বাংলাদেশকে 'পরাশক্তি' বানানোর পথ দেখছেন ডমিঙ্গো

রাসেল ডমিঙ্গো, বাংলাদেশ দলের নতুন হেড কোচ। ছবি: এএফপি
রাসেল ডমিঙ্গো, বাংলাদেশ দলের নতুন হেড কোচ। ছবি: এএফপি
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে হেড কোচের দায়িত্ব পেয়েছেন রাসেল ডমিঙ্গো। বাংলাদেশের দায়িত্ব পাওয়ার পর সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া প্রথম সাক্ষাৎকারে আশার কথাই শুনিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার এ কোচ


নতুন কোচ খোঁজার শুরুতে রাসেল ডমিঙ্গো বিবেচনায় ছিলেন না। অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, পল ফারব্রেস, মাইক হেসন, গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার, মিকি আর্থার, চন্ডিকা হাথুরুসিংহে লক্ষ্য ছিল বিসিবির। বাংলাদেশ দলের সঙ্গে কাজ করতে ডমিঙ্গোর আগ্রহটুকুই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। সাক্ষাৎকার দিতে ঢাকায় ছুটে এসেছেন। দুর্দান্ত উপস্থাপনায় মনে কেড়ে নেন বিসিবির কর্তাদের। স্বয়ং বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান বলেছেন দুই বছরের চুক্তিতে কোনো বিরতি ছাড়াই বাংলাদেশ দলের সঙ্গে প্রতিদিন কাজ করতে চান ডমিঙ্গো।

বিসিবি তাই ডমিঙ্গোকে এড়িয়ে যেতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত তাঁর হাতেই তুলে দেওয়া হয়েছে জাতীয় দলের দায়িত্ব। দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় দলের দায়িত্ব নেওয়ার আগে দেশটির নানা পর্যায়ের বয়সভিত্তিক দলগুলোর দায়িত্ব সামলেছেন ডমিঙ্গো। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলোয়াড়েরা যেখান—যেমন বয়সভিত্তিক দল—থেকে উঠে আসছে সেসব জায়গা নিয়েও আগ্রহী ডমিঙ্গো। জাতীয় দল তাঁর অগ্রাধিকারের জায়গা। তবে তার নিচে কী হচ্ছে, সেসবও জেনেবুঝে নিতে চান দক্ষিণ আফ্রিকান এ কোচ। ‘নতুন খেলোয়াড়েরা কোত্থেকে উঠে আসছে, সে ব্যাপারে আমি একটু ভূমিকা রাখার সুযোগ পেলে তা এগিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে মনে করি,’ ক্রিকইনফোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথাই বলেছেন ডমিঙ্গো।

নিচের ধাপগুলো থেকেই খেলোয়াড় পেয়ে থাকে জাতীয় দল, ডমিঙ্গোর কাছে তাই এ জায়গাগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এ নিয়ে তিনি কথা বলার সময় টেনেছেন দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের প্রসঙ্গ। তাঁদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতেই তরুণদের সুযোগ দিতে চান ডমিঙ্গো, ‘বাংলাদেশে কিছু অসাধারণ খেলোয়াড় আছে, তবে তরুণদের তুলে এনে সিনিয়রদের ওপর কিছুটা চাপ সৃষ্টি করা ভালো। তাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সুযোগও দিতে হবে। কারণ, শেষ পর্যন্ত সেখানে (জাতীয় দল) তাদেরই প্রয়োজন।’

তরুণদের মধ্যে কারা ভালো করছে এবং সম্ভাবনাময় সেসব হাই পারফরম্যান্স কোচ ও ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলে জেনে নেবেন ডমিঙ্গো। বাংলাদেশের বয়সভিত্তিক দলের ভালোই খোঁজখবর রাখেন ডমিঙ্গো তা বোঝা গেল তাঁর কথায়, ‘পরবর্তী সেরা খেলোয়াড়টি কে, তা জানতে হাই পারফরম্যান্স কোচ ও ম্যানেজারের সঙ্গে কাজ করাটা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। অনূর্ধ্ব-১৯ দল ইংল্যান্ডকে চারবার হারিয়েছে এবং ভারতের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়েছে। অর্থাৎ নিচের পর্যায়ে অবশ্যই কিছু প্রতিভাবান খেলোয়াড় আছে, যাদের জাতীয় দলের কাছাকাছি রাখা প্রয়োজন। খেলোয়াড়দের ভিত্তিটা আরও সম্প্রসারণ করা দরকার, তাদের উন্নতিও করাতে হবে যেন আগামী পাঁচ-ছয় বছরে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে পারে।’

অনেক সম্ভাবনা নিয়ে বিশ্বকাপে পা রেখেও ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০১৫ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে সেমিফাইনালে তোলা ডমিঙ্গো মনে করেন, ছোট কিছু ভুলের জন্য সেমিফাইনালে খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে এসব শিক্ষা পরের বিশ্বকাপে খেলোয়াড়দের কাজে লাগানোটা গুরুত্বপূর্ণ তাঁর কাছে, ‘বেশ কিছু ম্যাচে তারা জয়ের খুব কাছে ছিল। নিউজিল্যান্ড ম্যাচের কথাই ধরুন, একটা রানআউটের সুযোগ কাজে লাগাতে না পারায় সেমিফাইনালে খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। ভুল খুব ছোট ছোট। মূল বিষয় হলো মনস্তাত্ত্বিক বাধা টপকাতে হবে।’

দক্ষিণ আফ্রিকার বাইরে এই প্রথম কোচিং করাবেন ডমিঙ্গো। বাংলাদেশ দলে তিনি অবশ্য কোচিং স্টাফে চেনা মুখই পাচ্ছেন। ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জি, ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক ও পেস বোলিং কোচ চার্ল ল্যাঙ্গেভেল্ট—এ তিনজনই দক্ষিণ আফ্রিকার। ডমিঙ্গো জানিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে মুখিয়ে আছেন। বাংলাদেশ দলের কোচ হিসেবে তাঁর প্রথম পরীক্ষা আগামী মাসেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে। ৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে আফগানদের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে মাঠে নামবে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ দলের সম্ভাবনা নিয়েও আশার কথা শুনিয়েছেন ৪৪ বছর বয়সী এ কোচ, ‘গত পাঁচ-ছয় বছরে সবচেয়ে উন্নতি করা দল বাংলাদেশ। তাদের ভক্তকুল অবিশ্বাস্য। বোর্ডের সঙ্গে দেখা করে বুঝেছি তাদেরও পরিকল্পনা আছে। আর তরুণেরাও উঠে আসছে। তাই বিশ্ব ক্রিকেটে সত্যিকারের পরাশক্তি হয়ে উঠতে সবকিছু ঠিকঠাকই আছে বলে মনে করি, আর এ কারণেই বাংলাদেশকে নিয়ে আমি রোমাঞ্চিত।’