ঘুমপাড়ানি ম্যাচের শেষ ধুমধাড়াক্কা ছক্কায়
সিরিজের প্রথম ম্যাচে এক ওভারে হ্যাটট্রিক আর পরের ওভারে ছয় ছক্কার কাণ্ড দেখিয়েছেন আকিলা দনঞ্জয়া। সেই দনঞ্জয়াকে আজ আরেকবার অত্যাচারের শিকার হতে হলো। ম্যাচের শেষ দুই ওভারে ২০ রান দরকার ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের।
এই অবস্থায় উপায় না দেখেই দনঞ্জয়ার হাতে বল তুলে দেওয়া হয়েছিল। প্রথম বলেই অ্যালান ছক্কা হাঁকালেন। পরের বলে দুই রান নেওয়ায় টানা ছক্কার অন্য কোনো রেকর্ডে নাম লেখানো থেকে নিষ্কৃতি পেলেন দনঞ্জয়া।
কিন্তু তৃতীয় ও ষষ্ঠ বলে আরও দুই ছক্কায় ঠিকই ম্যাচ শেষ করে এসেছেন অ্যালান। এই অলরাউন্ডারের বেধড়ক পিটুনিতে ১৯তম ওভারে ২২ রান দিয়েছেন দনঞ্জয়া। যে উইকেটে অন্য সব স্পিনার দাপট দেখিয়েছেন, সেখানেই লঙ্কান এই স্পিনার ৪ ওভারে ৫৩ রান দিয়ে রইলেন উইকেটশূন্য। ওদিকে মাত্র ৬ বলে ২১ রান তুলে ম্যাচের নায়ক আরেক স্পিনার অ্যালেন।
ম্যাচের শুরুটাই হয়েছে ফ্যাবিয়েন অ্যালেনকে দিয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান বাঁহাতি স্পিনার ম্যাচের শেষেও থাকলেন। শুরুতে বল হাতে শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস তুলেছিলেন। আর শেষে আকিলা দনঞ্জয়াকে সিরিজে আরেকটি দুঃসময় উপহার দিলেন। অ্যালানের এই দ্বিমুখী আক্রমণই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দিল। শ্রীলঙ্কাকে ৩ উইকেটে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে নিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
প্রথমে বল করতে এসে অ্যালানের দেখানো পথেই হেঁটেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাকি বোলাররা। চার ওভার বল করে মাত্র ১৩ রান দিয়ে এক উইকেট পেয়েছিলেন অ্যালেন। হোল্ডার, সিনক্লেয়ার ও ম্যাককয়ও একটি করে উইকেট তুলে নিয়েছেন প্রথম স্পেলে।
দশম ওভারে ৪৬ রানেই চতুর্থ উইকেট হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। এরপরই দিনেশ চান্দিমাল ও অ্যাশেন বান্দারা দলকে থিতু করার প্রয়াস পেলেন। ম্যাচের শেষ পর্যন্ত এ দুজনকে বিচ্ছিন্ন করা যায়নি। ৬৩ বলে ৮৫ রান এনে দিয়েছেন। ৪৬ বলে ৫৪ রান করেছেন চান্দিমাল। ওদিকে ৩৫ বলে ৪৪ রানে অপরাজিত ছিলেন বান্দারা।
প্রথম ১০ ওভারে ৫০ রানও তুলতে না পারার ব্যর্থতাই এ জুটির রানটাকে মামুলি বানিয়ে দিয়েছিল। পঞ্চাশের আশপাশে দুটি ইনিংস ও হাতে ৬ উইকেট থাকার পরও লঙ্কান ইনিংস থেমেছে মাত্র ১৩১ রানে।
সে লক্ষ্যটাকে বেশ ছোটই মনে হচ্ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের পাওয়ার-প্লের সময়ে। ৬ ওভারে মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে ৫৩ রান তুলে ফেলেছিল স্বাগতিক দল।
এরপরই অ্যান্টিগার উইকেটে লঙ্কান স্পিনাররা দলকে ম্যাচে ফিরিয়েছেন। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ও লক্ষ্মণ সান্দাকান চেপে বসেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং লাইনআপের ওপর। ৪ ওভারে মাত্র ১৩ রান দিয়ে ২ উইকেট পেয়েছেন হাসারাঙ্গা। ওদিকে ক্রিস গেইলের উইকেটসহ ২৯ রানে ৩ উইকেট সান্দাকানের।
১০৫ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে বসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু লম্বা ব্যাটিং লাইনআপ বাঁচিয়ে দিয়েছে দলটিকে। এক প্রান্তে টেস্ট মেজাজে দাঁড়িয়েছিলেন সাবেক অধিনায়ক জেসন হোল্ডার (২৩ বলে ১৪)।
কারণ, তিনি জানতেন, দ্বিতীয় ম্যাচের মতো আজও শেষ ওভারের আগেই মূল বোলারদের ব্যবহার করে ফেলবে লঙ্কানরা। থিসারা পেরেরা, দানুশকা গুনাতিলকা ও আকিলা দনঞ্জয়ার যেকোনো দুজনকে দিয়ে শেষ দুই ওভার করাতে হতো সফরকারীদের। আর তখনই আক্রমণে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল হোল্ডারের।
হোল্ডারের আর তা করতে হয়নি। ৯ নম্বরে নামা অ্যালেনই দেখিয়ে দিলেন ব্যাট হাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটিং লাইনআপের যে কেউই ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা রাখেন।