ধর্মসেনার ভুলটি তাহলে 'সঠিক পদ্ধতি' মেনেই!
>বিশ্বকাপ ফাইনালে গাপটিলের সেই ওভার থ্রোয়ে ৬ রান দিয়ে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা। পরে নিজের ভুলও স্বীকার করেছেন লঙ্কান এ আম্পায়ার। তবে আইসিসি জেনারেল ম্যানেজারের দাবি, ফাইনালে মাঠের আম্পায়াররা সঠিক পদ্ধতিই অনুসরণ করেছেন
কুমার ধর্মসেনার পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে আইসিসি। বিশ্বকাপ ফাইনালে মার্টিন গাপটিলের সেই ওভার থ্রোয়ে ৫ রান না দিয়ে ৬ রান দিয়েছিলেন ধর্মসেনা। পরে ভুল স্বীকার করেন শ্রীলঙ্কান এ আম্পায়ার। তবে এ নিয়ে প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে বিবৃতিতে আইসিসির দাবি, ‘সঠিক পদ্ধতি’ই অনুসরণ করা হয়েছে।
বিশ্বকাপ ফাইনালে ওই মুহূর্ত নিউজিল্যান্ড দল কখনো ভুলতে পারবে না। গাপটিলের থ্রো স্ট্যাম্পের দিকে যাচ্ছিল। শেষ মুহূর্তে বলের সামনে পড়ল ঝাঁপিয়ে পড়া বেন স্টোকসের বাড়িয়ে ধরা ব্যাট। ব্যাটের ছোঁয়া নিয়ে বল ছুটল বাউন্ডারিতে। বাড়তি ৪ রান পেল ইংল্যান্ড। আর দৌড়ে ২ রানসহ মোট ৬ রান। এ হলো সাদা চোখে সাধারণ হিসাব। কিন্তু নিয়মানুযায়ী বল যখন মারা হয়, সে মুহূর্ত থেকে ওভার থ্রোর রান হিসাব করা হয়। যেহেতু গাপটিলের থ্রো করার মুহূর্তেও দুই ব্যাটসম্যান একে অপরকে ক্রস করেননি, ফলে ইংল্যান্ডের রান তখনো ১ ছিল। ফলে ওভার থ্রোয়ে আসা ৪ রানে ওই সময় ইংল্যান্ডের সংগ্রহে ৫ যোগ হওয়ার কথা। কিন্তু মাঠে থাকা ধর্মসেনা সেদিক বিবেচনা না করেই ৬ রান দিয়েছেন ইংল্যান্ডকে।
এ নিয়ে তখন কম বিতর্ক হয়নি। সাবেক আম্পায়ার সাইমন টফেল পর্যন্ত বলেছেন, ধর্মসেনা ভুল করেছেন। ৬ রান নয় ৫ রান দেওয়া উচিত ছিল। আর তখন ফক্স স্পোর্টসকে আইসিসির এক মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, ম্যাচে আম্পায়ারদের যেকোনো সিদ্ধান্তের বিষয়ে মন্তব্য করার এখতিয়ার রাখে না আইসিসি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইসিসির সেই কর্মকর্তা জানান, ‘খেলার নিয়মাবলি ও আইনকানুন মাথায় রেখে মাঠের আম্পায়াররা নিজেদের বিচক্ষণতা অনুযায়ী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। নীতির জায়গা থেকে আমরা আম্পায়ারদের কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারি না।’
আইসিসির সাধারণ ব্যবস্থাপক জিওফ অ্যালারডাইস এবার ক্রিকইনফোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ নিয়ে কথা বলেছেন। ‘থ্রো করার সময় দুই ব্যাটসম্যান একে-অপরকে ক্রস করেছে কি না, এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। ওই ডেলিভারিতে যা কিছু ঘটেছে, সে ব্যাপারে দুজন (মাঠের আম্পায়ার) নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্ত নিতে তারা সঠিক পদ্ধতিই অনুসরণ করেছে’— বলেন অ্যালারডাইস।
কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে সন্দেহ কিংবা প্রশ্ন থাকলে তা সঠিকভাবে নিতে ম্যাচ অফিশিয়ালদের বাঁধাধরা কোনো সময়সীমা নেই। কিন্তু গাপটিলের সেই ওভার থ্রোতে সিদ্ধান্ত যা নেওয়ার মাঠের আম্পায়ারই নিয়েছেন। অ্যালারডাইস বিষয়টি ব্যাখ্যা করলেন এভাবে, তৃতীয় আম্পায়ার ও ম্যাচ রেফারির টিভি রিপ্লে দেখার সুযোগ থাকলেও খেলার নিয়মের (প্লেয়িং কন্ডিশন) জন্যই হস্তক্ষেপের সুযোগ ছিল না তাদের। ‘ব্যাটসম্যানেরা সে মুহূর্তে (থ্রোয়ের সময়) একে অপরকে ক্রস করেছে কি না, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আইনটা তারা (মাঠের আম্পায়ার) জানতেন। খেলার নিয়মই এ ধরনের সিদ্ধান্ত তৃতীয় আম্পায়ারের কাছে পাঠানোর অনুমোদন দেয়নি তাদের। মাঠের আম্পায়াররা এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় ম্যাচ রেফারিও হস্তক্ষেপ করতে পারেন না।’
গাপটিলের ওভার থ্রো থেকে ইংল্যান্ড বাড়তি চার রান পেয়ে যাওয়ায় নির্ধারিত ১০০ ওভারের মধ্যে ম্যাচটা টাই হয়। পরে সুপার ওভারেও টাই করে দুই দল। শেষ পর্যন্ত বাউন্ডারি বেশি মারায় চ্যাম্পিয়ন হয় ইংল্যান্ড। ফাইনালের পর বিশ্লেষক থেকে সাবেক কিংবা ক্রিকেটমোদীরা বলেছিলেন, এমন ম্যাচে দুই দলকে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করলে সেটি হতো সেরা সিদ্ধান্ত। ‘সংগতিপূর্ণ মত হলো বিশ্বকাপ ফাইনালে একটি বিজয়ী লাগেই আর টাই হওয়া ফাইনালের নিষ্পত্তি করতে সুপার ওভারের নিয়ম শেষ তিনটি বিশ্বকাপ ফাইনালেই (২০১৯, ২০১৫ ও ২০১১) ছিল।’