পন্টিং যখন ‘চাক দে ইন্ডিয়া’র শাহরুখ খান
‘এই সত্তর মিনিট! এই সত্তর মিনিট তোমরা এমনভাবে খেলো, যেন খোদাও তোমাদের কাছ থেকে এই ৭০ মিনিট ছিনিয়ে নিতে না পারেন...!’
কল্পনা করুন তো একবার, শাহরুখ খান নয়, কথাগুলো আসছে রিকি পন্টিংয়ের কণ্ঠ থেকে। মেয়েদের হকি দল নয়, আইপিএলে দিল্লি ক্যাপিটালসের দলীয় সভায় কথাগুলো বলছেন পন্টিং!
হেঁয়ালি? কোথায় রিকি পন্টিং আর কোথায় শাহরুখ খান। দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা। এমনটাই মনে হচ্ছে না? পৃথ্বী শর কথা শুনলে আর হয়তো তা মনে হবে না।
শাহরুখ খান তো ভারতীয় চলচ্চিত্রের অবিসংবাদিত এক কিংবদন্তিই। আর অস্ট্রেলিয়াকে সর্বজয়ী বানানো কিংবদন্তি অধিনায়ক পন্টিং এখন ভারতের ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগ আইপিএলের দল দিল্লি ক্যাপিটালসের কোচ।
কলকাতা নাইট রাইডার্সের কোচ হলেও নাহয় কথা ছিল! তাহলে শাহরুখ খানের সঙ্গে পন্টিংয়ের একটা যোগসূত্র টানা সহজে যেত। কিন্তু তা না হলেও পন্টিংয়ের সঙ্গে শাহরুখের একটা মিল খুঁজে পেতে সমস্যা হচ্ছে না দিল্লির ভারতীয় ব্যাটসম্যান পৃথ্বী শর।
দিল্লি ক্যাপিটালসের ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও সাক্ষাৎকারে শ বলছিলেন, পন্টিং যখনই দলের উদ্দেশে বক্তৃতা দেন, তাঁর নাকি তখনই বলিউড চলচ্চিত্র ‘চাক দে ইন্ডিয়া’তে শাহরুখের বক্তৃতার কথা মনে পড়ে যায়।
ভারতের মেয়েদের হকি দলের সাফল্য ও সে পথের নানা চড়াই-উতরাই নিয়ে নির্মিত ‘চাক দে ইন্ডিয়া’ চলচ্চিত্রে মূল ভূমিকা শাহরুখের। চলচ্চিত্রের গল্পে একসময় ছেলেদের দলের হয়ে বিশ্বকাপ জিততে ব্যর্থ-সমালোচিত শাহরুখ পরে মেয়েদের দলকে বিশ্বকাপ জেতান। সে পথের নানা বাঁকে প্রেরণাদায়ী অনেক বক্তৃতা দলের উদ্দেশে রেখেছেন শাহরুখ, যার মধ্যে বিশ্বকাপ ফাইনালের আগে দলের উদ্দেশে ‘সত্তর মিনিটের’ বক্তৃতা সবচেয়ে বেশি শিহরণ ছড়ায়। চলচ্চিত্রে ‘চাক দে ইন্ডিয়া’ গানটিও ভারতজুড়ে বেশ প্রশংসিত হয়েছে।
দিল্লি ক্যাপিটালসে রিকি পন্টিং কথা বলার সময় নাকি সে রকম অনুভূতিই হয় পৃথ্বী শর। ‘যখনই রিকি স্যার (পন্টিং) কথা বলেন, মাথায় ওই গান বাজতে থাকে, শাহরুখ খানের গানটা,’ সাক্ষাৎকারে বলেছেন শ।
তা কোচ হিসেবে রিকি পন্টিং কেমন, সেটা তো মৌসুমজুড়ে বোঝা যাবে। মাঠে আর মাঠের বাইরের পন্টিংকে কেমন দেখছেন শ? সাক্ষাৎকারে সে উত্তরও দিয়েছেন ভারতীয় ব্যাটসম্যান, ‘দারুণ একজন মানুষ। মাঠে তিনি বসের মতো, তবে মাঠের বাইরে বন্ধু। তিনি আবার ফিরে আসায় আমি খুব খুশি, দেখা যাক কী হয়।’
শ এখন পন্টিংকে নিয়ে কথা বলছেন, কদিন আগে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ওয়েবসাইটে শকে নিয়ে পন্টিংয়ের কথাও বেশ শিরোনামে এসেছে। মাঝে বেশ কিছুদিন ফর্ম হারিয়ে ভোগা শ ভারতের টেস্ট দল থেকে জায়গা হারিয়েছেন, এরপর এবারের বিজয় হাজারে ট্রফিতে ২২৭ রানের অপরাজিত ইনিংসসহ মোট ৮০০-এর বেশি রান করেছেন।
সে সময়ে শকে নিয়ে পন্টিং বলেছিলেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা, ‘গত বছর ব্যাটিং নিয়ে অদ্ভুত এক তত্ত্ব ছিল ওর। যখন ম্যাচে রান পেত না, এরপর নেটেও ব্যাটিং করতে চাইত না। আবার যখন রান পেত ম্যাচে, নেটেও সারাক্ষণ ব্যাটিং করে যেতে চাইত।’
পুরো উল্টো ব্যাপার! পন্টিংও গত বছর আইপিএলে দিল্লির কোচ থাকার সময় এর কূলকিনারা করতে পারেননি, ‘চার-পাঁচটা ম্যাচে ও দশের নিচে রান করেছিল। আমি ওকে বললাম, ‘‘আমাদের নেটে গিয়ে এ নিয়ে কাজ করতে হবে। কিন্তু ও আমার চোখে তাকিয়ে বলল, ‘‘না, আজকে আমি (নেটে) ব্যাটিং করব না।’’ আমি বুঝেই উঠতে পারিনি কেন এমন করত ও।’
২১ বছর বয়সী ব্যাটসম্যানের সময় এখন অবশ্য বদলে গেছে। বিজয় হাজারে ট্রফিতে এক টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড গড়েছেন, শিরোপা জিতিয়েছেন তাঁর দল মুম্বাইকে। আগামী ১০ এপ্রিল চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে যখন শুরু হবে দিল্লি ক্যাপিটালসের এবারের আইপিএল, পৃথ্বী শর ব্যাটে বিজয় হাজারে ট্রফির রানের বানই দেখতে চাইবেন পন্টিংরা।