ডাবল হ্যাটট্রিকের অর্থ বোঝার দিন আজ
৪৫তম ওভারের চতুর্থ বল শেষে ৫ উইকেটে ২০৫ রান দক্ষিণ আফ্রিকার। জয়ের জন্য আর মাত্র ৫ রান প্রয়োজন। এ ম্যাচ নিয়ে আর কারও কোনো আগ্রহ ছিল না। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার জ্যাক ক্যালিস উইকেটে, তাঁর চওড়া ব্যাট দলকে জয় এনে দেবে, এটা ভাবায় তাই কোনো দোষ ছিল না।
ভুলেও কেউ কল্পনা করতে পেরেছিল, এমন এক ঝড় হাজির হবে! নিশ্চিত জয় নিয়েও শঙ্কা জাগবে দক্ষিণ আফ্রিকান সমর্থকদের মনে। ‘একটু’র আক্ষেপ জন্ম দেওয়া এক অবিশ্বাস্য কীর্তির জন্ম হবে।
হারার আগে হার মানতে রাজি ছিলেন না লাসিথ মালিঙ্গা। ৪৫তম ওভারের শেষ দুই বলে মালিঙ্গা আউট করলেন শন পোলক আর অ্যান্ড্রু হলকে। লেগ স্ট্যাম্প বরাবর মালিঙ্গার স্লোয়ার বলটা ঠিক বুঝতে পারেননি পোলক, হলেন বোল্ড। পরের বলেই থারাঙ্গার হাতে ক্যাচ দিলেন হল। ভাসের করা পরের ওভারটা নিরুপদ্রবেই কাটল। আবার এলেন মালিঙ্গা।
এবার ওভারের প্রথম দুই বলে ঝটপট তুলে নিলেন ক্যালিস আর মাখায়া এনটিনির দুটি উইকেট। ৮৬ রান করার পর উইকেটকিপার কুমার সাঙ্গাকারার হাতে ক্যাচ দেন ক্যালিস, দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে বোল্ড হন এনটিনি। ততক্ষণে ইতিহাস গড়ার উচ্ছ্বাস মালিঙ্গার চোখেমুখে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এর আগে হ্যাটট্রিক দেখলেও, টানা চার বলে চার উইকেট নেওয়ার কীর্তি যে দেখেনি কখনোই!
ক্রিকেট আর হ্যাটট্রিক যখন একসঙ্গে উচ্চারিত হয়, তখন লাসিথ মালিঙ্গার নামটা চলে আসবেই। একমাত্র বোলার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পাঁচটি হ্যাটট্রিক তাঁর। তিনটি ওয়ানডেতে, দুটি টি-টোয়েন্টিতে। তাঁর আশপাশে আছেন মাত্র একজন, ওয়াসিম আকরাম। ওয়ানডে ও টেস্টে দুবার করে হ্যাটট্রিকের দেখা পেয়েছেন কিংবদন্তি পাকিস্তানি ফাস্ট বোলার। আর কোনো বোলারেরই দুবারের বেশি আন্তর্জাতিক হ্যাটট্রিক নেই।
মালিঙ্গা একদিক থেকে আকরামের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছেন। টানা চার বলে চার উইকেট যে ওয়াসিম আকরামেরও নেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এ ঘটনা প্রথম করে দেখিয়েছেন মালিঙ্গা। এবং এতেই সন্তুষ্ট না হয়ে বিদায়বেলায়ও সেটা আরেকবার করে দেখিয়েছেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে তাঁর সে কীর্তির বাইরে আর মাত্র একজন বোলার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ডাবল হ্যাটট্রিক পেয়েছেন, রশিদ খান।
ওয়ানডেতে প্রতিপক্ষের ইনিংসের শেষ দিকে বল হাতে ঝড় তোলা মালিঙ্গা টি-টোয়েন্টিতে ঝড় তুলেছিলেন অবশ্য ইনিংসের শুরুর দিকে। ২০১৯ সালে পাল্লেকেল্লেতে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টির তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বল থেকে শুরু হয় মালিঙ্গার ঝড়। কলিন মানরোকে বোল্ড করার মধ্য দিয়ে শুরু। পরের বলেই এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন হামিশ রাদারফোর্ডকে। পরের বলে বোল্ড হয়ে রাদারফোর্ডের পিছু নেন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম। এরপর রস টেলরকেও এলবিডব্লুর শিকার করেন মালিঙ্গা। ব্যস, হয়ে গেল চার বলে চার উইকেট!
তো, যে বোলার পাঁচবার হ্যাটট্রিক করেছেন, তার মধ্যে দুবার ডাবল হ্যাটট্রিক, তাঁর সব কীর্তির মধ্যে ২০০৭ সালের একটি ঘটনা নিয়েই কেন আবার কথাবার্তা? কারণ, ২০০৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপে মালিঙ্গার সেই দুর্দান্ত কীর্তির ১৫ বছর পূর্তি আজ। ১৫ বছর আগে এই দিনেই চোখ কপালে তোলা ঘটনাটার জন্ম দিয়েছিলেন এই লঙ্কান ফাস্ট বোলার। ওয়ানডেতে এখনো টানা চার বলে চার উইকেট নেওয়ার কীর্তি ওই একটাই। সে ম্যাচটা শেষমেশ দক্ষিণ আফ্রিকাই জিতেছিল। কিন্তু সব ছাপিয়ে ওই ম্যাচের কথা মনে হলে প্রথমেই চোখে ভাসেন লাসিথ মালিঙ্গা।