ভাগ্যই ঠিক করে রেখেছিল, ক্যাচটা কর্নওয়ালই ধরবেন। অন্য প্রান্তে নিজের বোলিং ঠিক জুতসই হচ্ছিল না হঠাৎ। তাঁর ওপর চড়াও হয়ে মেহেদী হাসান মিরাজ প্রায় অবিশ্বাস্য এক জয়ের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছিলেন বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের টপ অর্ডারকে ঘোল খাইয়ে দেওয়া রাকিম কর্নওয়ালকে দিনে প্রথমবারের মতো অসহায় মনে হচ্ছিল তখন। জোমেল ওয়ারিক্যানকে দারুণভাবে সামলাচ্ছিলেন আবু জায়েদ আর অন্যদিকে মিরাজ রান তুলছিলেন কর্নওয়ালের বলে।
অফ স্পিনারের শেষ বলে রান নেওয়ায় বেশ অনেকক্ষণ পর ওয়ারিক্যানের মুখোমুখি হয়েছিলেন মিরাজ। একটু আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে থাকা মিরাজ নিজের ছন্দ বদলাতে পারেননি। তাই ওয়ারিক্যানের বলটাও সোজা ব্যাটে খেলা হয়নি তাঁর। ব্যাটের ছোঁয়া নিয়ে বল মাটি ছুঁতে যাবে, এ সময় বলটা লুফে নিলেন কর্নওয়াল। সঙ্গে সঙ্গে উদ্দাম আনন্দে মেতে উঠল ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। বাংলাদেশকে ১৭ রানে হারিয়ে দিয়ে সিরিজ জিতে নিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
সিরিজ জেতানো ম্যাচের শেষ ইনিংসে এর আগেও দুটি ক্যাচ নিয়েছেন কর্নওয়াল। বল হাতেও নিয়েছেন চার উইকেট। আর প্রথম ইনিংসের পাঁচ উইকেট প্রাপ্তির পর এ ম্যাচের সেরা নিয়ে তাই কারও মনে কোনো সন্দেহ ছিল না। মিরপুরের এই টেস্ট শাসন করেছেন ভুল কারণে এত দিন পরিচিত হয়ে আসা এই অফ স্পিনার।
আধুনিক ক্রিকেট এখন অ্যাথলেটদের। খেলোয়াড় মানেই তো অ্যাথলেট—এই আপ্ত বাক্য নয়, শারীরিক গঠন, ক্ষিপ্রতা ও ফিটনেস মিলিয়েই এখন ক্রিকেটাররা সুপার অ্যাথলেটের পর্যায়ে পড়েন। সে যুগে এসে সবচেয়ে বেশি ওজনধারী টেস্ট ক্রিকেটারের রেকর্ড ভেঙেছেন রাকিম কর্নওয়াল। তাই তাঁর অফ স্পিনের চেয়ে বপুর দিকেই নজর থাকে সবার। কিন্তু নিজের কাজটা যে কত ভালো পারেন, সেটা প্রথম টেস্টেই দেখিয়েছিলেন। দ্বিতীয় টেস্টে আরও ভালো করে দেখালেন।
গতকালই বলেছিলেন, নিজের শক্তির জায়গাটা ব্যবহার করতে পারেন বলেই সাফল্য পাচ্ছেন। শক্তির জায়গা হলো ধৈর্য ধরে একটানা ভালো জায়গায় বল করে যাওয়া। শুধু ধৈর্য ধরে বল করে গেছেন, আর বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ধৈর্য পরীক্ষায় হার মেনে আউট হয়েছেন তাঁর বলে। আর এমন শারীরিক গঠনেও স্লিপে কত দুর্দান্ত।
বাংলাদেশের তরুণ ফিল্ডাররা যেখানে সহজ ক্যাচ ফেলছেন, সেখানে কর্নওয়ালের হাত ফসকাচ্ছে না কোনো বল। ৯ উইকেট নিয়ে ম্যাচ জেতানো কর্নওয়াল বললেন সাফল্যের সহজ সূত্রের কথা, ‘এটা বেশ ভালো পারফরম্যান্স। প্রথম দিন থেকেই দলের মধ্যে একটা ভালো বোধ ছিল। কোচরা ভালো সমর্থন দিয়েছেন। কন্ডিশনে যখনই স্পিনাররা সাহায্য পেতে শুরু করেছে, আমি উপভোগ করেছি। আমি শুধু নিজের শক্তিতে জোর দিয়েছি, ঠিক জায়গায় বল ফেলেছি। আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে, ধারাবাহিক হতে হবে এবং চাপ সৃষ্টি করতে হবে। স্লিপ ফিল্ডিং নিয়ে অনেক কাজ করেছি আমি। বল এলে ধরার চেষ্টা করি।’
কী সহজ মনে হচ্ছে, তাই না। কর্নওয়াল সহজ কাজটা করতে পেরেছেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা সেটা পারেননি।