ওপেনিং জুটিতে শুভমান গিল আর নিতীশ রানা। তিন নম্বরে রাহুল ত্রিপাঠি। পরে দলের অবস্থা অনুযায়ী সাবেক অধিনায়ক দিনেশ কার্তিক, বর্তমান অধিনায়ক এউইন মরগান ও সুনীল নারাইনের মধ্যে যেকোনো একজন নামেন। মোটাদাগে, কলকাতা নাইট রাইডার্সের টপ অর্ডার এটাই। এবার আইপিএলে কলকাতার এই টপ অর্ডার যে খুব বেশি ভরসা দিচ্ছে, বলা যাবে না।
রাহুল ত্রিপাঠিই একটু ফর্মে আছেন, ওপেনার নিতীশ রানা দুই ম্যাচে আলো ছড়িয়ে এখন আবার চুপ। ওদিকে আরেক ওপেনার শুভমান গিলের অবস্থা তো যাচ্ছেতাই। প্রথম ম্যাচে দল জিতলেও রশিদ খানের বলে বোল্ড হওয়ার আগে করেছিলেন ১৩ বলে ১৫ রান। দ্বিতীয় ম্যাচে ২৪ বলে ৩৩ করার পথে আরেক রিস্ট স্পিনার রাহুল চাহারের শিকার হয়েছেন। তৃতীয় ম্যাচে ঝোড়ো শুরু করলেও কাইল জেমিসন আউট করেছেন তাঁকে। চেন্নাইয়ের বিপক্ষে দীপক চাহার তাঁকে এক বলের বেশি খেলতে দেননি, রাজস্থানের বিরুদ্ধে হাত ঠিকভাবে খোলার আগেই রানআউট হয়েছেন বাটলার-বীরত্বে। আর গত রাতে মোহাম্মদ শামির বলে পড়েছেন এলবিডব্লুর ফাঁদে। কোনো ম্যাচেই ইনিংস বড় করতে পারছেন না, ঝোড়ো শুরু করলেও সেই ইনিংস টানতে পারছেন না।
শুভমান গিলের এই ‘সংগ্রাম’ চোখে পড়েছে দুই সাবেক কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কার ও বীরেন্দর শেবাগের। দুজনই চাইছেন কলকাতার টপ অর্ডারে পরিবর্তন। শেবাগ যেমন পরামর্শ দিয়েছেন টপ অর্ডারে গিলের সঙ্গে এমন একজনকে পাঠানো হোক, যিনি কি না ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং করতে পারেন, পাওয়ার প্লেটাকে কাজে লাগাতে পারেন। একদিকে কেউ ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং করলে আরেক প্রান্ত আগলে রাখতে পারবেন গিল। কিন্তু গিলের কাছে ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং আশা করলে হবে না। গিলের ওপেনিং–সঙ্গী রানাকে মিডল অর্ডারে নামার পরামর্শ দিয়েছেন শেবাগ।
গতবার গিলের সঙ্গে ওপেন করতে নামতেন ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার সুনীল নারাইন, যিনি পিঞ্চ হিটার হিসেবে সমাদৃত। অমনই কাউকে শুরুতে চাইছেন শেবাগ, ‘আমার কাছে গিলকে এমন একজন ওপেনার মনে হয়, যে ওয়ানডে আর টেস্টের জন্য কার্যকর। টি-টোয়েন্টিতে আপনার এমন একজন ওপেনার দরকার, যে ইচ্ছেমতো চার-ছয় পেটাতে পারে। আর তার সঙ্গী হিসেবে এমন একজনকে দরকার, যে এক প্রান্ত আগলে রাখতে পারে। এ জন্য আমি গিলকে ইনিংস ধরে রাখার ভূমিকায় দেখতে চাইছি। ওর সঙ্গে এমন একজনকে নামানো উচিত, যে পাওয়ার প্লেতে চার-ছয় মেরে রান তুলতে পারে। সুনীল নারাইন কিংবা রাহুল ত্রিপাঠির মতো কেউ পালন করতে পারে সেই ভূমিকা। আর নিতীশ রানা নেমে গেল চারে।’
শেবাগ তো তাও কলকাতার টপ অর্ডারে গিলকে চাইছেন। গাভাস্কার সেটাও চাইছেন না। তাঁর মতে, গিল-রানাকে বাদ দিয়ে কলকাতার সম্পূর্ণ নতুন এক ওপেনিং জুটি গড়ে তোলা উচিত। এ ভূমিকায় গাভাস্কারের পছন্দ নারাইন আর ত্রিপাঠিকে। এর আগে রাইজিং পুনে সুপারজায়ান্টস ও রাজস্থান রয়্যালসের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে ওপেন করতে নামা ত্রিপাঠির এখানেও ওপেন করা উচিত বলে মনে করছেন গাভাস্কার। ওদিকে রানাকে নেমে যেতে বলেছেন তিনে, ‘কয়েক বছর ধরে কলকাতার হয়ে তিন নম্বরে ব্যাট করে বেশ সফল রানা। তাই ত্রিপাঠিকে যদি ওপেন করতে নামানো হয়, যে কাজটা সে আগেও অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে করেছে, তাহলে কলকাতার সুবিধা হয়।’
ত্রিপাঠির সঙ্গী হিসেবে নারাইনকে চাইছেন গাভাস্কার, ‘আমার মনে হয় কলকাতার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ত্রিপাঠি বা গিল, কার সঙ্গে নারাইনকে ওপেন করতে নামানো উচিত। গিল এখন সংগ্রাম করছে, অত ভালো খেলছে না। সে হিসেবে ত্রিপাঠির সঙ্গে নারাইনেরই নামা উচিত।’
সাকিবের জায়গায় এই আইপিএলে নারাইন যে তিন ম্যাচে সুযোগ পেয়েছেন, করেছেন মেরেকেটে ১০ রান। গিল, রানা, ত্রিপাঠিদের ক্রমাগত ব্যর্থতার মধ্যে বেঞ্চে থাকা সাকিব আল হাসানকে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলানো যায় কি না, সেটা নিয়ে এর মধ্যেই আলোচনা উঠে গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সে ক্ষেত্রে বসে যেতে হবে অধিনায়ক এউইন মরগান, প্যাট কামিন্স, আন্দ্রে রাসেল ও সুনীল নারাইনের মধ্যে যেকোনো একজনকে।