গত বছরের সেপ্টেম্বরের কথা। রাসেল ডমিঙ্গো তখন সবে জাতীয় দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব নিয়েছেন। দুই দিন পরেই চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান টেস্ট। বাংলাদেশ দলের অনুশীলনে টেস্ট ওপেনার সাদমান ইসলামের ব্যাটিং দেখে তাঁর ব্যাকলিফটে খুঁত খুঁজে পান ডমিঙ্গো।
সাদমানের চোট এবং পরে করোনাভাইরাসের কারণে তাঁর সঙ্গে সময় নিয়ে কাজ করতে পারেননি জাতীয় দলের কোচরা। তবে গত কয়েক মাসে সাদমানসহ আরও কয়েকজন তরুণ ক্রিকেটারের টেকনিক নিয়েই কাজ হয়েছে। সাবেক ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জি তো মোহাম্মদ নাঈম, আফিফ হোসেনদের ব্যাটিং নিয়ে আলাদাভাবেই কাজ করতেন নিয়মিত।
কোচরা খেলোয়াড়দের সমস্যা নিয়ে কাজ করবেন, তাঁদের পারফরম্যান্সে উন্নতি আনার চেষ্টা করবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু জাতীয় দলে আসার পরও যদি মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে হয়, তাহলে সেটা সমস্যাই। জাতীয় দলে আসার আগে বেশির ভাগ ক্রিকেটারই বয়সভিত্তিক পর্যায় এবং বিসিবির হাই পারফরম্যান্সে অনুশীলন করে আসেন। মৌলিক ভুলত্রুটিগুলো সেখানেই শুধরে যাওয়ার কথা। বিশেষ করে প্রতিবছর অন্তত চার মাস মিরপুর স্টেডিয়ামের একাডেমিতে চলে হাই পারফরম্যান্সের ক্যাম্প। ক্রিকেটারদের ঘষে–মেজে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য প্রস্তুত করার কাজটা সেখানেই হয়ে যাওয়ার কথা।
সেটি যে হচ্ছে না, তা ধরা পড়েছে বিসিবির হাই পারফরম্যান্স বিভাগের প্রধান নাঈমুর রহমানের চোখেও। এবারের হাই পারফরম্যান্স ক্যাম্প শুরুর আগে নাঈমুর বলেছেন, ‘অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটারেরই কিছু না কিছু সমস্যা থেকে যাচ্ছে। টেকনিকে দুর্বলতা থাকছে, জাতীয় দলে গিয়ে সেগুলো নিয়ে কাজ করতে হয়। ক্রিকেটারদের প্রতি আমার আবেদন, জাতীয় দলে গিয়ে যেন এই কাজগুলো না করতে হয়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারই হাই পারফরম্যান্স ক্যাম্পের অভিজ্ঞতা থেকে বলেছেন, স্থানীয় কোচরা হাই পারফরম্যান্সের অনুশীলনে যেসব শেখান, সেগুলো অনেক সময় মানতে চান না জাতীয় দলের বিদেশি কোচরা। হাই পারফরম্যান্সে তাঁরা যেসব টেকনিক ‘সঠিক’ জেনে আসছেন, জাতীয় দলে এসে সেগুলো ‘ভুল’ জানছেন!
দীর্ঘদিন ধরে হাই পারফরম্যান্স বিভাগে ব্যাটিং কোচের দায়িত্বে থাকা জাফরুল এহসান কথাটা শুনে হেসেই দিলেন। তবে মেনেও নিলেন, তাঁদের কোচিংয়ে কিছু ভুলত্রুটি থাকতে পারে, ‘উনি (ডমিঙ্গো) যেটা বলেছেন, একদম ভুল বলেননি। তবে কাজ উনিও করবেন। উনি যে খেলোয়াড়দের নিয়ে একদমই কাজ করবেন না, তা তো নয়! আবার আমরাও করব। জাতীয় দলে যে সবাইকে ঝকঝকে–তকতকে পাবে তা নয়। আমাদের সাধ্যের সীমানা আছে। আমরা তো বিশ্বের সেরা কোচ নই। সাধ্যের মধ্যে যতটুকু পারি, আমরা ততটুকু করি। তবে আমরা হয়তো একটা জিনিস খেয়াল না–ও করতে পারি, যেটা ওনার চোখে পড়বে।’
পেস বোলিং কোচ সাইফুল ইসলাম বলেছেন, সময়ের অভাবেই হাই পারফরম্যান্স দলের ক্রিকেটারদের নিয়ে লম্বা সময় কাজ করা যায় না। এসিসির টুর্নামেন্ট, বাংলাদেশ ‘এ’ দল—এসব নিয়েই ক্যাম্পের সময় চলে যায়। ক্রিকেটারদের দক্ষতা নিয়ে কাজ করার খুব বেশি সময় পাওয়া যায় না, ‘ভুল কেউ শেখায় না। তবে আমাদের সময়ের অভাব। একটা ছেলের কৌশল নিয়ে কাজ করতে সময় লাগে।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অভিজ্ঞ এক কোচ অবশ্য বিসিবির প্রক্রিয়ার দিকেই আঙুল তুললেন, ‘হুট করে হাই পারফরম্যান্স থেকে একটা ছেলেকে নিয়ে খেলিয়ে দিলে হবে না। ৪-৫ বছর লাগে একটা ছেলে তৈরি হতে। অনূর্ধ্ব-২৩, ‘এ’ দল—এসবে খেলে জাতীয় দলের জন্য তৈরি হতে হবে।’
বর্তমান হাই পারফরম্যান্স দলের বেশির ভাগ ক্রিকেটারই এসেছেন গত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দল থেকে। তাঁদের নিয়ে আলাদা করেই অনুশীলনের পরিকল্পনা ছিল বিসিবির। করোনার কারণে সেটি হয়নি। আকবরদের ঠিকানা তাই শেষ পর্যন্ত হাই পারফরম্যান্স ক্যাম্পই। বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটাররা হাই পারফরম্যান্স ক্যাম্প থেকে কতটুকু উপকৃত হন, সেটিই এখন দেখার।