নিজের কিপটেমির রেকর্ড ভাঙলেন সাকিব
করোনার মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেট ছিল না। ভারত-অস্ট্রেলিয়া টেস্টে দৃশ্যটা দেখে ‘দুধের সাধ ঘোলে মেটাতে’ হয়েছে। ব্যাটসম্যানের নিকটতম দুই প্রতিবেশী—সিলি পয়েন্ট ও শর্ট লেগ। তাদের রেখে বল করেছেন দুই দলের স্পিনার। সেই দৃশ্যটা যদি দেখা যায় ওয়ানডেতে, তা-ও সাকিব আল হাসানের সৌজন্যে! ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আজ প্রথম ওয়ানডেতে বেশির ভাগ সময় এ দুটি পজিশনে ফিল্ডার রেখে বল করেছেন সাকিব। এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ হোক না কেন নিখাদ ক্যারিবীয় ব্যাটিংয়ের খোলস, তবু ১০ মাসের বেশি সময় পর দেশের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে বোলারদের এই আক্রমণাত্মক মনোভাব ভালো লাগবেই।
সাকিবেরও নিশ্চয়ই ভালো লেগেছে। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে এ ম্যাচ দিয়ে মাঠে ফিরলেন দেশের হয়ে। ৭.২-২-৮-৪ বোলিং ফিগার বলছে এই উপলক্ষ তিনি ভালোই রাঙিয়েছেন। পোলার্ড-হেটমায়াররা যদি থাকতেন তাহলে হয়তো লড়াই আরও জমত। কিন্তু এই ম্যাড়মেড়ে লড়াইয়েও তো বলটা ঠিক জায়গায় ফেলতে হয়, ফিল্ডার বুঝে বল করতে হয়! বোলিংয়ের এই মৌলিক অনুমিতি মেনেই আজ দারুণ এক রেকর্ড গড়েছেন সাকিব। বলা ভালো, নিজের রেকর্ড তিনি নিজেই ভেঙেছেন। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে ইনিংসে সবচেয়ে কিপটে বোলিংয়ের রেকর্ড আগেও সাকিবেরই ছিল। আজ সে রেকর্ডই আরও সুশ্রী করলেন তিনি।
১১তম ওভারে বোলিংয়ে এসেই বাঁক পেয়েছেন সাকিব। দ্বিতীয় বলেই তাঁর বাঁকের কাছে হার মেনে স্লিপে উইকেট দিতে বসেছিলেন আন্দ্রে ম্যাকার্থি। তাঁকে পরে ‘ফ্লাইট’-এ পরাস্ত করে বোল্ড করেছেন সাকিব। বোঝাই যাচ্ছিল, দুপুরে মেঘাচ্ছন্ন আঁধার কন্ডিশনে সাকিবের বল খেলতে সমস্যা হচ্ছিল ক্যারিবীয়দের। ফ্লাডলাইটের আলো থাকলেও দিনের বেলায় তা মোটেও তো আর স্বাভাবিক না। মানিয়ে নিতে অন্তত সময় লাগে। ক্যারিবীয়দের সে সুযোগটা দেননি বাংলাদেশের বোলাররা, বিশেষ করে সাকিব। সামনে দুই ফিল্ডার রেখে চেপে ধরেছিলেন পুরোপুরি। ম্যাকার্থির উইকেট তাঁকে এনে দিয়েছে বাংলাদেশের মাটিতে প্রথম বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে ১৫০তম উইকেট। তবে সাকিব এই অর্জনের চেয়েও খুশি হবেন ফেরার ম্যাচে লাইন-লেংথ ঠিক রেখে বল করতে পারায়।
ফ্লাইট, বাঁক, বল তোলা থেকে আর্মার—উইকেটের সাহায্য নিয়ে তৃণের সব অস্ত্রই ঘঁষেমেজে দেখেছেন সাকিব। সামনে দুজন ফিল্ডার থাকায় ক্যারিবীয়রাও স্বাভাবিকভাবে তাঁর স্পিন খেলতে পারেনি। ভালো লেংথের বলগুলো সামনের দুই ফিল্ডারের হাতেই জমা পড়েছে। সাকিবকে হাত খুলে সেভাবে আক্রমণ করতে পারেননি কোনো ব্যাটসম্যান। তাঁর বোলিং ফিগারে তাই কোনো বাউন্ডারি হজম নেই।
৪৪টি বল করে ২টি মেডেন নিয়েছেন সাকিব। আর ৮ রান খরচায় নিয়েছেন ৪ উইকেট। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে ইনিংসে সবচেয়ে কিপটে বোলিংয়ের রেকর্ডটি সাকিব গড়েছিলেন এক যুগ আগে। সময়ের হিসেবে এক যুগ ১ দিন আগে! মানে ২০০৯ সালের ১৯ জানুয়ারি এই শেরেবাংলাতেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১০ ওভারে ৪ মেডেনসহ ১১ রানে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব। ইকোনমি রেট ছিল ১.১০। আজ ২০ জানুয়ারি নিজের সেই রেকর্ডটি নতুন করে লেখালেন সাকিব। আজ সাকিব ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ১.০৯।
ওয়ানডেতে বাংলাদেশের কিপটে বোলিং (কমপক্ষে ৫ ওভার)
এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে সাকিবের পারফরম্যান্স খানিকটা অনুজ্জ্বল লাগতেই পারে অনেকের কাছে। সে জন্য পরিসংখ্যান নিয়ে হাজির হতে পারেন অনেকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ আজ যে ১১ জনের দল মাঠে নামিয়েছে, তাদের মোট ম্যাচসংখ্যা ১০৫, রান ১৭৯৬, সেঞ্চুরি ২টি, ফিফটি ৮টি, উইকেটসংখ্যা ৫৩ ও ক্যাচসংখ্যা ২৮টি। এই দল কতটা অনভিজ্ঞ, তা বোঝাতে ওয়ানডেতে সাকিবের একার ক্যারিয়ারই যথেষ্ট—ম্যাচসংখ্যা ২০৬, রানসংখ্যা ৬৩২৩, উইকেট ২৬০ ও ক্যাচসংখ্যা ৫০।
অর্থাৎ অভিজ্ঞতায় সাকিবের একার সামনেই অসহায়!