ভারতের হয়ে ওপেন করতেও ভয় পাবেন না সুন্দর
আরও ভালো করতে হবে—এ মন্ত্রে দীক্ষিত হওয়ারই কথা ওয়াশিংটন সুন্দরের। ব্রিসবেনের পেসবান্ধব উইকেটে টেস্ট অভিষেক হয়েছে সুন্দরের। নিজের প্রথম ইনিংসেই দলকে মহাবিপদের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন ৬২ রানের এক ইনিংস খেলে। কিন্তু তাঁর বাবা এতেও সন্তুষ্ট হননি। তাঁর কথা, সেঞ্চুরিটা করে এল না কেন সুন্দর?
এমন বাবার ছেলে, ওয়াশিংটন নিজেও তাই কম যান না। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বিকল্প হিসেবে দলে ডাক পেয়েছেন। অফ স্পিনের পাশাপাশি ব্যাটিং দক্ষতাও দেখিয়ে দিয়েছেন—মাঝে যে দক্ষতা দেখিয়ে অশ্বিন র্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডারও হয়ে উঠেছিলেন।
কিন্তু এক ম্যাচেই তো শেষ নয়, টেস্ট দলে জায়গা ধরে রাখার জন্য কতটা আগ্রহী সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন সুন্দর। চাইলে দলের প্রয়োজনে ইনিংস উদ্বোধন করতেও রাজি এই স্পিনার।
ভারতের অস্ট্রেলিয়া জয়ের অনেক নায়কই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। নিয়মিত অধিনায়ক বিরাট কোহলির অনুপস্থিতিতেও সিরিজ জেতার পেছনে অজিঙ্কা রাহানের নেতৃত্বগুণ দেখছেন সবাই। কেউ আবার রাহুল দ্রাবিড়ের পাঠানো পরামর্শ নিয়ে মেতেছেন। তবে হঠাৎ করেই ভারতের সব তরুণ ক্রিকেটারের এমন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে ওঠা এবং হার না মানার মানসিকতার পেছনের ব্যক্তিটি কিন্তু অন্য একজন—কোচ রবি শাস্ত্রী।
ড্রেসিংরুমে তরুণ ক্রিকেটারদের দৃঢ়চেতা ও নিবেদিত হতে শেখাচ্ছেন শাস্ত্রী। সবাইকে নিজের সাহসের ও লড়াইয়ের গল্প শোনাচ্ছেন। পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সুন্দর জানিয়েছেন, কীভাবে তাঁকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলছে শাস্ত্রীর গল্প, ‘ভারতের হয়ে যদি কখনো টেস্টে ওপেন করার সুযোগ পাই, তবে সেটাকে আশীর্বাদ বলেই ধরে নেব। আমি এই চ্যালেঞ্জ অবশ্যই গ্রহণ করব, ঠিক যেভাবে আমাদের কোচ রবি তাঁর ক্যারিয়ারে করেছিলেন। তাঁর সময়কার অনুপ্রেরণাদায়ী গল্প শোনান রবি স্যার। কীভাবে তিনি বিশেষজ্ঞ স্পিনার হিসেবে দলে জায়গা পেয়েছিলেন। নিউজিল্যান্ডে টেস্ট অভিষেকে ৪ উইকেট পেয়েছিলেন এবং দশে নেমে ব্যাট করেছিলেন। সেখান থেকেই পরে তিনি টেস্টে ইনিংস উদ্বোধন করেছেন এবং ওই যুগের দুর্দান্ত সব ফাস্ট বোলারের মুখোমুখি হয়েছিলেন। তাঁর মতো আমিও টেস্টে ইনিংসের উদ্বোধন করতে চাই।’
একমাত্র টেস্টে ওপেনিংয়ে নামতে হয়নি সুন্দরকে। তবে ফাস্ট বোলারদের ঠিকই মুখোমুখি হয়েছেন। প্যাট কামিন্স, জশ হ্যাজলউড ও মিচেল স্টার্কদের সামলেই প্রথম ইনিংসে ৬২ রান করেছেন। আবার দ্বিতীয় ইনিংসে মহাগুরুত্বপূর্ণ সময়ে নেমে দ্রুত ২২ রান এনে দিয়েছেন। এর মাঝে কামিন্সের বলে একটা ছক্কাও ছিল। সে ছক্কায় ভাগ্যকে পাশে পেয়েছেন, কিন্তু কামিন্সের বাউন্সারে ভয় না পেয়ে হুক করার চেষ্টাও কম কী!
অবশ্য ব্যাটিং সুন্দর ভালোই করেন। অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায় পর্যন্ত টপ অর্ডারেই খেলতেন।
ভারতের বয়সভিত্তিক দলে তাঁর ব্যাটসম্যান পরিচয়টাই বড় ছিল। কিন্তু পরে অফ স্পিনকে মূল অস্ত্র বানিয়ে আইপিএলেও সে সুবাদে ভারতের টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা করে নিয়েছেন। ব্রিসবেনে পাওয়া আত্মবিশ্বাস তাঁকে ব্যাটিং নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। প্রথম শ্রেণিতে ব্যাটিংয়ে ৩২ গড়টাও আরেকটু উন্নত করতে চাইছেন সুন্দর। আর অনুপ্রেরণা খুঁজতে তাঁকে তো খুব বেশি দূর যেতে হচ্ছে না, ‘তরুণ ক্রিকেটার হিসেবে আমি যখন অনুপ্রেরণা খুঁজতে চাই, ড্রেসিংরুমেই অনেককে পেয়ে যাই। এখানে বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, অজিঙ্কা রাহানে, অশ্বিন আছেন, যাঁরা অসাধারণ। আপনি এঁদের অনুসরণ করলেই চলবে, তাঁরা সব সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।’
গ্যাবায় অস্ট্রেলিয়ার ৩২ বছর অপরাজিত থাকার রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে ভারত। দ্বিতীয় ইনিংসে শুবমান গিল ও ঋষভ পন্তের ব্যাটিং এতে মূল ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু প্রথম ইনিংসে সুন্দর ও শার্দূল ঠাকুর ওভাবে দাঁড়িয়ে না গেলে এমন কিছু অর্জন সম্ভব হতো না। নিজের ব্যাটিংসত্তা কীভাবে কাজে লাগিয়েছেন, সেটা আরেকবার জানালেন সুন্দর, ‘আমি জানতাম পন্ত অন্য প্রান্তে আছে (দ্বিতীয় ইনিংসে), তাই বোলাররা খুব চাপের মধ্যে থাকবে। আমরা যদি দ্রুত ২৫ বা ৩০ তুলে ফেলতে পারি, তাহলে লক্ষ্যে পৌঁছে যাব। প্রথম ইনিংসে শার্দূলও আমাদের জুটির সময়টায় দারুণ খেলেছে।’
ব্রিসবেনে তাঁর ব্যাটিং-বীরত্ব নিয়ে গল্পগাথা লেখা হবে, কিন্তু সুন্দর জানেন ভারতের টেস্ট দলে জায়গা করতে হলে বোলিংই তাঁর মূল অস্ত্র। এত দিন টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট হিসেবে পরিচিত হওয়া সুন্দর এবারের সফর থেকে পাওয়া শিক্ষা কাজে লাগাতে চান। অস্ট্রেলিয়া সফরে শুধু সাদা বলে খেলার কথা ছিল তাঁর। পরে দলের প্রস্তুতিতে সাহায্যের জন্য নেট বোলার হিসেবে রেখে দেওয়া হয়েছিল সুন্দর ও টি নটরাজনকে। কিন্তু ভাগ্য তাঁদের দুজনের সামনেই টেস্ট অভিষেকের পথ খুলে দেয়। রবীন্দ্র জাদেজা ও অশ্বিনের চোটের সুযোগে শুধু অভিষেকই হয়নি, ভারতের জয়ের অন্যতম নায়কও বনে গেছেন সুন্দর।
নেটে লাল বল হাতে সময় কাটানোটা যে কত কাজে লেগেছে, সেটা জানিয়েছেন এই অফ স্পিনার, ‘আমাকে টেস্টের জন্য থেকে যেতে বলাটা আমার দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করেছে। তবে আমাদের পরিকল্পনা ও বোলিং কোচ ভরত অরুণ স্যারের পরামর্শ বেশি কাজে লেগেছে। অস্ট্রেলিয়ার উইকেটে যেহেতু পেস বেশি থাকে, আমার বলে অনেক বেশি ওভারস্পিন দিতে হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় আপনি বল ধীরগতিতে বাতাসে ছাড়তে পারবেন না এবং সেখানে মূল পরিকল্পনা হলো যত দ্রুত সম্ভব ওপর থেকে ফেলা। এতে উইকেট থেকে বেশি গতি পাওয়া যায় এবং আমি সেটাতেই মনোযোগ দিয়েছি। ব্রিসবেনে উইকেটে স্পিনারদের জন্য কিছু ছিল না। কিন্তু স্টিভ স্মিথকে টেস্টে প্রথম শিকার হিসেবে পাওয়াটা স্বপ্ন পূরণের মতো ঘটনা।’