পছন্দের আইপিএল একাদশে কোহলিকেই অধিনায়ক রাখলেন না ডি ভিলিয়ার্স
প্রথম তিন মৌসুমে দিল্লি ডেয়ারডেভিলসে ছিলেন। চতুর্থ মৌসুমে সেই যে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুতে (আরসিবি) যোগ দিয়েছেন এবি ডি ভিলিয়ার্স, এরপর থেকে বিরাট কোহলির পাশাপাশি তিনিও ফ্র্যাঞ্চাইজিটার মূল অংশ হয়ে গেছেন।
২০১৩ সাল থেকে কোহলির অধিনায়কত্বেই খেলছেন। কিন্তু নিজের পছন্দের আইপিএল একাদশের কথা জানানোর সময় অধিনায়কত্বের আসনটাতে আর কোহলিকে রাখলেন না দক্ষিণ আফ্রিকান সাবেক ব্যাটসম্যান!
তাহলে কাকে রেখেছেন? রোহিত শর্মা? সেটি হলে অবশ্য বড় খবরই হতো! রোহিত মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের অধিনায়ক হয়ে কাড়ি কাড়ি আইপিএল জিতেছেন বটে, কিন্তু ২০১৯ বিশ্বকাপের পর থেকেই ভারতীয় দলে কোহলি-রোহিতের দ্বন্দ্ব বেশ বড় আলোচনার বিষয়।
কোহলির অধীনে আইপিএলে এত বছর খেলা ডি ভিলিয়ার্স সেই রোহিতকেই নিজের আইপিএল একাদশের অধিনায়ক বানালে সেটি আলোচনার ঝড় তুলতই!
তবে রোহিতও নয়, অধিনায়ক হিসেবে ‘এবি’ বেছে নিয়েছেন ক্রিকেট বিশ্বে অধিনায়কত্বের ব্যাকরণই বদলে দেওয়া একজনকে— মহেন্দ্র সিং ধোনি। তবে মজার ব্যাপার, দলে কোহলি-রোহিতদের সবাইকে নিলেও নিজের জায়গা নিয়েই সংশয়ে ডি ভিলিয়ার্স!
আর মাত্র সপ্তাহখানেকের অপেক্ষা, শুরু হতে যাচ্ছে এবারের আইপিএল। দলগুলোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে, সংবাদমাধ্যমে চলছে দলগুলোর শক্তি-দুর্বলতা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ। আরসিবির হয়ে খেলতে এরই মধ্যে ভারতে চলেও এসেছেন ডি ভিলিয়ার্স।
তাঁকে স্বাগত জানাতে বেঙ্গালুরুর দলের টুইটার অ্যাকাউন্টের ক্যাপশনটিও বেশ নজর কেড়েছে। গতকাল চেন্নাইয়ে আরসিবির জৈব সুরক্ষাবলয়ে ঢুকেছেন ডি ভিলিয়ার্স, সে খবর জানানো টুইটে আরসিবি লিখেছে, ‘এইমাত্র নভোযান নিজ ঠিকানায় নেমে এসেছে!’
জৈব সুরক্ষাবলয়ে ঢুকে যাওয়ার আগেই ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ক্রিকবাজের সঙ্গে আলাপে নিজের পছন্দের একাদশের কথা জানিয়েছেন ‘৩৬০ ডিগ্রি’ ব্যাটসম্যান। দলে সাতজনই ভারতীয় ক্রিকেটার। ভারতের বাইরের ক্রিকেটারদের মধ্যে একাদশে নিশ্চিতভাবেই জায়গা পাচ্ছেন ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস, আফগানিস্তানের রশিদ খান, দক্ষিণ আফ্রিকার কাগিসো রাবাদা।
এ তো গেল দশটি জায়গা, আরেকটি জায়গার লড়াইয়েই নিজেকে নিয়ে সংশয়ে ডি ভিলিয়ার্স। সে জায়গার লড়াইয়ে নিজের পাশাপাশি রেখেছেন নিউজিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসন ও অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ স্মিথকে!
নিজের আইপিএল একাদশ নিয়ে প্রশ্নে শুরুতেই ডি ভিলিয়ার্স যেন বিনয়ের পরাকাষ্ঠা, ‘গতকাল রাতেই ভাবছিলাম, আমি যদি আইপিএলে নিজের পছন্দের একটা একাদশ গড়তে চাই আর সেখানে নিজেকে রাখি, তাহলে দলটা কেমন বাজে দেখাবে!’ ডি ভিলিয়ার্স কোনো দলে থাকলে সে দল বাজে দেখানোর প্রশ্নও আসে! কীভাবে? দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানের কথা শুনে ক্রিকেটপ্রেমী চোখের ভ্রুকুটি হয়তো ডি ভিলিয়ার্সকে উত্তর দিয়ে যাবে।
তবে দলের অন্যদের নাম দেখার পর যে কারও মনে হবে, এই একাদশ একসঙ্গে খেললে তাদের হারানো হয়তো এই ধরাধামে কোনো দলের পক্ষে সম্ভব হতো না। ব্যাটিং উদ্বোধনের জন্য ডি ভিলিয়ার্সের পছন্দ শুনুন, ‘দিল্লিতে যাঁর সঙ্গে শুরু করতাম, এমন একজনকে বেছে নিচ্ছি—বীরু (বীরেন্দর শেবাগ)। এক নম্বরে সে। এর পাশাপাশি এমন একজন থাকবে যে গত পাঁচ বছরে বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেট উপহার দেওয়া ক্রিকেটারদের একজন। দুই নম্বরে থাকবে রোহিত শর্মা।’
তিনে কে নামবেন, তা নিয়ে এক সেকেন্ডের জন্যও ‘এবি’র সংশয় নেই, ‘৩-এ তো অবশ্যই বিরাট (কোহলি) থাকবে।’ কিন্তু ৪ নম্বর জায়গাটা নিয়েই হবে তীব্র লড়াই। যুযুধান তিনজনের নাম দেখেই তো বুঝে নেওয়া যায়, এই একাদশের ভার কেমন হবে।
যেখানে ৪ নম্বরের জন্য এমন তিনজনের লড়তে হচ্ছে! ডি ভিলিয়ার্স বললেন, ‘(কোহলির পর ৪ নম্বরে) হয় উইলিয়ামসন, অথবা স্মিথ বা আমি...এখানে দুজন থাকবে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে।’ বদলি খেলোয়াড়ের তালিকাও বেশ আকর্ষণজাগানিয়া হবে বটে!
পরের সাতটি জায়গা নিয়ে অবশ্য একটুও ভাবতে হলো না ডি ভিলিয়ার্সকে। যেন এক নিশ্বাসে বলে গেলেন দলের বাকিদের নাম। পাশাপাশি তাঁর দলের অধিনায়ক যে ধোনিই থাকবেন, সেটিও জানানো হয়ে গেল ডি ভিলিয়ার্সের, ‘পাঁচে বেন স্টোকস, ছয়ে খেলবে অধিনায়ক এমএস (ধোনি), আর এরপর সাতে আমি রাখব জাদ্দু—মিস্টার জাদেজাকে (রবীন্দ্র জাদেজা)।’ ব্যাটসম্যানদের ভাগ গেল, এরপর বোলারদের ভাগটাও সহজেই বলে দিলেন ডি ভিলিয়ার্স, ‘৮ নম্বরে রশিদ খান, ৯ নম্বরে ভুবি (ভুবনেশ্বর কুমার), ১০ নম্বরে কাগিসো রাবাদা, ১১ নম্বরে (যশপ্রীত) বুমরা।’
তবে আইপিএলের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক সুরেশ রায়না কিংবা সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি লাসিথ মালিঙ্গাকে হিসাবে রাখেননি ডি ভিলিয়ার্স।
ডি ভিলিয়ার্সের পছন্দের আইপিএল একাদশ:
বীরেন্দর শেবাগ, রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, কেইন উইলিয়ামসন/ স্টিভ স্মিথ/এবি ডি ভিলিয়ার্স, বেন স্টোকস, এমএস ধোনি (অধিনায়ক ও উইকেটকিপার), রবীন্দ্র জাদেজা, রশিদ খান, ভুবনেশ্বর কুমার, কাগিসো রাবাদা, যশপ্রীত বুমরা।