ইউরোতে ইংল্যান্ডের টাইব্রেকার দুঃখ, নিউজিল্যান্ড থেকে খোঁচা স্টাইরিস-নিশামের
দুই বছর হয়ে গেছে বিশ্বকাপের ফাইনালের। কিন্তু এত দিনেও সেই ফাইনালে অদ্ভুতুড়ে নিয়মে হারের দুঃখ ভুলতে পারেননি নিউজিল্যান্ডের জিমি নিশাম আর স্কট স্টাইরিস। অবশ্য নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপের এত কাছে গিয়েও এমন অদ্ভুতুড়ে নিয়মে হারের দুঃখ একজীবনেও হয়তো ভোলার নয়।
সে কারণেই কি না, ক্রিকেটের দুঃখ ফুটবলে টেনে এনে ইংল্যান্ডকে খোঁচা মারলেন নিউজিল্যান্ডের বর্তমান ও সাবেক এই দুই ক্রিকেটার!
নিজেদের ফুটবল–তীর্থ ওয়েম্বলিতে কাল ইউরোর ফাইনালে ইতালির কাছে টাইব্রেকারে ৩-২ ব্যবধানে হেরেছে ইংল্যান্ড। ৫৫ বছর পর প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওঠা ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শিরোপা জেতা আর হলো না। ইংলিশদের সুরে সুর মেলালে বলতে হয়, ফুটবল ঘরে ফিরল না!
কিন্তু তা নিয়ে ভাবতে বয়েই গেছে স্টাইরিস-নিশামদের! ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে অদ্ভুতুড়ে নিয়মে এই ইংল্যান্ডের কাছেই হেরেছিল নিউজিল্যান্ড, সেটি টেনে এনে ইউরোতে টাইব্রেকারের নিয়ম নিয়ে খোঁচা মারলেন দুজন।
২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনালের ভাগ্য নির্ধারণ করে দিয়েছিল ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির অদ্ভুত এক নিয়ম। ফাইনালে সেদিন আগে ব্যাটিং করে নিউজিল্যান্ড ৮ উইকেটে করেছিল ২৪১ রান, জবাবে বেন স্টোকসের চোখধাঁধানো ইনিংসে ভর করে ইংল্যান্ডও অলআউট হওয়ার আগে করে ঠিক ২৪১ রান। ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। কিন্তু সেখানেও অবিশ্বাস্য সমতা! আগে ব্যাটিং করে ইংল্যান্ড করে ১৫ রান, জবাব দিতে নেমে নিউজিল্যান্ডও করে ১৫ রান!
কিন্তু এরপর দ্বিতীয় সুপার ওভার না রেখে আইসিসি নিয়মে রেখেছিল, সুপার ওভার শেষেও সমতা থাকলে বিজয়ী নির্ধারিত হবে বাউন্ডারির সংখ্যার বিচারে। সেখানেই বাজিমাত ইংল্যান্ডের। নিউজিল্যান্ড ম্যাচে বাউন্ডারি মেরেছিল ১৭টি, ইংল্যান্ড ২৬টি। বাউন্ডারি বেশি মারায় নিউজিল্যান্ডের প্রথম বিশ্বকাপের স্বপ্ন অধরা রেখে নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপ জিতে গেল ইংল্যান্ড।
সেই ইংল্যান্ড কাল ফুটবলে পেল দীর্ঘশ্বাস। ক্রিকেটের মতো এখানে অবশ্য অত রিক্ত নয় ইংল্যান্ড। ১৯৬৬ বিশ্বকাপ তো অন্তত জিতেছিল দলটা! সেই বিশ্বকাপের পর এবারের ইউরোতেই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওঠা ইংল্যান্ডের।
১৯৬৬ বিশ্বকাপ তো ইংল্যান্ডের মাটিতেই হয়েছিল, ইউরোপের ১১ দেশের ১১ ভেন্যুতে আয়োজিত ইউরোর সেমিফাইনাল আর ফাইনালও এবার হয়েছে ইংল্যান্ডের ওয়েম্বলিতে। ইংলিশরা তাই স্বপ্ন দেখেছিল দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শিরোপার, ইউরোতে যেটি হতো তাদের প্রথম! কিন্তু হলো না। নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে ১-১ সমতার পর টাইব্রেকারে হৃদয় ভেঙেছে ইংলিশদের।
কিন্তু সেই ক্ষত হৃদয়েই যেন নুনের ছিটা হয়ে এল স্টাইরিস আর নিশামের টুইট। বলাবাহুল্য, মজা করেই টুইটগুলো করা!
কৌতুকপূর্ণ, শ্লেষাত্মক টুইটের জন্য বেশ আলোচিত নিশাম লিখেছেন, ‘পেনাল্টি শুটআউট কেন হচ্ছে? যে বেশি পাস দিয়েছে, তাদেরই কেন শিরোপা দেওয়া হচ্ছে না?’ ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাউন্ডারির সংখ্যার ফুটবলীয় একটা বিকল্প খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা আর কী নিউজিল্যান্ডের অলরাউন্ডারের!
এটা যে অবশ্য মজা করে লিখেছেন, সেটা বোঝাতে পাশে আবার নিজেই হ্যাশট্যাগ দিয়ে নিশাম লিখেছেন, ‘মজা করছি।’ পাশে হাসির ইমোজি। অবশ্য সত্যিই পাসের হিসাবে গেলেও ইতালিই জিতত ইউরো। ইংল্যান্ডের ৪২৬টি পাসের বিপরীতে কাল ইউরোর ফাইনালে ইতালিয়ানদের পাস ছিল ৮২০টি।
স্টাইরিসের কাছে পাস নয়, বিকল্প হিসেবে কর্নারের সংখ্যাকেই বেশি ‘যুক্তিযুক্ত’ মনে হয়েছে। নিউজিল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডারের টুইট, ‘বুঝতে পারছি না। ইংল্যান্ড না বেশি কর্নার পেল! তাহলে তো ওরাই চ্যাম্পিয়ন!’ পাশে আবার মজা করে হ্যাশট্যাগে লিখেছেন, ‘এখনো জ্বলছে।’ মানে, ২০১৯ বিশ্বকাপে তাঁদের হৃদয় যে পুড়েছে, সেটাই হাসিতে বোঝালেন আর কী!