কেমন হলো বিশ্বকাপের প্রস্তুতি
ব্যাটিং নিয়েও নেই অতৃপ্তি
টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ দল টানা তিনটি সিরিজ জিতলেও রান নেই ব্যাটসম্যানদের ব্যাটে। তাতেও চিন্তিত নন ক্রিকেটাররা।
জিম্বাবুয়ে সফর থেকেই টানা খেলার মধ্যে বাংলাদেশ দল। দেশে ফিরে পরপর খেলতে হয়েছে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি পাঁচ ম্যাচের টি–টোয়েন্টি সিরিজ। বিশ্বকাপের আর মাত্র এক মাসের সামান্য বেশি বাকি থাকলেও এই সময়টাতে তাই একটু নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ পেলেন বাংলাদেশ দলের কোচ–ক্রিকেটাররা।
বিশ্বকাপের আগের এই সময়টা পরিবারের সঙ্গেই কাটাবেন সবাই। পরশু নিউজিল্যান্ড সিরিজ শেষ হওয়ার পর কাল ক্রিকেটাররা ফিরে গেছেন নিজ নিজ ঘরে। ঢাকা ছেড়েছেন কোচিং স্টাফের বিদেশি সদস্যরাও। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে ওমানে সরাসরি বাংলাদেশ দলের বিশ্বকাপ ক্যাম্পে যোগ দেবেন রাসেল ডমিঙ্গোরা।
তার আগে আলোচনা একটাই—এই তিনটি টি–টোয়েন্টি সিরিজে কেমন হলো বাংলাদেশ দলের বিশ্বকাপ প্রস্তুতি? টানা তিনটি সিরিজ জেতার পর এটা মনে হওয়া স্বাভাবিকই যে বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ দলের প্রস্তুতি ভালো হয়েছে। জয়ের অভ্যাস নিয়ে তো যাওয়া যাচ্ছে বিশ্বকাপে! কিন্তু অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সিরিজের উইকেটের চরিত্রের কারণেই খুব জোর দিয়ে সেটি বলা যাচ্ছে না। ঘরের মাঠের সুবিধা নিয়ে মন্থর উইকেটে বাংলাদেশ দল হয়তো বড় দলের বিপক্ষে জেতার অভ্যাস গড়েছে। বোলাররাও ছন্দে আছে। কিন্তু এমন উইকেটে খেলার কারণে ব্যাটসম্যানদেরও যে ভুগতে হচ্ছে রান খরায়!
টি–টোয়েন্টিতে দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান অবশ্য বাংলাদেশের প্রস্তুতিকে ভালোই বলেছেন। কাল এলআরজি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠানের এক অনুষ্ঠানে সাকিব সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমাদের প্রস্তুতিটা খুবই ভালো হয়েছে। এর বড় কারণ, আমরা শেষ তিনটি সিরিজ জিততে পেরেছি। হয়তো উইকেট আর কম রানের ম্যাচ নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু জেতার কোনো বিকল্প নেই।’
ঘরের মাঠের দুই সিরিজে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতাও সাকিবকে খুব একটা ভাবাচ্ছে না। এর একটা কারণ, বিশ্বকাপের আগে ওমানের কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার যথেষ্ট সময় পাবে বাংলাদেশ দল। সঙ্গে যুক্তি দিয়েছেন, ‘এই ৯-১০টা ম্যাচে যারা খেলেছে, সবাই খারাপ ফর্মে আছে। উইকেটটাই এমন। এই পারফরম্যান্স গণ্য না করাই ভালো।’
কাল মুঠোফোনে কথা বলতে গিয়ে উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান নুরুল হাসানের কথায়ও খুঁজে পাওয়া গেল সাকিবের কথারই সুর। বিশ্বকাপের আগে ওমানে প্রস্তুতি ক্যাম্প ও প্রস্তুতি ম্যাচ দিয়ে মরুর দেশের কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার আশা তাঁর, ‘ব্যাটসম্যানরা মিরপুরে যেমন কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে খেলতে পেরেছে, সেটা আশা করি বিশ্বকাপেও পারবে।’ ঘরের মাঠের সুবিধাটা সবচেয়ে ভালো কাজে লাগিয়েছেন বাংলাদেশের স্পিনাররা। বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ দুই সিরিজেই ছিলেন দুর্দান্ত। নিউজিল্যান্ড সিরিজে টম ল্যাথামের সঙ্গে যৌথভাবে হয়েছেন ম্যান অব দ্য সিরিজ। তাঁর কথায়ও আত্মবিশ্বাস, ‘আমরা একটা জয়ী দল হিসেবে বিশ্বকাপে যাচ্ছি, এটাই বড় বিষয়। এটাই বড় প্রস্তুতি। যদি এই সিরিজগুলো না জিততাম, তাহলে কিন্তু আলোচনাটা ভিন্ন হতো।’
কন্ডিশনের কারণে দলে জায়গা পেতে প্রতিযোগিতা করতে হয়েছে পেসারদেরও। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সিরিজে দুই পেসার নিয়ে খেলেছে বাংলাদেশ দল। মোস্তাফিজুর রহমান ছিলেন ‘অটো চয়েজ’। বাকি একটি জায়গার জন্য লড়তে হয়েছে তিন পেসারকে। নিউজিল্যান্ড সিরিজের প্রথম চার ম্যাচে খেলা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন সামনে আনলেন এই বিষয়টিকেই, ‘জিততে থাকা দলে কিন্তু একটা সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকে। এক জায়গায় বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার থাকে। মোস্তাফিজ যেমন নিয়মিত খেলছে। বাকি আমরা যারা আছি, তাদের একটা জায়গায় জন্য লড়তে হচ্ছে। এতে সবারই ভালো করার সম্ভাবনা বাড়ছে। বিশ্বকাপের আগে এটা বোলিং আক্রমণের জন্য ভালো। দল না জিতলে এটা হতো না।’
অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর কাছেও জয়টাই আসল প্রস্তুতি। পরশু নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের ট্রফি হাতে নেওয়ার আগে সেই তৃপ্তিই খুঁজে পাওয়া গেল মাহমুদউল্লাহর কথায়, ‘গত তিন সিরিজে আমরা ভালো ক্রিকেট খেলেছি। সব কটি সিরিজই জিততে পেরেছি। এটা আমাদের জন্য বড় উৎসাহের কারণ হবে। আশা করি, বিশ্বকাপেও আমরা জয়ের ধারা বজায় রাখতে পারব।’