টি-টোয়েন্টি খেললে তাঁকে নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে যেত
গত পরশু হুট করে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে না-ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার, জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার ও ক্রীড়াবিশ্লেষক ডিন জোন্স। এর পর থেকেই শোকসন্তপ্ত ক্রিকেট বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শ্রদ্ধা-তর্পণ করছেন সবাই। কারও চোখে ক্রিকেটার ডিন জোন্স অনন্য, কারও কাছে আবার মানুষ ডিন জোন্সের দাম অনেক বেশি। ক্রীড়া বিশ্লেষক হিসেবে তাঁর অসাধারণত্বের কথা ফুটে উঠেছে অনেকের স্মৃতিচারণে। ভারতের সাবেক তারকা ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার অবশ্য প্রথম দলেই নাম লিখিয়েছেন। ক্রিকেটার ডিন জোন্সের কথাই তাঁর মনে পড়ছে বারবার।
অনেকের মতেই, ওয়ানডে ক্রিকেটকে আজকের অবস্থানে আনার পেছনে যাঁদের হাত, তাঁদের মধ্যে ডিন জোন্স অন্যতম। শচীন টেন্ডুলকারও তাঁদের সঙ্গে একমত। তবে শুধু ওয়ানডে নয়, সে যুগে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থাকলে সে সংস্করণেও ডিন জোন্সকে নিয়ে টানাটানি পড়ত ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর মধ্যে, এমনটাই মতো ভারতীয় এই কিংবদন্তির, ‘আমি শতভাগ নিশ্চিত, বিশ্বের সেরা টি-টোয়েন্টি তারকাদের মধ্যে একজন হতেন ডিন জোন্স। কোনো নিলাম হলে ডিনোকে নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে যেত। অসাধারণ একজন স্ট্রোক প্লেয়ার ছিলেন তিনি, “রানিং বিটুইন দ্য উইকেট”-এ দুর্দান্ত। ফিল্ডার হিসেবেও অসাধারণ ছিলেন। একজন আদর্শ টি-টোয়েন্টি খেলোয়াড়ের মধ্যে আপনি যেসব গুণাবলি চান, সবকিছুই ছিল তাঁর।’
বার্তা সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে টেন্ডুলকার বলেন, ‘তিনি যেহেতু ওয়ানডে ক্রিকেটার হিসেবে দুর্দান্ত ছিলেন, সেহেতু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের নিয়ত পরিবর্তনশীল নিয়মকানুনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারতেন বেশ। ক্রিকেটের প্রতিটি সংস্করণই অনন্য, আর আমার মনে হয় ক্রিকেটের সব সংস্করণের সঙ্গে চাহিদা অনুযায়ী নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা ছিল তাঁর। দুর্দান্ত এক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার হতে পারতেন তিনি। আশি বা নব্বইয়ের দশকে তিনি যেমন ক্রিকেটই খেলুন না কেন, তা সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিল। তখনই ফাস্ট বোলারদের নিয়মিত মেরে খেলতে পারতেন। আমরা এখন সৃষ্টিশীল শটের কথা আলোচনা করি, তবে এটা মাথায় রাখতে হবে, এখন অপরিচিত যেসব শট ব্যাটসম্যানরা খেলে, তা অনেক আগে কেউ না কেউ খেলে গিয়েছিল। আর ডিন জোন্স তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন।’
শৈশবে জোন্সের খেলা উপভোগ করতেন টেন্ডুলকার, 'অস্বীকার করব না, ডিনো যখন খেলতেন, টিভি সেটের সঙ্গে চোখ সেঁটে থাকত। ডিনো ব্যাটিং করলে সেটা মিস করতে চাইতাম না। তিনি হেলমেট না পরেই ব্যাট করতেন, দেখে মুগ্ধ হয়ে যেতাম। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তাঁর অবদান অসামান্য তো বটেই, রীতিমতো আনন্দ দিয়ে গেছেন সবাইকে।’
অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের অন্যতম সেরা তারকা জোন্স ১৯৮৪ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত মাঠ মাতান। ৫২ টেস্ট আর ১৬৪টি ওয়ানডে খেলে ৯ হাজার ৬৩১ (টেস্টে ৩,৬৩১ আর ওয়ানডেতে ৬০০০) রান তাঁর। টেস্টে ৪৬.৫৫ গড়ে ১১টি শতক। ওয়ানডেতেও আছে ৭টি সেঞ্চুরি আর ৪৬টি ফিফটি। ২০১৯ সালে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের ‘হল অব ফেমে’ স্থান পান জোন্স। ক্রিকেট ছাড়ার পর থেকেই কোচিং ও ধারাভাষ্যের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন। মৃত্যুর আগের দিনও তিনি আইপিএলে ধারাভাষ্য দিয়েছেন।