মাশরাফির টস-কাহন
সাউদাম্পটনে ম্যাচ রেফারি রিচি রিচার্ডসন যখন বললেন টস জিতেছে গুলবাদিন নাইব, তখন মাশরাফি বিন মুর্তজা দুরুদুরু বুকে অপেক্ষা করছে আফগান অধিনায়ক না আবার আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন! বাংলাদেশ অধিনায়ককে মুখে ‘হাসি’ ফুটিয়ে আফগান অধিনায়ক টস জিতে নিলেন বোলিং।
টস শেষে মাশরাফি যখন ড্রেসিংরুমে ফিরছেন, দেখলেন সতীর্থরা উদ্বেগভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন অধিনায়কের দিকে। মাশরাফি অভয় দিলেন, ‘আরে, আমরা আগে ব্যাটিং করব।’ এবার সতীর্থদের মুখে হাসি। সেদিন বাংলাদেশ চেয়েছিল আগে ব্যাটিং করতে। আফগান অধিনায়ক ভেবেছিলেন, শুরুতেই উইকেট থেকে সহায়তা পাবেন তাঁর স্পিনাররা। কিন্তু বাংলাদেশ বুঝতে পেরেছিল, এই উইকেটে শুরুতে নয়, ম্যাচ যত এগোবে, স্পিনাররা তত বেশি সহায়তা পাবেন। টস জিতে আফগানিস্তানের বোলিং নেওয়ার সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল, সেটি তো পরে প্রমাণই হলো। মন্থর উইকেটে বাংলাদেশের স্পিনাররা ভালো করলেন। দুর্দান্ত বোলিং করলেন সাকিব আল হাসান।
যেহেতু খেলাটা সরাসরি আবহাওয়া বা কন্ডিশনের সঙ্গে সম্পর্কিত, ক্রিকেটে টস কতটা গুরুত্বপূর্ণ, নতুন করে না বললেও চলছে। টস জিতে অধিনায়ক প্রতিপক্ষকে আগে ব্যাটিং করাবেন না পরে—এই সিদ্ধান্ত ঠিকঠাক নিতে না পারলেই বিপদ! মাশরাফিকে যেমন কার্ডিফে ইংল্যান্ডের কাছে বড় ব্যবধানে হারায় কাঠগড়ায় তোলা হলো। দুর্দান্ত ব্যাটিং অর্ডার জেনেও কেন ইংলিশদের আগে ব্যাটিং করতে পাঠানো হলো এবং স্বেচ্ছায় রানপাহাড়ে চাপা পড়তে হলো? মাশরাফি টন্টনেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টস জিতে আগে বোলিং নিয়েছিলেন, সেটি নিয়েও প্রশ্ন হতো যদি ম্যাচটা বাংলাদেশ হারত।
ফুটবল বিশ্বকাপে জার্সির রং নির্ধারণে ‘হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে’ বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ক্রিকেট বিশ্বকাপে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে পদ্ধতিটা বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে শুধুই টস করার আগে। নিয়মটা হচ্ছে, ‘হোম’ দলের অধিনায়ক কয়েন ছুড়বেন, ‘অ্যাওয়ে’ দলের অধিনায়ক ‘কল’ দেবেন। কিন্তু কে স্বাগতিক, কে সফরকারী—এটা কীভাবে নির্ধারণ করা হয়, জানা নেই মাশরাফির, ‘ম্যাচ রেফারি ঠিক করে দেন কারা হোম আর কারা অ্যাওয়ে দল। দক্ষিণ আফ্রিকা কিংবা আফগানিস্তানের বিপক্ষে আমরা ছিলাম হোম টিম। আগে জানতাম নামের আদ্যাক্ষর দিয়ে ঠিক হয় হোম–অ্যাওয়ে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে হোম দল হওয়ার পর তো সে ধারণাও ভুল মনে হলো!’ টস জিততে অবশ্যই ভাগ্যের সহায়তা লাগে। কিন্তু এখানে মানুষেরও হাত আছে! মাশরাফি সেদিন আড্ডায় চমকে যাওয়া একটা তথ্য দিলেন, ‘এই বিশ্বকাপে যারা টেল কল দিচ্ছে, তারাই জিতছে। এবার টুর্নামেন্টে কয়েন একটু অদ্ভুত লাগছে।’
এজবাস্টনে বাংলাদেশ স্বাগতিক না সফরকারী দল হিসেবে খেলবে, সেটি এখনো বলার উপায় নেই। বলার উপায় নেই বাংলাদেশ টস জিতলে কী নেবে। ম্যাচ এখনো যে অনেক দেরি। তার আগে একই মাঠে কাল খেলবে ভারত–ইংল্যান্ড। এখন বাংলাদেশ–ভারত ম্যাচ ব্যবহৃত উইকেটেই হবে নাকি নতুন উইকেটে, সেটিও আগে জানতে হবে। বাংলাদেশ এবারের বিশ্বকাপে তিন ম্যাচই জিতেছে ব্যবহৃত উইকেট খেলে। ব্যবহৃত উইকেট মানে সেখানে স্পিনারদের জন্য কিছু থাকবে। নিজেদের শক্তি চিন্তা করেই বাংলাদেশ স্বাভাবিকভাবে চাইছে খেলাটা ব্যবহৃত উইকেটেই যেন হয়।