ধোনি সবচেয়ে সম্মানিত, কোহলি-পান্ডিয়া বিতর্কিত
ব্যাট হাতে বিরাট কোহলির আগ্রাসনের ভক্ত কম নয়। কোহলির হার না মানসিকতা, ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা, সব ধরনের শট খেলার দক্ষতা, যে কোনো কন্ডিশনে মানিয়ে নেওয়ার যোগ্যতা...ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলির গুণ অগণিত। কিন্তু ম্যাচের সঙ্গে মানসিকভাবে খুব বেশি জড়িয়ে যান বলেই কি না, মাঠে মাঝে মধ্যে তাঁর আচরণে আগ্রাসনটা অনেকের চোখে মাত্রা ছাড়িয়ে যায়! সেটির সমালোচনাও করেন অনেকে।
প্রসঙ্গ যখন আবেগের প্রকাশ, মহেন্দ্র সিং ধোনি যেন ঠিক উল্টোদিকে। বয়সের সঙ্গে তাঁর ব্যাট হাতে ঝড় তোলার ক্ষমতায় আস্তে আস্তে ভাটা পড়তে শুরু করেছে কি না, সে প্রশ্ন তোলা যায় বটে! তবে মাঠে ধোনির মাথা ঠান্ডা রাখার ক্ষমতা অসাধারণ। ম্যাচের পরিস্থিতি যা-ই হোক, অধিনায়ক কিংবা ব্যাটসম্যান—দুই ভূমিকাতেই মাথা ঠান্ডা রাখতে পারার ক্ষমতা ধোনিকে ‘মিস্টার কুল’ উপাধিও এনে দিয়েছে।
কোহলি ও ধোনি—দুজনের দুই রূপের ছাপই আবার পড়েছে ব্র্যান্ড হিসেবে তারকাদের মূল্য নিয়ে প্রকাশিত সর্বশেষ র্যাঙ্কিংয়ে। ভারতের ইনস্টিটিউট অব হিউম্যান ব্র্যান্ড (আইআইএইচবি) পরিচালিত ‘টিয়ারা’ প্রতিবেদনে ভারতের ক্রিকেটার তো বটেই, সব খেলা মিলিয়ে ক্রীড়াক্ষেত্রেই ধোনিকে বলা হচ্ছে সবচেয়ে সম্মানিত। আর কোহলি আছেন বিতর্কিতদের তালিকায়। তবে বিতর্কিত তালিকার হিসেবে কোহলিকেও ছাপিয়ে গেছেন আরেক ভারতীয় ক্রিকেটার হার্দিক পান্ডিয়া। শুধু ক্রীড়াক্ষেত্রই নয়, ভারতের সব ক্ষেত্র মিলিয়েই সবচেয়ে বিতর্কিত তারকা নির্বাচিত হয়েছেন পান্ডিয়া!
টিয়ারা রিপোর্ট কী? একজন তারকা সাধারণ জনগণের ভরসা (ট্রাস্ট) কতটুকু অর্জন করতে পেরেছেন, তাঁর নিজের স্বকীয়তা (আইডেনটিটি) কেমন, শারীরিক গড়নে কিংবা চলন-বলনে কতটা আকর্ষণ (অ্যাট্রাকটিভ) জাগান ওই তারকা, তাঁকে মানুষ কতটা সম্মান (রেসপেক্ট) করে আর সব মিলিয়ে তাঁর আবেদন (অ্যাপিল) কেমন—এই দিকগুলো নিয়ে হয় বিশ্লেষণ। আর এই দিকগুলোর ইংরেজি শব্দের প্রথম অক্ষর নিয়ে নাম দেওয়া হয়েছে টিয়ারা। বলিউড, টিভি ও ক্রীড়া—এই তিন ক্ষেত্রের তারকাদের নিয়েই মূলত গবেষণা হয়। এই তিন ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে কে এগিয়ে সেটি দেখানো হয়। আবার সব ক্ষেত্র মিলিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে কে, সেটিও দেখা হয়। এর বাইরে জুটি হিসেবে কারা এগিয়ে, সেটিও গবেষণা করে দেখা হয়।
আইপিএলে এবার সময়টা ভালো কাটছে না ধোনির। তাঁর অধীনে তিনবার আইপিএল জেতা চেন্নাই সুপার কিংস এবার গ্রুপ পর্বেই বাদ পড়েছে। সে ক্ষেত্রে এই গবেষণায় ক্রীড়াক্ষেত্রে সবচেয়ে সম্মানিত হিসেবে মনোনীত হওয়া তাঁর মুড কতটা ভালো করবে, তা নিয়ে সংশয় আছে। তবে সবচেয়ে সম্মানিত তারকাদের তালিকায় ৮৭ রেটিং নিয়ে ক্রীড়াক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক। মেয়েদের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত ক্রীড়াবিদ বক্সার ম্যারি কম, তাঁর রেটিং ৬৭.৮।
আর সবচেয়ে বিতর্কিত তারকার তালিকায় ক্রীড়াক্ষেত্রে দুইয়ে আছেন কোহলি, তাঁর রেটিং ৪০.২। মেয়েদের মধ্যে সবচেয়ে বিতর্কিত ক্রীড়াবিদ নির্বাচিত হয়েছেন টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা (৩৩.৩ রেটিং)। বলিউড, টিভি, খেলা—সব ক্ষেত্র মিলিয়ে কোহলি আছেন বিতর্কিতদের তালিকায় চারে। শীর্ষস্থানটি দখলে রেখেছেন ভারতীয় অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া, তাঁর রেটিং ৫৪.৮!
অবশ্য কোহলি ও সানিয়ার প্রাপ্তিও আছে। বিতর্কিতদের তালিকার পাশাপাশি তাঁরা দুজন জায়গা করে নিয়েছেন সবচেয়ে গ্ল্যামারাস ক্রীড়াবিদের তালিকায়ও। ৬৫.৯ রেটিং নিয়ে কোহলি সবচেয়ে গ্ল্যামারাস পুরুষ ক্রীড়াবিদ। সানিয়া সবচেয়ে গ্ল্যামারাস নারী ক্রীড়াবিদ, তাঁর রেটিং ৫৪.৭। সবচেয়ে গ্ল্যামারাস জুটির তালিকায়ও আছেন কোহলি। বলিউড অভিনেত্রী আনুশকা শর্মার সঙ্গে তাঁর জুটি ৫৮.৪ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে সবচেয়ে গ্ল্যামারাস জুটি নির্বাচিত হয়েছে। অন্যদিকে সবচেয়ে সুন্দর ক্রীড়াবিদ নির্বাচিত হয়েছেন ভারতের মেয়েদের দলের ক্রিকেটার মিতালি রাজ, তাঁর রেটিং ৪৮.৮।
সবচেয়ে সম্মানিত ক্রীড়াবিদের পাশাপাশি সবচেয়ে ভার্সাটাইল বা বৈচিত্র্যময় ক্রীড়াবিদও নির্বাচিত হয়েছেন ধোনি, সেখানে তাঁর রেটিং ৬০.৪। মেয়েদের মধ্যে সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় ক্রীড়াবিদ ক্রিকেটার শেফালি ভার্মা, তাঁর রেটিং ৫৪.৮। জুটির তালিকায় এখানেও কোহলি-আনুশকার জয়জয়কার। ৫১.৩ রেটিং নিয়ে সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় জুটি নির্বাচিত হয়েছে ‘ভীরুশকা’ ডাকনাম পেয়ে যাওয়া কোহলি-আনুশকা জুটি।
গবেষণায় নির্বাচন করা হয়েছে সবচেয়ে হার্টথ্রব তারকাও। সেখানে ক্রীড়াক্ষেত্রে ছেলেদের মধ্যে সবচেয়ে হৃদয় কাঁপানো তারকা নির্বাচিত হয়েছেন ভারতের কাবাডি খেলোয়াড় রাহুল চৌধুরী, তাঁর রেটিং ৪৪.৭। মেয়েদের মধ্যে সবচেয়ে হৃদয় কাঁপানো ক্রীড়াবিদ ভারতের ক্রিকেট দলের ব্যাটসম্যান স্মৃতি মানধানা।