তিনে নামতে সবাইকে বোঝাতে হয়েছে সাকিবকে

বিশ্বকাপে সাকিবের দুর্দান্ত সময় কাটছে তিনে নেমেই। ছবি: এএফপি
বিশ্বকাপে সাকিবের দুর্দান্ত সময় কাটছে তিনে নেমেই। ছবি: এএফপি
>

ওয়ানডেতে সাম্প্রতিক সময়ে তিনে ব্যাট করছেন সাকিব আল হাসান। এ পজিশনে ব্যাট করে সফলও তিনি। বলা ভালো, গত দেড় বছরে সাকিব প্রমাণ করেছেন, এ পজিশনেই তিনি সেরা। তিনে ব্যাট করতে সাকিবকে কেউ বাধ্য করেনি

ওয়ানডেতে সমস্যাটা বাংলাদেশ বয়ে বেড়িয়েছে দিনের পর দিন। প্রশ্নটা তাই বারবার সামনে এসেছে—ওয়ানডেতে ‘নাম্বার থ্রি’ পজিশনের সমাধান হবে কীভাবে? এ প্রশ্ন উচ্চকিত হয়েছিল ইংল্যান্ডেই ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর। পুরো টুর্নামেন্টে তিন নম্বরে ব্যাটিং নিয়ে দুশ্চিন্তায় কেটেছে টিম ম্যানেজমেন্টের। শেষ পর্যন্ত সমস্যার সমাধান হয়ে এলেন সাকিব আল হাসান।

গত বছরের জানুয়ারিতে দেশের মাঠে ত্রিদেশীয় সিরিজের আগে সিদ্ধান্ত হলো তিনে নামবেন সাকিব, যিনি ওয়ানডে ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ সময়ই সামলেছেন লোয়ার মিডল অর্ডার। ত্রিদেশীয় সিরিজের আগে এক যুগের ক্যারিয়ারে মাত্র দুবার তাঁর সুযোগ হয়েছিল তিনে নামার। সাকিবকে তিনে খেলানো নিয়ে তখন মাশরাফি বিন মুর্তজার যুক্তি ছিল, ‘গত তিন-চার বছরে অনেককেই এখানে খেলানো হয়েছে। সাকিব ১০-১২ বছর ধরে ভালো খেলছে। সে যদি এক-দুই-তিন ম্যাচ ব্যর্থও হয়, আমি নিশ্চিত যে ও–ই একমাত্র খেলোয়াড়, যে আবার ফিরে আসতে পারে। তার নিজস্ব একটা ভাবমূর্তিও তৈরি হয়েছে বিশ্ব ক্রিকেটে।’

সাকিব ব্যর্থ হননি; বরং গত দেড় বছরে তিনি প্রমাণ করেছেন, এই পজিশনেই তিনি সেরা। ১৮ ওয়ানডেতে তিনে নেমে সাকিব করেছেন ৮৩১ রান। সেঞ্চুরি ১টি, ফিফটি ৮টি—১৮ ইনিংসের ৫০ শতাংশই তাঁর ফিফটি পেরোনো ইনিংস। এই ২০১৯ বিশ্বকাপটা তাঁর দুর্দান্ত যাচ্ছে তিনে নেমেই। ৭৫, ৬৪, ১২১—২৬০ রান করে সবার ওপরে আছেন সাকিব।

ব্যাটিং অর্ডারের তিন নম্বর জায়গাটা সাধারণত দলের সেরা ব্যাটসম্যানের জন্য বরাদ্দ থাকে। চলতি সময়ে বিরাট কোহলি, স্টিভেন স্মিথ, জো রুট, কেন উইলিয়ামসন ব্যাটিং করেন তিনে। একটা সময় জায়গাটা ছিল ভিভ রিচার্ডস, ব্রায়ান লারা, কুমার সাঙ্গাকারা, রিকি পন্টিং, জ্যাক ক্যালিস, রাহুল দ্রাবিড়ের মতো কিংবদন্তি ব্যাটসম্যানদের। যাঁদের কথা বলা হলো, তাঁদের বেশির ভাগকেই দলের গুরুত্বপূর্ণ বোলার হিসেবে ভূমিকা রাখতে হয়নি, যেটি সাকিবকে করতে হয়। ১০ ওভার বোলিংয়ের পাশাপাশি তিনে নেমে ব্যাটিং—কঠিন কাজটা কীভাবে সাফল্যের সঙ্গে করে চলেছেন, কাল সংবাদ সম্মেলনে সেটিই জানতে চাওয়া হলো সাকিবের কাছে।

‘এটা অন্য রকম। একটু ভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ নেওয়া দরকার। এই মুহূর্তে আমি উপভোগ করছি। তবে এটাও বলতে হবে মাত্রই শুরু, ব্যাটে-বলে যতটা সম্ভব অবদান রাখতে হবে। ভেবেছিলাম ব্যাটিংয়ে আরও বেশি অবদান রাখতে এটা আমার জন্য দারুণ এক সুযোগ। আমি উপভোগ করছি’— তিনে ব্যাট করা অনেকের কাছে যেখানে বিষম চাপ, সেটিই উপভোগ্য হয়ে উঠেছে সাকিবের কাছে।

এই পজিশনে তাঁকে নামতে কেউ বাধ্য করেনি বা কেউ অনুরোধ করেনি। সিদ্ধান্তটা ছিল সাকিবের নিজেরই। তিনে নামার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন যে মোটেও সহজ ছিল না, সেটি বলতে গিয়ে কাল কার্ডিফে সংবাদ সম্মেলনে হাসলেন সাকিব, ‘হ্যাঁ, (দলের) সবাইকে আমাদের বোঝাতে হয়েছিল। যদি রান না করতাম, তবে তারা ভাবত পাঁচেই আমার নামা উচিত। পাঁচে নামতেও আমাকে অনেক মানুষকে বোঝাতে হয়েছে। হ্যাঁ, এখন যেখানে নামছি কাজে দিচ্ছে।’

তিনে সাকিব যেভাবে সফল হচ্ছেন, আফসোস হতে পারে—সিদ্ধান্তটা যদি আরও আগে নিতেন!