দুই দিনেই টেস্ট শেষ, এ-ও সম্ভব!

আফগান অধিনায়ক আসগর স্টানিকজাইয়ের এই হতাশা প্রথম টেস্টে দলটির প্রতীকী চিত্র। ছবি: এএফপি
আফগান অধিনায়ক আসগর স্টানিকজাইয়ের এই হতাশা প্রথম টেস্টে দলটির প্রতীকী চিত্র। ছবি: এএফপি
>বেঙ্গালুরুতে নিজেদের অভিষেক টেস্টেই ভারতের কাছে এক ইনিংস ও ২৬২ রানের ব্যবধানে হেরেছে আফগানিস্তান। সেটাও মাত্র দুই দিনের মধ্যে। আসুন, জেনে নিই টেস্ট ইতিহাসে দুই দিনে শেষ হওয়া ম্যাচের সংখ্যা কতটি? আর সময়ের হিসাবে সংক্ষিপ্ততম টেস্টই–বা কোনটি?

আফগানিস্তান ঐতিহাসিক টেস্ট খেলতে নেমে বাধ্য করল ইতিহাসের পাতা ওলটাতে।
এমন নয় যে আফগানিস্তানের ইতিহাসে প্রথম টেস্ট—তাই ওলটানো হচ্ছে অন্য দলগুলোর অভিষেক টেস্টের ইতিহাসের পাতা। আসগর স্টানিকজাইয়ের দল মাঠের খেলায় ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন দুই দিনে শেষ হওয়া টেস্টের খেরোখাতায়। বেঙ্গালুরু টেস্টে ভারতের বিপক্ষে মাত্র দুই দিনের মধ্যেই ১ ইনিংস ও ২৬২ রানে হেরেছে তাঁরা। মাত্র দুই দিনেই টেস্ট শেষ, এ–ও সম্ভব!

হ্যাঁ, সম্ভব, তবে টেস্ট ক্রিকেটের ১৪১ বছরের ইতিহাসে এমন ক্ষণস্থায়ী কিন্তু ফলপ্রসবা ম্যাচের সংখ্যা একেবারেই বিরল। ভারত-আফগানিস্তানের এই অসম লড়াই টেস্টের ইতিহাসে ২৩০৭তম ম্যাচ। এ ম্যাচের আগে সব মিলিয়ে মাত্র ২০টি টেস্টের নিষ্পত্তি হয়েছিল দুই দিনের ব্যবধানে। আফগানিস্তানের ‘টেস্ট-বিমুখ’ ব্যাটিং সংখ্যাটাকে একুশে উন্নীত করল। পাশাপাশি তাঁদের ব্যর্থতা আরেকটি কথাও মনে করিয়ে দিল, ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। টেস্ট ক্রিকেটে তখন ‘নবীন’ দলটিকে একদিনে হারানোর তত্ত্ব দিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটার ডেভিড হুকস। মনে পড়ে?

একদিনের পুরো খেলায় নয়, টেস্ট হারের নজির রয়েছে মাত্র ৫ ঘণ্টা ৫৩ মিনিটের খেলায়!
সেটা ১৯৩২ সালের কথা। মেলবোর্নের বৃষ্টিস্নাত ‘স্টিকি’ উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। প্রথম ইনিংসে ৩৬ রানে অলআউট হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাবে বিল উডফুল-জ্যাক ফিঙ্গলটনের অস্ট্রেলিয়াও বেশি দূর যেতে পারেনি। তাঁরা গুটিয়ে যায় ১৫৩ রানে। এরপর বিল ও’রিলি আর বার্ট আয়রনমঙ্গারদের বোলিংয়ে প্রোটিয়ারা তুলতে পেরেছে মাত্র ৪৫। ১ ইনিংস ও ৭২ রানের ব্যবধানে অস্ট্রেলিয়ার তুলে নেওয়া এই জয়টাই টেস্ট ইতিহাসে সময়ের বিচারে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত ম্যাচ। নিশ্চয়ই ভাবছেন, এত অল্প সময়ে তিন ইনিংসের খেলা হলো কীভাবে?

মজাটা হলো, প্রথম দিন ও তৃতীয় দিনে বৃষ্টি হানা দিলেও খেলা গড়িয়েছে থেমে থেমে। আর মাঝে দ্বিতীয় দিনে একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। অর্থাৎ সময়ের বিচারে এটা সংক্ষিপ্ততম ম্যাচ হতে পারে কিন্তু দিনের হিসেবে নয়। ১৮৮২ থেকে ১৯০০ সাল—এই ১৯ বছরে দুই দিনে ৯টি টেস্টের নিষ্পত্তি ঘটেছে। বাকি ৫০ বছরে একই মেয়াদে ফল দেখেছে ৬টি টেস্ট। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, ১৯৪৬ সালের পর থেকে ২০০০ সালের আগ পর্যন্ত এই দুই দিনে কোনো টেস্টের নিষ্পত্তি হয়নি! তবে ২০০০ সাল থেকে এই ১৮ বছরে ৬টি টেস্ট (ভারত-আফগানিস্তান ম্যাচসহ) দুই দিনে শেষ হলো।

আগেই বলা হয়েছে, দিনের হিসেবে এর আগে মোট কুড়িটি ম্যাচ দুই দিনের মধ্যে শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ছয়বারই ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ১৮৮২ থেকে ১৮৮৮—এই সাত বছরেই টেস্টের সবচেয়ে কুলীন দুটি দেশের চারটি ম্যাচ দুই দিনের মধ্যে শেষ হয়েছে। দুইবার করে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। তবে দুই দিনে নিষ্পত্তি হওয়া ম্যাচ সর্বোচ্চ ৯ বার জিতেছে ইংল্যান্ড। ৮ বার জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। মজার ব্যাপার হলো, ১৮৮২ সাল (দুই দিনে নিষ্পত্তি হওয়া প্রথম টেস্ট ধরে) ২০০২ সাল—এই ১২০ বছরে অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইংল্যান্ডের বাইরে দুই দিনে কেউ টেস্ট জিততে পারেনি।

২০০৫ সালে কেপটাউন টেস্টে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার রাজ্যে হানা দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। জিম্বাবুয়েকে দুই দিনের মধ্যে হারায় প্রোটিয়ারা। সেই বছরই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আবারও দুই দিনে হারের শিকার হয় জিম্বাবুয়ে। তাদের স্বস্তি হতে পারে দুই দিনেই বিনা শর্তে আত্মসমর্পণের সর্বশেষ নজিরটা আর জিম্বাবুয়ের দখলে নেই। গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই দিনে হেরেছিল জিম্বাবুয়ে। আর আজ সেই নজির গড়ল টেস্টের ‘নবজাতক’ দল আফগানিস্তান—সেটাও অভিষেক টেস্টেই।

দুই দিনে শেষ হওয়া যত টেস্ট:

দল ১

দল ২

জয়ী

ভেন্যু

সাল

ইংল্যান্ড

অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়া

ওভাল

১৮৮২

ইংল্যান্ড

অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়া

লর্ডস

১৮৮৮

ইংল্যান্ড

অস্ট্রেলিয়া

ইংল্যান্ড

ওভাল

১৮৮৮

ইংল্যান্ড

অস্ট্রেলিয়া

ইংল্যান্ড

ওল্ড ট্রাফোর্ডে

১৮৮৮

দ. আফ্রিকা

ইংল্যান্ড

ইংল্যান্ড

পোর্ট এলিজাবেথ

১৮৮৯

দ. আফ্রিকা

ইংল্যান্ড

ইংল্যান্ড

কেপটাউন

১৮৮৯

ইংল্যান্ড

অস্ট্রেলিয়া

ইংল্যান্ড

ওভাল

১৮৯০

দ. আফ্রিকা

ইংল্যান্ড

ইংল্যান্ড

পোর্ট এলিজাবেথ

১৮৯৬

দ. আফ্রিকা

ইংল্যান্ড

ইংল্যান্ড

কেপটাউন

১৮৯৬

অস্ট্রেলিয়া

দ. আফ্রিকা

অস্ট্রেলিয়া

ওল্ড ট্রাফোর্ড

১৯১২

ইংল্যান্ড

দ. আফ্রিকা

ইংল্যান্ড

ওভাল

১৯১২

ইংল্যান্ড

অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়া

ট্রেন্টব্রিজ

১৯২১

অস্ট্রেলিয়া

উইন্ডিজ

অস্ট্রেলিয়া

মেলবোর্ন

১৯৩১

দ. আফ্রিকা

অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়া

জো.বার্গ

১৯৩৬

নিউজিল্যান্ড

অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়া

ওয়েলিংটন

১৯৪৬

ইংল্যান্ড

উইন্ডিজ

ইংল্যান্ড

হেডিংলি

২০০০

অস্ট্রেলিয়া

পাকিস্তান

অস্ট্রেলিয়া

শারজা

২০০২

দ. আফ্রিকা

জিম্বাবুয়ে

দ. আফ্রিকা

কেপটাউন

২০০৫

জিম্বাবুয়ে

নিউজিল্যান্ড

নিউজিল্যান্ড

হারারে

২০০৫

দ. আফ্রিকা

জিম্বাবুয়ে

দ. আফ্রিকা

পোর্ট এলিজাবেথ

২০১৭