‘ইতিহাসের সবচেয়ে গোপন ভোটে’ নির্বাচিত আইসিসির নতুন প্রধান
আইসিসির দিক থেকে ঘোষণাটা যে সময়ে এসেছে, সেটিই প্রশ্ন তুলে দেওয়ার মতো। আইসিসির নতুন চেয়ারম্যান হয়েছেন নিউজিল্যান্ডের গ্রেগ বার্কলে—এই ঘোষণাটাই কিনা এসেছে রাতের আঁধারে! বাংলাদেশ সময় আজ রাত ৩টায়, আইসিসির সদর দপ্তর যেখানে, সেই সংযুক্ত আরব আমিরাতের সময় রাত ১টায়!
শুধু ঘোষণার সময়ের জন্যই নয়, নতুন আইসিসি চেয়ারম্যানের ভোটে নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। এমনটাই জানাচ্ছে ভারতের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।
বিতর্ক এক পাশে রাখলে খবরটা এই, নতুন নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করেছে ক্রিকেট। গত জুলাইয়ে সাবেক চেয়ারম্যান শশাঙ্ক মনোহর দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর এত দিন অন্তর্বর্তীকালীন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বটা সামলেছেন ইমরান খাজা। এই খাজাকেই কাল দ্বিতীয় দফার ভোটে ১১-৫ ব্যবধানে হারিয়ে চেয়ারম্যানের দায়িত্বটা পেয়েছেন বার্কলে।
১৬ সদস্যের ভোটে নির্বাচিত হতে গেলে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেতে হতো বার্কলেকে, কাল দক্ষিণ আফ্রিকার ভোট পাওয়ার পরই তাঁর বক্সে ভোটের সংখ্যা ১১ হয়েছে। এর আগে প্রথম দফার ভোটে বার্কলে জিতেছিলেন ১০-৬ ব্যবধানে।
আইসিসির ১২ পূর্ণ সদস্যদেশ, দুই সহযোগী সদস্য, একজন স্বাধীন নারী সদস্যের পাশাপাশি আরেকটি ভোট খাজার নিজের—যিনি আইসিসিতে কোনো নির্দিষ্ট দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন না, এই হলো ১৬টি ভোটের হিসাব।
অকল্যান্ডে জন্ম নেওয়া এই আইনজীবী ২০১২ সাল থেকে নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থার (এনজেডসি) একজন পরিচালক ছিলেন, এত দিন আইসিসিতে এনজেডসির প্রতিনিধিও ছিলেন। আইসিসির প্রধান হিসেবে স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করায় এখন স্বাভাবিকভাবেই আর এনজেডসির প্রতিনিধি থাকবেন না তিনি।
‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) প্রধান নির্বাচিত হতে পারা অনেক সম্মানের। আমাকে সাহায্য করার জন্য আইসিসির অন্য পরিচালকদের আমি ধন্যবাদ জানাই। আশা করি একসঙ্গে মিলে আমরা এই খেলাটাকে সামনে নিয়ে যেতে পারব, এই বৈশ্বিক মহামারি থেকে আরও শক্ত অবস্থানে বেরিয়ে আসতে পারব’—নির্বাচিত হওয়ার পর বলেছেন বার্কলে।
তাহলে বিতর্কটা কোথায়? টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখছে, আইসিসির পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াতেই একটা লুকোছাপা আছে। ১৮ অক্টোবর হবে মনোনয়ন ঘোষণার শেষ দিন, ভোট তিন দফায় হলে (দুই দফা ভোটেই প্রয়োজনীয়সংখ্যক ভোট পেয়ে গেছেন বার্কলে) সে ক্ষেত্রে ২ ডিসেম্বরের মধ্যে ভোটের প্রক্রিয়া শেষ হবে—গত ১২ অক্টোবর এই ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই আইসিসি নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে আর কোনো কিছু জানাচ্ছে না বলে লিখেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
‘এই নীরবতাটা অনেক বেশি রহস্যজনক। ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে গোপন ভোট এটি। জানি না কী হচ্ছে! এই ভোটের সব ছোটখাটো দিক জানতে চাওয়া হবে। প্রশ্ন উঠবে এই ভোট নিয়ে’—কারও নাম না লিখলেও আইসিসির সদস্যরা এমন বলেছেন বলে জানাচ্ছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
নির্বাচনে এক ভোটের মালিক ও গত জুলাই থেকে অন্তর্বর্তীকালীন চেয়ারম্যান হিসেবে আইসিসির দায়িত্ব সামলানো খাজা কোন দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছেন আইসিসিতে, সেটি নিয়েও বিতর্ক আছে। ২০১৮ সাল থেকেই এই বিতর্ক অবশ্য আছে। তখন থেকেই এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য আইসিসি করেনি বলেও জানাচ্ছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
এখানেও কারও নাম উল্লেখ না করে ‘আইসিসির পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট’ একজনকে উদ্ধৃত করে টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, ‘আপনি যদি স্বাধীন সদস্যের বাইরে আইসিসির বোর্ডের অন্য কোনো সদস্য হন, সে ক্ষেত্রে আপনাকে কোনো না কোনো দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে হবে, এটাই স্বাভাবিক।’
দ্বিতীয় দফায় কাল ভোটের ব্যবধানটা ১১-৫ নয়, ১২-৪ বলেও জানাচ্ছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। ভোটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজনকে উদ্ধৃত করে টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, ‘প্রথম রাউন্ডের ভোটে যখন দেখা গেছে বেশির ভাগ সদস্যই খাজার পক্ষে নন, এরপর দুটি বোর্ড শেষ মুহূর্তে তাদের মন বদলেছে।’