বাংলাদেশে ৩৫ হাজার টাকা, ভারতে দেড় লাখ
জাতীয় লিগ আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও আকর্ষণীয় করে তুলতে এবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। যে উদ্যোগটা নিয়ে ভীষণ আলোচিত ও প্রশংসিত হয়েছে—ক্রিকেটারদের ফিটনেসে কোনো ছাড় না দেওয়া। জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের প্রথম দুটি রাউন্ড খেলা বাধ্যতামূলক করা, ভালো উইকেটের প্রতিশ্রুতি দেওয়া তো আছেই। প্রথমবারের মতো জার্সিতে নাম-নাম্বারও চালু হচ্ছে এই জাতীয় লিগ দিয়ে।
জাতীয় লিগ আকর্ষণীয় করে তুলতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই—খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক। বর্তমানে জাতীয় লিগের প্রথম স্তরে খেলা ক্রিকেটাররা ম্যাচ ফি পান ৩৫ হাজার টাকা, দ্বিতীয় স্তরের ম্যাচ ফি ২৫ হাজার। দৈনিক ভাতা হিসেবে খেলোয়াড়েরা পান আড়াই হাজার টাকা। জাতীয় লিগে এক ভেন্যু থেকে আরেক ভেন্যুতে যাতায়াতের জন্য শুধু বাস ভাড়াটাই দিয়ে থাকে বিসিবি। কেউ বিমানে যাতায়াত করতে চাইলে সেটি করতে হবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে। কদিন আগে বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দীন চৌধুরীকে যখন প্রশ্ন করা হলো, এ বছর খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হবে কিনা, একটু অস্বস্তিতেই পড়ে গেলেন, ‘তেমন না (পারিশ্রমিক বৃদ্ধি)। সব মিলিয়ে হয়তো কিছু বাড়বে, তবে আলাদাভাবে তেমন না।’
১৯৯৯-০০ মৌসুমে শুরু হলেও জাতীয় লিগের ম্যাচ প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট হিসেবে মর্যাদা পায় ২০০০-০১ মৌসুম থেকে। তখন নির্দিষ্টভাবে ম্যাচ ফি না থাকলেও দিন প্রতি ৪০০ টাকা করে পেতেন খেলোয়াড়েরা। ১৯ বছরে ম্যাচ ফি কিংবা সুযোগ-সুবিধা প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়েনি বলেই দাবি ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের এক সিনিয়র খেলোয়াড়ের, ‘জাতীয় লিগের মান বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে, খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা কি বাড়ছে? বিপিএলে দৈনিক ভাতা পাঁচ হাজার টাকা, দলগুলো এক ভেন্যু থেকে আরেক ভেন্যুতে যাতায়াত করে বিমানে, থাকে পাঁচ তারকা হোটেলে। জাতীয় লিগে যেটা আশাই করা যায় না। একটা সময় যখন ১০-১২ হাজার টাকা ম্যাচ ফি ছিল তখন কিন্তু ম্যাচ সংখ্যাও আমাদের বেশি ছিল। এখন কিছুটা বেড়েছে, ম্যাচ সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া আছে। পারিশ্রমিক ভালো থাকলে আমার মনে হয় দেশের অনেক তারকা ক্রিকেটার এখানে খেলার আরও আগ্রহ পেত। যেকোনো কাজে পারিশ্রমিক সব সময়ই একটা নিয়ামক।’
গত বছর ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক প্রায় দুই গুণ বাড়িয়েছে। প্রথম শ্রেণির একটি ম্যাচ খেললে একজন খেলোয়াড় ম্যাচ ফি পাচ্ছেন প্রায় দেড় লাখ টাকা। রাজ্য দলের টিভিসত্ত্ব ও অন্যান্য আয় থাকলে সেটি ২ লাখ ছাড়িয়ে যাচ্ছে অনায়াসে। এমনকি দলগুলোর অনূর্ধ্ব-১৯ দলের একজন খেলোয়াড়ও ম্যাচ প্রতি ৪০ হাজার রুপি পান। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করতে অবশ্য আপত্তি আছে বিসিবির প্রধান নির্বাহীর, ‘ওদের বোর্ডের আয় কত? বিসিসিআইয়ের সঙ্গে আমাদের তুলনা করা ঠিক হবে না।’
তুলনা না হয় করা হলো না, কিন্তু বিসিবিও তো বিশ্বের অন্যতম ধনী ক্রিকেট বোর্ড। একজন ভারতীয় ক্রিকেটার রঞ্জি ট্রফি খেলে ম্যাচ ফি হিসেবে ২ লাখের বেশি পেলেও বাংলাদেশের একজন খেলোয়াড় জাতীয় লিগ খেলে সেটির তিন ভাগের এক ভাগ পারিশ্রমিক আশা করতেই পারেন।