বয়স নিয়ে খোঁচাই তাঁকে আরও ভালো বানাচ্ছে
মোহাম্মদ হাফিজ কেন পাকিস্তান দলে? এ প্রশ্ন ঠারেঠোরে নয়, সরাসরিই জিজ্ঞাসা করা হয়। কাগজে-কলমেই ৪০ পার হয়ে গেছেন এই অলরাউন্ডার। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার একটু দেরিতে শুরু করেছিলেন, তবে পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে কাটিয়ে দিয়েছেন ২২ বছর। তাঁর জাতীয় দলের সঙ্গী অনেকের তখনো জন্মই হয়নি। তবু এখনো খেলে যাচ্ছেন হাফিজ। শুধু খেলছেন বললে ভুল হবে, দাপটের সঙ্গেই খেলছেন।
পাকিস্তানের হয়ে ৪০ পেরিয়ে খেলে যাওয়ার রেকর্ড খুব বেশি নেই। বর্তমান কোচ মিসবাহ-উল-হকই নিকট অতীতের একমাত্র উদাহরণ। জাতীয় দলে বয়সী ক্রিকেটারদের দলে এত দিন সঙ্গী হিসেবে হাফিজ শোয়েব মালিককে পেতেন। কিন্তু নিউজিল্যান্ড সফরে তাঁকেও পাচ্ছেন না। যথাসম্ভব বয়স্ক খেলোয়াড়দের বাদ দিয়েই সফরের দল করা হয়েছে। কিন্তু সেখানেও আছেন এই অলরাউন্ডার। কীভাবে এখনো জায়গা ধরে রাখছেন হাফিজ? এ প্রশ্নের একটাই উত্তর, বয়স নিয়ে প্রশ্নই তাঁকে উজ্জীবিত করে তোলে।
পাকিস্তান সুপার লিগেও দারুণ ফর্মে আছেন হাফিজ। প্রথম এলিমিনেটরে বাদ পড়ার ঝুঁকিতে ছিল লাহোর কালান্দার্স। ব্যাটিং ধসে পড়া দলকে টেনেছেন অপরাজিত ৭৪ রানের ইনিংসে। প্রায় অসম্ভব মনে হওয়া এক জয় এনে দিতে ৪৬ বলের ইনিংসে ৯ চার ও ২ ছক্কা মেরেছেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজেও খেলেছেন গুরুত্বপূর্ণ এক ইনিংস। নিজেকে ধরে রাখার রহস্য জানাতে যা বলেছেন, তাতে তাঁর সমালোচকদের গায়ে জ্বলুনি ধরিয়ে দেবে, ‘যখনই আমার বয়স বা ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো প্রশ্ন করা হয়েছে বা সমালোচনা করা হয়েছে, আমি সেটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। আমাকে আরও ভালো খেলোয়াড় হওয়ার পেছনে এটা উদ্বুদ্ধ করেছে।’
২০১৮ সালে সর্বশেষ টেস্ট খেলা হাফিজ বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে নিয়েছেন। উদ্দেশ্যটা পরিষ্কার, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে নিজের ক্যারিয়ার দীর্ঘায়িত করা। ওয়ানডে থেকে অবসর না নিলেও পাকিস্তান দলের পরিকল্পনায় যে আপাতত তাঁর স্থান নেই, সেটা দেশের মাটিতে হওয়া তিন সিরিজে না ডেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে তাঁকে আবার টি-টোয়েন্টিতে ডেকে পাঠানোর পর আর সংক্ষিপ্ত সংস্করণে জায়গা হারাননি। এর মধ্যেই নিজের বোলিং অ্যাকশন শুধরে নিয়ে আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হাত ঘোরানোর লাইসেন্স জোগাড় করে নিয়েছেন।
নিউজিল্যান্ড সফরের দলে শোয়েব মালিক, মোহাম্মদ আমির ও আসাদ শফিকের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের জায়গা হয়নি। সর্বোচ্চ পর্যায়ে ভালো করার ক্ষুধাই টিকিয়ে রেখেছে হাফিজকে। ৪১-এ পা দিয়েও তাই আরও বহুদিন খেলে যেতে চান হাফিজ। বলেন, ‘আমি সব সময় মুক্তমনা হয়ে ক্রিকেট খেলেছি। কাউকে ভয় করিনি। ৪০-এ পৌঁছানোর পরও আমি যে এখনো খেলা উপভোগ করছি এবং দলের জন্য অবদান রাখতে পারছি, এতেই খুশি আমি।’
শুধু উপভোগ করছেন না, ভারতে অনুষ্ঠেয় ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও খেলতে চান হাফিজ। ২০২২ বিশ্বকাপও তো তাঁর হাতের নাগালেই!