বাংলাদেশকে ১৮ বছর আগের তেতো স্মৃতি মনে করালেন মেয়ার্স
জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক ম্যাচটা ভোলা যায় না। টেস্ট অভিষেক তো স্মরণীয় হয়ে থাকে। কাইল মেয়ার্সের ক্ষেত্রে তাহলে কী বলবেন!
চট্টগ্রাম টেস্ট দিয়ে এ সংস্করণে অভিষেক ঘটেছে তাঁর। অভিষেক ম্যাচেই পাহাড়প্রমাণ চাপ সামলে শরীরে ক্যারিবীয়ান রক্তের জাত চেনাচ্ছেন বাঁহাতি এ ব্যাটসম্যান।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই দলে তারকা ক্রিকেটার বলে তেমন কেউ নেই। ক্রেগ ব্রাফেটের দল অনেকের চোখেই ‘দ্বিতীয় সারি’র। কিন্তু টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে ক্যারিবীয়ানদের লড়াই দেখে তা বোঝার উপায় আছে!
জয়ের জন্য ৩৯৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে কাল ৫৯ রান তুলতে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এখান থেকে অবিশ্বাস্য এক লড়াইয়ে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় বেশ খানিকটা পথ এগিয়ে গেছেন দুই অভিষিক্ত কাইল মেয়ার্স ও এনক্রুমা বোনার।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ উইকেটে ২২৬ রান তুলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জয় থেকে ১৬৯ রান ব্যবধানে পিছিয়ে সফরকারী দল।
শেষ দিনের ব্যাটিংয়ে মেয়ার্সের কথা আলাদা করে বলতেই হয়। স্পিনবান্ধব উইকেটে অন্য ব্যাটসম্যানরা যেখানে অতিরিক্ত সাবধানতা থেকে বাজে বলও সমীহ করে খেলেছেন, মেয়ার্সের সেখানে হাত খুলতে খেলতে বাধেনি।
মোস্তাফিজুর রহমানকে তাঁর প্রথম ওভারে ছক্কা মেরেছেন, মিরাজ–তাইজুলের খাটো লেংথের বল লেগ ও অফ সাইড দিয়ে করেছেন সীমানাছাড়া। ড্রাইভগুলোও দেখার মতো। আবার ভালো বলে ঠিকই জমাট তাঁর রক্ষণ। এ কৌশলে ব্যাট করেই অভিষেক টেস্টে মনে রাখার মতো এক সেঞ্চুরি তুলে নিলেন মেয়ার্স।
টেস্ট ইতিহাসে অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেকে চতুর্থ ইনিংসে সেঞ্চুরির দেখা পেলেন মেয়ার্স। ২০১২ সালে অ্যাডিলেডে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সর্বশেষ এ নজির গড়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ফাফ ডু প্লেসি।
১৯৫৯ সালে ম্যানচেস্টারে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম এ নজির গড়েন ভারতের আব্বাস আলী বেগ। বাকি পাঁচজন—ফ্রাঙ্ক হেইস (ইংল্যান্ড), লেন বাইচান (ওয়েস্ট ইন্ডিজ), মোহাম্মদ ওয়াসিম (পাকিস্তান), ইয়াসির হামিদ (পাকিস্তান) ও ডোয়াইন স্মিথ (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।
অর্থাৎ মেয়ার্সের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেট ইতিহাসে মাত্র দুজন ব্যাটসম্যান অভিষেক টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন।
২০০৪ সালে কেপটাউন টেস্টে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে স্মিথের সেই সেঞ্চুরির আগে প্রথম এ নজির গড়েছিলেন বাইচান—১৯৭৫ সালে লাহোরে পাকিস্তানের বিপক্ষে। তবে আট ব্যাটসম্যানের এ তালিকায় ইয়াসির হামিদের সেঞ্চুরিটি নিশ্চয়ই মনে থাকবে বাংলাদেশ দলের বর্তমান নির্বাচক কমিটির সদস্য হাবিবুল বাশারের।
২০০৩ সালে পাকিস্তান সফরে করাচিতে প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের দুই ইনিংসে ৭১ ও ১০৮ রানের দারুণ দুটি ইনিংস খেলেছিলেন হাবিবুল। কিন্তু অভিষিক্ত ইয়াসির হামিদের চতুর্থ ইনিংসে সেঞ্চুরির (১০৫) সুবাদে সে টেস্টে পাকিস্তানের কাছে ৭ উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ।
১৮ বছর পর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ইয়াসিরের সেই স্মৃতিই যেন ফিরিয়ে আনছেন মেয়ার্স। ইয়াসির হামিদের পর বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকে মেয়ার্স–ই প্রথম সেঞ্চুরি করলেন। ইয়াসিরের মতো দলের জয়ের দেখাও কি তিনি পাবেন?
প্রশ্নটির উত্তর মেলার সময় এখনো আসেনি। তবে মেয়ার্স–বোনার জুটি এর মধ্যেই দারুণ এক রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন। টেস্টে অভিষিক্ত হিসেবে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের জুটি এখন তাঁদের। এই টেস্টে বোনারেও অভিষেক ঘটেছে। এ প্রসঙ্গে আবারও উঠে আসবে ২০০৩ সালের সেই করাচি টেস্টের প্রসঙ্গ।
সে ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক ঘটেছিল রাজিন সালেহর। আর পাকিস্তান দলের হয়ে অভিষেক ঘটেছিল পাঁচজনের—ইয়াসির হামিদ, মোহাম্মদ হাফিজ, শাব্বির আহমেদ ও উমর গুলের।
এর মধ্যে ইয়াসির ও হাফিজ ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে দ্বিতীয় উইকেটে ১৩৪ রানের জুটি গড়েন। মেয়ার্স ও বোনার চতুর্থ ইনিংসে অভিষিক্ত হিসেবে সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়ার পথে ইয়াসির–হাফিজের গড়া রেকর্ডটি ভাঙলেন।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংসে চতুর্থ উইকেটে ৩৫৩ বলে ১৬৭ রানের জুটি গড়েছেন দুজন। মেয়ার্সের ইনিংসটি একেবারে নিখুঁত ছিল না। সকালের সেশনে স্লিপে তাঁর ক্যাচ ছাড়েন নাজমুল হোসেন শান্ত।
তার আগে তাইজুল ইসলামের বলে তাঁর বিপক্ষে নিশ্চিত এক এলবিডব্লু–র আবেদন নাকচ হওয়ার পর রিভিউ না নেওয়ার ভুল করে বাংলাদেশ। ১৭৮ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন অপরাজিত মেয়ার্স।
উপমহাদেশের মাটিতে টেস্ট অভিষেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়দের মধ্যে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি বল খেলার রেকর্ড গড়ার পথেও এগিয়ে যাচ্ছেন মেয়ার্স–বোনার জুটি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে এশিয়ায় টেস্ট অভিষেকে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ বল খেলার রেকর্ড বাংলাদেশের সাবেক কোচ গর্ডন গ্রিনিজের।
১৯৭৪ সালে বেঙ্গালুরুতে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংসে ২০৮ বলে ১০৭ রান করেছিলেন গ্রিনিজ। ১৯৪ বল থেকে দুইয়ে উঠে এসেছেন ৬০ রানে অপরাজিত থাকা বোনার। ১০৩ রানে অপরাজিত থাকা মায়ার্স ১৮০ বল খেলে তিনে।