ক্যারিবীয় রূপকথার শেষ নায়কেরও বিদায়
‘উইথ দৌজ লিটল ফ্রেন্ডস অব মাইন, রামাধিন অ্যান্ড ভ্যালেন্টাইন।’
একটি ক্যালিপসো গানের কথা ছিল এমন। গানের দুই চরিত্রের একজন আলফ ভ্যালেন্টাইন চলে গেছেন সেই ২০০৪ সালেই, ৭৪ বছর বয়সে। এবার ৯২ বছর বয়সে চলে গেলেন সনি রামাধিন। রামাধিনের মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হয়নি এখনো। তবে খবরটি নিশ্চিত করেছে দ্য ক্রিকেটার ও ক্রিকইনফো।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ১৯৫০ থেকে ১৯৬১ সালের মধ্যে ৪৩ টেস্ট খেলেছিলেন রামাধিন। ২৮.৯৮ গড়ে নিয়েছেন ১৫৮ উইকেট। তাঁর স্মরণীয় পারফরম্যান্স ছিল ১৯৫০ সালের ইংল্যান্ড সফরে। আরেক স্পিনার আলফ ভ্যালেন্টাইনের সঙ্গে মিলে ইংল্যান্ডকে ‘ঘূর্ণিপাকে’ ঘুরিয়েছিলেন, লর্ডসে নিজেদের প্রথম জয়ের ম্যাচে ১৫২ রানে রামাধিন নিয়েছিলেন ১১ উইকেট।
এক দিক দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেই ইংল্যান্ড সফর ছিল রূপকথার মতো। ২০২০ সালে এভারটন উইকস চলে যাওয়ার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের সে দলের একমাত্র জীবিত সদস্য ছিলেন রামাধিন। তাঁর চলে যাওয়াতে শেষ হয়ে গেল তাই একটি অধ্যায়।
সে সফরে রামাধিন গিয়েছিলেন মাত্র দুইটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচের অভিজ্ঞতা নিয়ে। মাত্র ২১ বছর বয়স ছিল তাঁর। ম্যানচেস্টারে প্রথম টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ হেরেছিল বড় ব্যবধানে। তবে লর্ডসে গিয়ে বদলে গিয়েছিল চিত্রটা। দুই ইনিংসে ১৫১ ও ২৭৪ রানে ইংল্যান্ডকে গুটিয়ে দিয়ে সফরকারীরা জিতেছিল ৩২৬ রানে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের মাটিতে সেটিই ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম জয়।
ম্যাচে ইংল্যান্ডের ২০ উইকেটের ১৮টিই নিয়েছিলেন রামাধিন ও ভ্যালেন্টাইন। ফুলহাতা শার্ট পরা রামাধিন করতেন অফ স্পিন, তবে বল ঘোরাতে পারতেন দুই দিকেই। সেটিও অ্যাকশনে দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন ছাড়াই। রামাধিন ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলা ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রথম টেস্ট ক্রিকেটার।
১৯৫০ সালের ৪ ম্যাচের ওই সিরিজে রামাধিন ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন তিনবার, ১০ উইকেট নিয়েছিলেন একবার। সব মিলিয়ে নিয়েছিলেন ২৬ উইকেট, বাঁহাতি স্পিনার ভ্যালেন্টাইন নিয়েছিলেন ৩৩ উইকেট। সিরিজে এরপরের সর্বোচ্চ উইকেট ছিল ১১টি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছিল ৩-১ ব্যবধানে। ১৯৫১ সালে উইজডেন তাদের বর্ষসেরা ক্রিকেটারের একজন হিসেবে নির্বাচিত করেছিল রামাধিনকে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত খেলেছেন রামাধিন। ১৯৬৪ সালে ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব ল্যাঙ্কাশায়ারে যোগ দেন। প্রথম মৌসুমেই ২২.২৩ গড়ে নেন ৯২ উইকেট। সব মিলিয়ে তাদের হয়ে প্রথম শ্রেণির দুইটি মৌসুম খেলেছিলেন। তবে এরপর খেলা শুরু করেন বিভিন্ন লিগে-লিঙ্কনশায়ার, ক্রম্পটন, র্যাডক্লিফ, ডেলফ, লিটল লিভার, ডেইজি হিল।
রামাধিন এরপর বসবাস শুরু করেন ল্যাঙ্কাশায়ারেই। গত বছরও তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘজীবী ক্রিকেটার হিসেবে রামাধিনকে নিয়ে ওয়েবসাইটে আলাদা লেখা প্রকাশ করেছিল ক্লাবটি।
তবে এবার লেখার ‘বিষয়’টা বদলে যাবে। ‘লিটল ফ্রেন্ডস অব মাইন’-এর আরেকজনও যে চলে গেলেন।