দাপটের বিচারে ছেলেদের ক্রিকেটে পন্টিংদের সেই অস্ট্রেলিয়াকেও কি মেয়েদের ক্রিকেটে ছাপিয়ে গেছে ল্যানিংয়ের অস্ট্রেলিয়া?
মেয়েদের এই ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে ইংল্যান্ডের ছেলেদের দলের সাবেক অধিনায়ক নাসের হুসেইন একরকম ঘোষণার সুরেই বলেছিলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া যদি এবারও জিতে যায়, তাহলে আমার চোখে মেয়েদের ক্রিকেটে সর্বকালের সেরা দল হবে এটিই।’ টুর্নামেন্ট শেষে আলোচনাটার ব্যাপ্তি আরেকটু ছড়িয়ে গেছে। মেয়েদের ক্রিকেট কেন, ছেলেদের ও মেয়েদের মিলিয়েই কি ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা দল এটি?
পরিসংখ্যান ল্যানিংদের পক্ষে কথা বলে। ২০১৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ভারতের কাছে হেরে বিদায় অস্ট্রেলিয়ার। তাতে এভাবে তেতে গেলেন ল্যানিংরা! সামনে প্রতিপক্ষ হিসেবে যারাই এসেছে, দুরমুশ হয়েছে।
৪ বছরে ৩৯ ম্যাচের ৩৮টিই জেতা তো কল্পনার পরিধিকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো। এ ৪ বছরে অস্ট্রেলিয়ার মেয়েদের একমাত্র হারটা এসেছে ভারতের মেয়েদের বিপক্ষে। ২০১৭ বিশ্বকাপের পর থেকে ১২টি দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে, জিতেছে সবগুলোই।
এসব রেকর্ডকেও যদি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়াকে ছাপিয়ে যাওয়ার মতো কিছু মনে না হয়, সে ক্ষেত্রে ওয়ানডেতে টানা সবচেয়ে বেশি জয়ের রেকর্ড কিছুটা ধারণা দিতে পারে। পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়া জিতেছে টানা ২১ ম্যাচ, গত সেপ্টেম্বরে ভারতের কাছে হারের আগে অস্ট্রেলিয়ার মেয়েদের দল জিতেছে টানা ২৬ ম্যাচে। ভারতের কাছে হারটা অনেকটা ‘চাঁদের কলঙ্কে’র মতোই, এর পর থেকে আজকের ফাইনাল পর্যন্ত আবার টানা ১২ ম্যাচ জিতেছে অস্ট্রেলিয়া।
শুধু ওয়ানডেই কেন, ২০১৭ বিশ্বকাপের পর এ নিয়ে টানা দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও (২০১৮ ও ২০২০) জিতেছে অস্ট্রেলিয়ার মেয়েরা। এখন ওয়ানডে বিশ্বকাপও জেতা হয়ে গেল।
সর্বকালের সেরা দলের দাবিটা ল্যানিং-হিলিরা করতেই পারেন!