ভারতকে হারানোর ফর্মুলা পান্ডিয়ার কাছ থেকেই পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়া সফরটা অনেক নাটকের জন্ম দিয়েই শুরু করেছে ভারত। প্রথমে সংক্ষিপ্ত সংস্করণের সহ–অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে বাদ দিয়েছিলেন নির্বাচকেরা। আলোচনা ও বিতর্কের মুখে আবার ডেকে পাঠানো হয়েছে তাঁকে। কিন্তু আবার অস্ট্রেলিয়ায় উড়াল দেওয়ার সময় তাঁকে ছাড়াই দল সাজিয়েছে ভারত। দল যখন অস্ট্রেলিয়ায় অনুশীলন করছে, রোহিত তখন ভারতে পুরো ফিট হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন।। এর মধ্যেই পুরো ব্যাপারটার ওপর বিরক্ত হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিরাট কোহলি।
মাঠের বাইরের এর আলোচনা মাঠেও প্রভাব ফেলছে হয়তো। ওয়ানডে সিরিজটা এরই মধ্যে হেরে বসেছে ভারত। টানা দুই ম্যাচেই ভারতীয় বোলিংকে পাড়ার মানের বানিয়ে ছেড়েছে অস্ট্রেলিয়া। রানের পাহাড় গড়ে ভারতকে চাপে ফেলেছে অস্ট্রেলিয়া। আজ সিডনিতে যদিও ৩৯০ রানের লক্ষ্যেও ভালোই লড়ছিল ভারত। কিন্তু ম্যাচের প্রথমাংশেই শেখানো হার্দিক পান্ডিয়ার কৌশলে ম্যাচ বের করে নিয়েছে স্বাগতিকেরা। ৫১ রানে হেরে ২-০ ব্যবধানে তিন ম্যাচের সিরিজে পিছিয়ে ভারত।
ওয়ানডেতে দ্বিতীয়বারের মতো কোনো দলের প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানই পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলল আজ। ২০১৩ সালের পর এবারও কীর্তিটা অস্ট্রেলিয়ার। প্রতিপক্ষও একই, ভারত। কিন্তু ২০১৩ সালে সে ম্যাচে বিরাট কোহলি ৫২ বলে সেঞ্চুরির এক ইনিংস খেলে, সেই ম্যাচটা অনায়াসে জিতিয়ে দিয়েছিলেন। আজ স্টিভ স্মিথের (১০৪) সেঞ্চুরির সঙ্গে ডেভিড ওয়ার্নার (৮৩), অ্যারন ফিঞ্চ (৬০), মারনাস লাবুশেন (৭০) ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের (৬৩ *) ফিফটির পরও তাই ভারত আশা হারাচ্ছিল না।
কোহলি চেষ্টা করেছেন। সাত বছর আগের সে ইনিংসের মতো খুনে ইনিংস খেলেননি। ৮৭ বলে করেছেন ৮৯ রান। কিন্তু যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন দলে আশা ছিল। অন্য প্রান্তে যোগ্য সহায়তা পাননি। শুধু লোকেশ রাহুল করেছেন ৭৬ রান। অস্ট্রেলিয়ান মূল বোলারদের ভালোই খেলেছেন তাঁরা। কিন্তু ঝামেলা পাকিয়েছেন ময়েজেস হেনরিকেস। দুর্দান্ত এক ক্যাচে কোহলিকে ফিরিয়েছেন। ম্যাচের ১৫ ওভার আগেই কোহলির বিদায়ই ম্যাচ থেকে ভারতকে ছিটকে দিয়েছে। এই অলরাউন্ডার বল হাতেও ঝামেলা পাকিয়েছেন।
৭ ওভার বল করেছেন হেনরিকেস। ওভারপ্রতি ৫ রান করেও দেননি। ৩৪ রান দিয়ে পেয়েছেন ১ উইকেট। ৩৯০ রানের লক্ষ্যে নামা এক দলকে কক্ষপথ থেকে ফেলে দিতে এমন এক স্পেলই যথেষ্ট। মজার ব্যাপার, রানপ্রসবা উইকেটে কেমন বল করতে হবে, সেটা দেখিয়ে দিয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়া। চোট থেকে সেরে ওঠায় মাঝে বহুদিন বল করেননি। এক বছর পর বল হাতে নিয়ে আজ ৪ ওভারে ২৪ রান দিয়ে ১ উইকেট পেয়েছেন পান্ডিয়া। সেটাও দুর্দান্ত ফর্মে থাকা স্মিথকে। আর ওই সময়েই দেখিয়ে দিয়েছেন সিডনির উইকেটে কীভাবে বল করা উচিত পেসারদের।
ম্যাচ শেষে কোহলি অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের প্রশংসা করতে গিয়ে একটু আক্ষেপের কথাও জানিয়েছেন, ‘কোনো পাত্তা পায়নি। বল হাতে আমরা কার্যকর ছিলাম না। টানা ভালো জায়গায় বল ফেলিনি। ওদের শক্তিশালী একটা ব্যাটিং লাইনআপ আছে এবং মাঠটা জানে। ওদের সংগ্রহ অনেক বেশি ছিল। আমরা ৩৪০ রান করেও ৫১ রানে হেরেছি। ওরা যেভাবে বল করেছে, তাতে সুযোগ সৃষ্টি হতোই এবং ওরা সে সুযোগ নিয়েছে। আমি আর লোকেশ যদি ৪০ ওভার পর্যন্ত থাকতাম, তাহলে চাপে ফেলতে পারতাম। উইকেটটা রান তোলার জন্য দারুণ ছিল।’
অস্ট্রেলিয়ার রান উৎসব আটকাতে হার্দিকের হাতে বল তুলে দিয়েছেন। তাতে প্রথমে সুবিধা হলেও পরে যে সেটা ক্ষতির কারণ হয়েছে, সেটা মজা করে জানিয়েছেন কোহলি, ‘এ উইকেটে কীভাবে বল করতে হবে, সেটা জানিয়ে দিয়েছে। অনেকগুলো কাটার দিয়েছে। কোনো কিছু না ভেবেই ওকে বল করতে বলেছিলাম।’ প্রতিপক্ষ অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চও জানালেন সে কথা, ‘হেনরিকেস খুবই সোজা একটি পরিকল্পনা নিয়ে বল করেছে আর বলের গতি বদলেছে। বিরাট যেমন বলল, হার্দিকের বোলিং থেকেই আমরা বুদ্ধিটা পেয়েছি। ওর গতি কমানো বলগুলো মারাই যাচ্ছিল না।’