মুমিনুলদের ‘অপরাধ’ না করার সহায় ডমিঙ্গো–ডোনাল্ড
ডারবান টেস্ট শুরুর আগে কেশব মহারাজকে নিয়ে বাংলাদেশ খুব বেশি ভেবেছে বলে মনে হয় না। মহারাজের মতোই সাইমন হারমার নিশ্চিতই ছিলেন আলোচনার বাইরে। দক্ষিণ আফ্রিকা মানেই ফাস্ট বোলারদের আধিপত্য, পেস বোলারদের দাপট। সেখানে পেসারদের নিয়ে ভাবতে হবে, এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু ডারবানে সবকিছুই ওলট-পালট হয়ে গেছে। কেশব মহারাজ আর সাইমন হারমার মিলেই শেষ করে দিয়েছেন বাংলাদেশকে। পোর্ট এলিজাবেথে গেবেহা মাঠে কাল সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামার আগে তাই খুব করেই স্পিনাররা থাকবেন বাংলাদেশের ভাবনায়।
স্পিনাররা ভাবনায় থাকবেন দক্ষিণ আফ্রিকারও। ডারবানে তাদের স্পিনারদের অসাধারণ পারফরম্যান্সের পর না থাকার কোনো কারণও নেই। আর যেখানে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, স্পিন বোলিংয়ে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের প্রতিরোধব্যবস্থার দুর্বলতা। দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে পুরোনো টেস্ট মাঠ এই পোর্ট এলিজাবেথের গেবেহা। একসময় সেন্ট জর্জেস পার্ক নামে পরিচিত এ মাঠের নতুন নাম গেবেহা। আর এই মাঠের উইকেট কেন যেন সব সময়ই স্পিনারদের একটু সাহায্য করে থাকে।
ডারবানেই যেখানে প্রোটিয়া স্পিনাররা সাফল্য পেয়েছে, গেবেহাতে না পাওয়ার তো কোনো কারণই নেই। ডারবানে দুই স্পিনারের দাপটে ২৭৪ রানের লক্ষ্যে পঞ্চম দিন বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ ভেঙে পড়ে তাসের ঘরের মতো, দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৫৩ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। অধিনায়ক মুমিনুল বলেছিলেন, বিদেশের মাটিতে স্পিনারদের বিপক্ষে উইকেট দেওয়াটাই অপরাধ। প্রোটিয়া অধিনায়ক ডিন এলগার খুব করেই চাইবেন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের দিয়ে সেই ‘অপরাধ’ আবার করাতে।
আইপিএলের কারণে এমনিতেই শক্তি হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট দল। ছয় নিয়মিত খেলোয়াড় ছাড়াই ডারবানে খেলতে নেমেছিল প্রোটিয়ারা। ছিলেন না কাগিসো রাবাদা, লুঙ্গি এনগিডি আর মার্কো ইয়ানসেন—টেস্টে তাদের গোটা পেস আক্রমণই। নানা সমস্যার মধ্যেই দুই স্পিনার নিয়ে খেলতে নেমেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।
বাংলাদেশ যেখানে তাসকিন আহমেদ, খালেদ আহমেদ আর ইবাদত হোসেন—এই তিন পেসারের সঙ্গে স্পিনার হিসেবে কেবল মেহেদী হাসান মিরাজকে খেলিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকা দলে দুই স্পিনার। কেশব মহারাজ তা-ও পরিচিত, কিন্তু সাইমন হারমার! তাঁর নামও বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা সেভাবে জানতেন কি না সন্দেহ। তিনি যে আবার টেস্ট খেলতে নেমেছেন ২০১৫ সালের পর।
এলগারেরও তাই পোর্ট এলিজাবেথে অন্য কিছু ভাবার অবকাশ খুবই সীমিত, ‘ডারবান টেস্ট আমাদের মানসিক দৃঢ়তার পরীক্ষা নিয়েছে। এমন একটা কন্ডিশনে খেলা হয়েছিল, যেখানে আমরা খুব একটা অভ্যস্ত নই। কিন্তু আমরা সেখানেই আমাদের মানসিক দৃঢ়তা দেখিয়েছি সেই অনভ্যস্ত কন্ডিশনে ভালো করে। ডারবান টেস্ট প্রমাণ করেছে, যেকোনো কন্ডিশনে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা ও অনুষঙ্গ আমাদের দলের আছে।’
উপমহাদেশে বেশি করে খেলার ব্যাপারটিও তাদের সাহায্য করেছে, ‘আমরা উপমহাদেশে যথেষ্ট ক্রিকেট খেলেছি। দুই স্পিনার নিয়ে টানা বোলিং করিয়ে যাওয়াটা দারুণ ছিল।’ তবে এ টেস্টে বাংলাদেশও যে ছেড়ে কথা বলবে না, সেটি মানেন প্রোটিয়া ক্রিকেটার রায়ান রিকেলটন। ডারবানে অভিষিক্ত রিকেলটন চাইবেন পোর্ট এলিজাবেথে ভালো কিছু করে দলে নিজের জায়গা পাকা করতে। ডারবানে খুব একটা খারাপ করেছেন, সেটি বলা যাবে না। প্রথম ইনিংসে ২১ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ৩৯ রানে অপরাজিত ছিলেন।
রিকেলটন মনে করেন, পোর্ট এলিজাবেথে রাসেল ডমিঙ্গো আর অ্যালান ডোনাল্ডের আশ্রয় চাইবে বাংলাদেশ, ‘আমি মনে করি, এই টেস্টে ডমিঙ্গো আর ডোনাল্ডের একটা বড় ভূমিকা থাকবে।
বাংলাদেশের প্রধান কোচ ডমিঙ্গোর শহর এই পোর্ট এলিজাবেথ। স্বাভাবিকভাবেই গেবেহাকে নিজের হাতের তালুর মতোই চেনেন বাংলাদেশের প্রোটিয়া কোচ। রেকেলটন মনে করেন, ডমিঙ্গোও নিজের দলকে তাঁর সর্বস্ব দিয়ে সাহায্য করতে চাইবেন, ‘বাংলাদেশ এ মাঠে আগে কখনোই টেস্ট খেলেনি। তাদের প্রায় সব খেলোয়াড়ের কাছেই মাঠটা একেবারে নতুন। কিন্তু তাদের সঙ্গে যদি এমন কেউ থাকেন, যিনি এ শহরে বাস করেন, আর মাঠটাকে নিজের হাতের তালুর মতোই চেনেন, তাহলে তাদের অবশ্যই তাঁর পরামর্শকে বেদবাক্য বানিয়ে ফেলতে হবে। তাঁর পরামর্শগুলোকে অনুধাবন করতে হবে।’