বাংলাদেশ বোঝাল, কেন তারা সুপার লিগে সবার ওপরে
আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে জিতে যখন ১০০ পয়েন্ট হয়ে গেল বাংলাদেশের, পয়েন্ট পাওয়ার সম্ভাবনার হিসাবে হয়তো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সিরিজটাকে বাদ দিয়ে হিসাব করা মানুষের সংখ্যাই ছিল বেশি।
আফগানদের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচে হেরে যাওয়ায় তাই কত আফসোস! আহা, দক্ষিণ আফ্রিকায় তিন ম্যাচে কোনো জয় যদি না-ই আসে, তাহলে আফগানিস্তানের কাছে সেই হার না বড় হয়ে দাঁড়ায়। সুপার লিগে ১০০ পয়েন্ট পাওয়া প্রথম দল হয়েও বাংলাদেশের আনন্দের চেয়ে তখন দুশ্চিন্তা বেশি!
ফেব্রুয়ারিতে আফগানিস্তান সিরিজ থেকে নজরটা বর্তমানে ফেরালে দুশ্চিন্তাই লজ্জা পাবে। দক্ষিণ আফ্রিকায় ম্যাচ তো ম্যাচ, সিরিজই জিতে গেছে বাংলাদেশ! তাতে দক্ষিণ আফ্রিকা আর বাংলাদেশের ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে যাওয়া না যাওয়ার সমীকরণই হয়ে গেল দুই রকম।
দক্ষিণ আফ্রিকার সংবাদমাধ্যম আইওএল লিখেছে, ‘বাংলাদেশ বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা কেন এই মুহূর্তে আইসিসির সুপার লিগে সবার ওপরে। অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা, যারা কিনা এত দিন এটিকে খুব একটা মনোযোগ দেয়নি, এখন খুব মনোযোগী হবে এদিকে। বিশ্বকাপে সরাসরি সুযোগ পাওয়া যে এখন আর নিশ্চিত নয়।’
তবে অঙ্কের হিসাব কতটা কী বলে? ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের অনানুষ্ঠানিক বাছাইপর্ব এই সুপার লিগের শীর্ষে থাকা বাংলাদেশের সরাসরি বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত হয়ে গেছে? বিশ্লেষণ বলবে, শুধু বিশ্বকাপই নয়, হয়তো তামিম ইকবালের ইচ্ছা মেনে সেরা চারের মধ্যে থেকেই বিশ্বকাপে যাবে বাংলাদেশ।
পয়েন্ট তালিকায় বাংলাদেশ তো শীর্ষেই, দক্ষিণ আফ্রিকায় দুই ম্যাচ জিতে যাওয়ায় তামিম ইকবালের দলের পয়েন্ট এখন ১২০। সুপার লিগে ২৪ ম্যাচের মধ্যে এখনো ৬টি বাকি আছে বাংলাদেশের। সূচি অনুযায়ী তিনটি হওয়ার কথা ছিল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের মাটিতে, বাকি তিনটি ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে।
যদিও আয়ারল্যান্ড সিরিজটি নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। আগামী মে মাসে হওয়ার কথা থাকলেও সেটি স্থগিত করেছে আয়ারল্যান্ডের ক্রিকেট বোর্ড। সিরিজটি ২০২৩ সালে নিয়ে গেলেও সেটি সুপার লিগের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়োজন করা যাবে কি না, সেটি নিয়েই সংশয়। ২০২৩ সালের মে মাসে শেষ হবে সুপার লিগ।
অঙ্কের হিসাবে নিশ্চিত করতে গেলে তো বাকি ছয় ম্যাচে বাংলাদেশ কোনো পয়েন্ট পাবে না ধরে নিতেই হয়। সে ক্ষেত্রে সিরিজ হবে কি হবে না, সে অনিশ্চয়তা আপাতত বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা নির্ণয়ে অপ্রাসঙ্গিক। তা বাংলাদেশের পয়েন্ট শেষ পর্যন্ত ১২০-ই থাকবে ধরে নিলেও কি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সরাসরি যাওয়া নিশ্চিত?
হিসাবটা গোলমেলে বটে। অঙ্কের সহজ হিসাব যেভাবে হয়, সেভাবে বাংলাদেশ সব ম্যাচ হারবে আর বাকিরা সব ম্যাচ জিতবে ধরে নিলে পয়েন্ট তালিকার বাকি ১২ দলের প্রতিটিরই এখনো সুযোগ আছে বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে যাওয়ার। কিন্তু সব দলের পক্ষে তো সব ম্যাচই জেতা সম্ভব নয়, একে যে অন্যের বিপক্ষে খেলবে। সে ক্ষেত্রে এত ম্যাচ, এত সিরিজের প্রতিটির ফল ধরে সর্বশেষ পয়েন্ট তালিকা কী হতে পারে, বাংলাদেশের অবস্থান কী হবে, সেটি হিসাব করতে গেলে সুপারকম্পিউটার ছাড়া উপায় নেই।
কিন্তু সুপারকম্পিউটার যেহেতু হাতের নাগালে পাওয়া একটু কঠিন, ‘গড়’ হিসাবেই সমীকরণটা মেলানোর চেষ্টা করা যাক।
সুপার লিগে ভারতের অবস্থান কী হবে, সেটির ভিত্তিতে ঠিক হবে প্রথম সাত নাকি আট দল সরাসরি ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে যাবে। বিশ্বকাপের স্বাগতিক ভারতের অবস্থান আটের মধ্যে থাকলে প্রথম আট দলই যাবে বিশ্বকাপে, ভারতের অবস্থান আটের নিচে হলে যাবে প্রথম সাত দল। ভারতের অবস্থান নিয়ে মাথাব্যথা না রাখতে চাইলে সাতের মধ্যেই থাকতে হবে বাংলাদেশকে।
অবশ্য তামিম ইকবাল তো যেনতেনভাবে নয়, সেরাদের মধ্যে থেকেই বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে চান। বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়কের ইচ্ছা পূরণ করতে হলে সাত নয়, সেরা তিন-চারের মধ্যেই থাকতে হবে বাংলাদেশকে। এখন পর্যন্ত যা অবস্থা পয়েন্ট তালিকার, তাতে সেটিও সম্ভব বলে মনে হচ্ছে।
কীভাবে হিসাবটা করা হচ্ছে? ১৩ দলের মধ্যে ৭টি বিশ্বকাপে যাবে, অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক। সে ক্ষেত্রে জয়ের হারেও অন্তত যদি ৫০ শতাংশ ম্যাচ জেতে কোনো দল, তাদের সেরা সাতে থাকার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে। কিন্তু এই মুহূর্তে দলগুলোর পয়েন্ট তালিকার হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ৫০ নয়, ৪০ শতাংশ জয়ের হার থাকলেই বিশ্বকাপে যাওয়া অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যাবে।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জয়ের হার ৬৭ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি জয়ের হার নিউজিল্যান্ডের, তবে শতভাগ জয়ের হার থাকলেও তারা এখন পর্যন্ত আশ্চর্যজনকভাবে ম্যাচ খেলেছে মাত্র তিনটি। যে কারণে পয়েন্ট তালিকায় তাদের অবস্থান ১২ নম্বরে। জয়ের হারের হিসাবে নিউজিল্যান্ডের পর আছে পয়েন্ট তালিকার ৪ নম্বরে থাকা আফগানিস্তান, তাদের ৭৮ শতাংশ জয়ের হার এসেছে ৯ ম্যাচে। অস্ট্রেলিয়ারও ৬৬ শতাংশ জয়ের হার ৯ ম্যাচে।
এ পর্যন্ত কোন দলের জয়ের হার কেমন
সুপার লিগে প্রতিটি দল খেলবে ২৪টি ম্যাচ। অন্তত ১০ ম্যাচ খেলেছে, এমন দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জয়ের হার বাংলাদেশ (৬৭), ভারত (৬৭) ও ইংল্যান্ডের (৬০)। ৫০ শতাংশ জয়ের হারই আর কারও নেই। পাকিস্তানের জয়ের হার ৪৪ শতাংশ।
৪০ শতাংশের নিচে জয়ের হার কিন্তু ম্যাচ খেলে ফেলেছে ১০টির বেশি, এমন দলগুলোরই বিশ্বকাপে সরাসরি সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে কম। এমন দল আছে পাঁচটি—আয়ারল্যান্ড (৩৩ শতাংশ), শ্রীলঙ্কা (৩৩), ওয়েস্ট ইন্ডিজ (৩৩), দক্ষিণ আফ্রিকা (০.৩০) ও জিম্বাবুয়ে (২৫)। বাকি দলটা নেদারল্যান্ডস, ৭ ম্যাচ শেষে তাদের জয়ের হার ০.২৮।
বাকি ছয় ম্যাচের মধ্যে আয়ারল্যান্ডের একটা সিরিজ তো বাংলাদেশের বিপক্ষে, বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়ার দৌড়ে তাদের সিরিজ খেলতে হবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও। শ্রীলঙ্কার বাকি ছয় ম্যাচের তিনটি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে, তিনটি আফগানিস্তানের বিপক্ষে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৯ ম্যাচের ৩টি তুলনামূলক সহজ—নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে, বাকি ৬টি পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।
বাংলাদেশের কাছে সিরিজ হেরে বিশ্বকাপে যাওয়া নিয়ে ঘোরতর শঙ্কায় পড়ে যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার এখনো ম্যাচ বাকি ১১টি, এর মধ্যে ২টি নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ১ ম্যাচ হওয়ার পর স্থগিত হয়ে যাওয়া সিরিজে। বাকি ৯ ম্যাচ ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন সিরিজে।
আর ১২ ম্যাচে ৩ জয় পাওয়া জিম্বাবুয়ের বাকি ম্যাচের হিসাব? তারা সম্ভবত নিজেরাই এতক্ষণে সুপার লিগ ভুলে বিশ্বকাপের শেষ দুই দল নির্ধারণের বাছাইপর্ব নিয়ে ভাবনা শুরু করে দিয়েছে। তাদের বাকি চার সিরিজ অস্ট্রেলিয়া, ভারত, নেদারল্যান্ডস ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে।